eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্গাপুর সরকারী মহাবিদ্যালয়ের নস্ট্যালজিক বাসস্ট্যাণ্ড বর্তমানে "মৃত্যু ফাঁদ"

দুর্গাপুর সরকারী মহাবিদ্যালয়ের নস্ট্যালজিক বাসস্ট্যাণ্ড বর্তমানে “মৃত্যু ফাঁদ”

নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ দুর্গাপুরের ভগৎ সিং মোড় থেকে আড়রা মোড় পর্যন্ত সদ্য নির্মিত দু-লেন বিশিষ্ট পাকা রাস্তার ঠিক মাঝখানেই অবস্থিত দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজ। দুর্গাপুরের কলেজ পড়ুয়ারা তো বটেই সেইসঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রত্যেক বছর এই মহাবিদ্যালয়ে স্নাতক পড়ার জন্য হাজার হাজার পড়ুয়া পড়াশোনা করার জন্য আসে। দুর্গাপুর সরকারী মহাবিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে মান্ধাত্ম্যার আমলের এক বাসস্ট্যান্ড তথা প্রতীক্ষালয়। আজ থেকে নয়, ৬০-এর দশকে দুর্গাপুরের বুকে সরকারী এই মহাবিদ্যালয় গড়ে ওঠার সময় থেকেই রয়েছে এই যাত্রী প্রতিক্ষালয়। বছরের পর বছর ধরে বহু ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছরের বেশি পুরনো এই বাসস্ট্যান্ড। দীর্ঘ এই সময় ধরে একের পর এক ঘটনার সাক্ষী যেমন থেকেছে তেমনি দীর্ঘ এই সময়ে সরকারী এই মহাবিদ্যালয় থেকেই অগুণতি, শিক্ষক, অধ্যাপক, আইপিএস, ডব্লুবিসিএস সহ নানা সরকারী উচ্চপদে পড়ুয়াদের অধিষ্ঠিত হয়ে পড়ুয়াদের স্বপ্নপূরণের সাক্ষী থেকেছে এই দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজ বাসস্ট্যান্ড। কিন্তু ওই পর্যন্তই, সময় বয়ে গেছে, পড়ুয়ারাও নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করে যে যার জীবনে ব্যস্ত হয়ে গেছে। বদলাই নি শুধু এই বাসস্ট্যান্ডের হাল। একসময় এই বাসস্ট্যান্ড যে পড়ুয়াদের অবসরকালীন আড্ডা, প্রেমিক-প্রেমিকাদের খুনসুটির প্রিয় জায়গা হিসেবে জনপ্রিয় ছিল, বর্তমানে এখন সেখানে শুধুই নির্জনতা আর শুন্যতা। বর্তমানে দুর্গাপুর শহরেও এমন অনেক ব্যক্তি বা মহিলা রয়েছেন যারা একসময় এই সরকারী মহাবিদ্যালয় থেকেই কলেজ জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। তারাও সহজেই বুঝে উঠতে পারবেন এই বাসস্ট্যান্ডের মাহাত্ম্য, এই প্রতিবেদন তাদের সেই পুরনো দিনের স্মৃতি মনে করিয়ে নস্ট্যালজিক করে তুলতেই পারে। কিন্তু বাস্তব কথা হল, এহেন এক নস্ট্যালজিয়া এবং নানান ঘটনার সাক্ষী হিসেবে ধুঁকতে থাকা বাসস্ট্যান্ডকে নতুন করে গড়ে তোলার কোনও উদ্যোগই আজ পর্যন্ত চোখে পড়ে নি। না দুর্গাপুরবাসী তথা সরকারী মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন পড়ুয়া হিসেবে না দুর্গাপুর পৌরনিগমের তরফে। অথচ আজও এই বাসস্ট্যান্ড থেকেই প্রত্যেক দিন কলেজের পড়ুয়ারা কলেজ যাওয়া-আসার সময় বাস ধরার জন্য ব্যাবহার করে। বর্তমানে এই যাত্রী প্রতীক্ষালয় সাধারণ মানুষ ও পড়ুয়াদের জন্য “মৃত্যুফাঁদ”-এ পরিণত হয়েছে প্রতীক্ষালয়ের দেওয়ালের রং চটে গেছে বহু বছর আগে। বছরের পর বছর রোদ এবং জলে ক্ষয় হতে হতে দেওয়ালের পলেস্তারা খসে গিয়ে হাড়-কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। সবথেকে ভয়াবহ অবস্থা বাসস্ট্যান্ডের ঢালাই করা ছাদের। বছরের পর বছর ধরে ক্ষয় হতে হতে এবং আগাছা জন্মানোর ফলে ছাদ ফেটে চৌচির। এমনই ভয়াবহ অবস্থা যে যেকোনো সময় গোটা বাসস্ট্যান্ড ধসে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। কিন্তু তাসত্বেও স্থানীয় প্রশাসনের সেদিকে কোনও দৃষ্টি নেই। ফলে ওই বিপজ্জনক বাসস্ট্যান্ডেই একপ্রকার বাধ্য হয়ে রোদ ও বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে কলেজ পড়ুয়ারা দিনের পর দিন নিজেদের জীবন হাতে নিয়ে ওই বাসস্ট্যান্ড থেকেই বাস ধরে যাতায়াত করে আসছে। অথচ এই বাসস্ট্যান্ডের উল্টোদিকে সরকারী মহাবিদ্যালয়ের গা ঘেঁষেই সদ্য গড়ে তোলা হয়েছে নেতাজী মুক্ত বিদ্যালয়ের বিশাল ভবন, কিন্তু বরাবরের মতো ব্রাত্য থেকে গেছে ৬০-র দশকের পুরনো এই বাসস্ট্যান্ড। সন্ধ্যা নামলেই যেখানে আজ নানান অসামাজিক কাজকর্মের মুক্তক্ষেত্র হয়ে ওঠে। কিন্তু কেন? নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্গাপুরের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক আধুনিক যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরী করা হয়েছে, গড়ে তোলা হয়েছে বয়স্কদের সময় কাটানোর জন্য একাধিক প্রতীক্ষালয়। তাহলে কী করে সরকারী মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন এই যাত্রী প্রতীক্ষালয় দুর্গাপুর পুরসভার নজর এড়িয়ে গেল? আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে দুর্গাপুরবাসীর মনে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments