নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়েছে আমাদের শিল্প শহর দুর্গাপুর । ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের হাত ধরে স্বপ্নের শহর দুর্গাপুর গড়ে ওঠার পর থেকে এই শহরের বুকে গড়ে উঠেছে একাধিক শিল্প, কারখানা সহ শিল্প শহরের বাসিন্দাদের রুজি-রুটির একাধিক মাধ্যম । খোদ বিধানচন্দ্র রায়ের হাত ধরে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা তৈরি হওয়ার পর থেকে শিল্প শহরবাসী তাদের রুজি-রুটি জোগাড়ের অন্যতম ঠিকানা হাতের সামনে পেয়েছিলেন। শুধু দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুরের মিশ্র ইস্পাত কারখানা, অঙ্গদ পুর শিল্পতালুক, অন্ডাল শিল্পতালুক, পানাগড় শিল্পতালুক, এম এ এম সি কারখানা, ফার্টিলাইজার কারখানা, সাগরভাঙ্গা শিল্প তালুক সহ আরো বহু জায়গায় একাধিক শিল্প ও কারখানা গড়ে ওঠে দুর্গাপুরবাসী তথা দুর্গাপুরের পাশাপাশি অবস্থিত একাধিক অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে যে সাম্রাজ্যের উত্থান রয়েছে সেই সাম্রাজ্যের পতনও রয়েছে। তাই ইতিহাসের কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প শহর হিসেবে পরিচিত দুর্গাপুর বিভিন্ন কারণে একাধিক কারখানা, শিল্প বন্ধ হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম এম এ এম সি, সার কারখানা এবং বর্তমানে নিভন্ত প্রদীপ এর মত ধুঁকতে থাকা দুর্গাপুর মিশ্র ইস্পাত কারখানা। আর একের পর এক এ ধরনের কারখানা বন্ধ হতে থাকায় দিনের পর দিন দুর্গাপুরের হাজার হাজার মানুষ তাদের কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। আর তাদের এই অসহায়তা এবং বেকারত্বের সুযোগ পুরোদমে কাজে লাগিয়েছে দুর্গাপুর তথা শিল্প শহরের বুকে এই মুহূর্তে কাজ করে চলা একাধিক বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগকারী সংস্থা গুলি। এবার আসা যাক আসল ঘটনায়। এই মুহূর্তে দূর্গাপুরের বুকে চুটিয়ে ব্যবসা করে চলেছে একাধিক বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগকারী সংস্থাগুলি। যাদের মূল কাজ হল, শিল্প শহরের বুকে ইতি মধ্যে থাকা বিভিন্ন বড় বড় শপিং মল, হোটেল, ফ্ল্যাট, বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানিতে নিরাপত্তাকর্মী প্রদান করা। কিন্তু সম্প্রতি এই সমস্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ কারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে শিল্পশহরের বেকার যুবক এবং বয়স্ক নিরাপত্তাকর্মীদের আর্থিকভাবে ঠকানোর অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু নিরাপত্তাকর্মীদের থেকে জানা যাচ্ছে এই সমস্ত সংস্থাগুলি বড় বড় শপিং মল, ফ্ল্যাট ও বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করার নাম করে মালিকদের কাছ থেকে কর্মীদের বেতন বাবদ মোটা টাকা আদায় করছে, অথচ এই সমস্ত ফ্ল্যাট বা শপিং মল গুলিতে দৈনিক ৮ ঘণ্টা, ১২ ঘন্টা কিংবা বহু ক্ষেত্রে টানা ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাও সেই সমস্ত নিরাপত্তা কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন মাসিক মাত্র ৩০০০, কোথাও ৫০০০ আবার খুব বেশি হলে ৮ হাজার। অভিযোগ এই সমস্ত নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ কারী সংস্থার মালিকরা সংস্থার কাছ থেকে এক একজন নিরাপত্তাকর্মী পিছু দ্বিগুণ টাকা দাবি করলেও মাসের শেষে কর্মীদের ন্যূনতম বেতন দিয়ে বাকি টাকা আত্মস্যাৎ করছে মালিকপক্ষ। হিসেব মতো দেখা যাচ্ছে একজন নিরাপত্তারক্ষী দৈনিক যদি ১২ ঘন্টা ফ্ল্যাটে শপিংমলে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন সেই কর্মীকে দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা মজুরি বাবদ দেওয়া হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। আর সংসারের আর্থিক পরিস্থিতির কথা ভেবেই এভাবেই প্রতিবাদ না করেই দিনের পর দিন কাজ করে চলেছেন শিল্প শহরের কয়েকশো যুবক, যুবতী এমনকি বয়স্করাও। ভাবতেও অবাক লাগে, বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির বাজারে একজন নিরাপত্তাকর্মী ১২ ঘন্টা নিজের দায়িত্ব সামলে দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন মাত্র ১৭০ টাকা, কোথাও কোথাও তার থেকেও কম। এখানে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে দুর্গাপুরের বুকে বর্তমানে যে কয়েক হাজার নিরাপত্তারক্ষী কাজ করে চলেছেন তারা এই সমস্ত বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কেন জানাচ্ছেন না? যার একটাই উত্তর, প্রতিবাদ করেছো তো চাকরি হারিয়েছে। আর মূলত চাকরি হারানোর ভয়ে এবং পরিবারের কথা ভেবেই দিনের পর দিন এভাবে প্রতারিত হয়ে চলেছেন শিল্প শহরের হাজার হাজার মানুষ। আর তাদের এই অসহায়তার সুযোগ নিয়ে এই সমস্ত বেসরকারি সংস্থাগুলো দিনের পর দিন নিজেদের আখের গুছিয়ে চলেছে। এ তো গেল বেতন নিয়ে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাকরিতে নিয়োগের সময় সংস্থার নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম বাবদ এই সমস্ত কর্মীদের কাছ থেকে হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা অব্দি অগ্রিম নিয়ে নিয়েছে এই সমস্ত সংস্থাগুলি, পাশাপাশি নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক মাসে চার দিন বৈধ ছুটি থাকলেও এই সমস্ত নিরাপত্তাকর্মীদের মাসে ৩০ দিন হোক ৩১ দিন হোক ডিউটিতে হাজির হতেই হবে। ছুটি নিলে মাইনে থাকে একদিনের হাজিরা বাদ। বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ সংস্থাগুলির এহেন তুঘলকি আচরণে শহর জুড়ে নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ জন্মালেও শুধুমাত্র চাকরি হারানোর ভয় মুখ বুজে কাজ করে চলেছেন তারা। কিন্তু এভাবে কতদিন? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে বর্তমানে বিভিন্ন কারখানা বা সরকারি সংস্থাতেও বর্তমানে শ্রমিক ও কর্মীদের ইউনিয়ন রয়েছে, যেখানে শ্রমিকরা তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা মালিকপক্ষের কাছে তুলতে পারেন, কিন্তু এত বছর পরও শিল্পাঞ্চল তথা রাজ্যের কোনও জেলাতেই এইসমস্ত নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য কোনও ইউনিয়ন তৈরী করেনি কোনও রাজনৈতিক দলই। আর মূল কারণ হিসেবে নিরাপত্তাকর্মীরা জানাচ্ছেন, এইসমস্ত বেসরকারি সিকিউরিটি নিয়োগকারী সংস্থার মালিকরা শহরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়মিত মোটা টাকা দিচ্ছে, ফলে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারাই সাধারণ নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য ইউনিয়ন গড়ে তোলার কোনোরকম উদ্যোগ নিচ্ছেন না। আর এই সুযোগ নিয়েই শুধুমাত্র মুনাফা লাভের নেশায় বেআইনিভাবে ব্যবসা করে চলেছে এইসমস্ত সংস্থাগুলি।