নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অধীনস্থ যে সকল জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে গত কয়েক দশক ধরে, সেইসব জায়গায় ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে একের পর এক বস্তি, দোকান ঘর,গ্যারেজ, গুমটি সহ বাড়িঘর। বহুবার দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ নিজেদের জায়গা পুনর্দখল করার চেষ্টা চালিয়ে অভিযানে নামলেও তেমনভাবে সাফল্য কোনোদিন পায়নি। কিন্তু দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ প্রতি দু তিন মাস অন্তর অন্তর এই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে কার্যত নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেন মাঝে মাঝেই ।
কয়েকদিন আগেই দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বি-জোনের চন্ডীদাস বাজারে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রায় হাজার খানেক দোকানকে অন্ধকারে ডুবে যেতে বাধ্য করেছিলেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই সেই দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানারই ঠিকা কর্মীদের বেশ কয়েকজন আবার নতুন করে জুড়ে দেয় সেই অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ। যদিও এ বিষয়ে ইস্পাত কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয়বার পুনরায় অভিযান চালিয়ে ওই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কোনো উদ্যোগই দেখায়নি ।
আজ সকালে দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে বুলডোজার, পুলিশ, সিআইএসএফ বাহিনীদের নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামেন দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের আধিকারিকরা। দুর্গাপুর এ-জোনের আনন্দ বিহার এলাকায় অবৈধভাবে ইস্পাত কারখানার কোয়ার্টার দখল করে বসবাসকারী প্রায় ৩৫টি পরিবারকে এদিন উচ্ছেদ করা হয়। শুধু তাই নয় এদিন দুর্গাপুরের ইস্পাত নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে ইস্পাত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বৈধ অনুমতি না নিয়ে যে সকল লোহার কাঠামোর উপর হোর্ডিং লাগানো হয়েছিল শহরের আনাচে কানাচে সেগুলিকে আজ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বুলডোজারের আঘাতে। যদিও অবৈধ হোর্ডিং ব্যবসার মাফিয়ারা এ বিষয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন । কারণ তাদের ওই লোহার কাঠামো গুলি শুধুমাত্র দুমড়ে মুছড়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছেন ইস্পাত কর্তৃপক্ষের আধিকারিকরা । সেগুলিকে বাজেয়াপ্ত করার কোন প্রবণতা দেখাননি ইস্পাত কর্তৃপক্ষের আধিকারিকরা । সম্ভবতই হোর্ডিং মাফিয়ারা আবার পুনরায় সেই সব লোহার কাঠামো ঠিকঠাক করে আবার কদিন পরেই হোর্ডিং লাগাবে এক কথায় নিশ্চিত হয়ে বলা যায়।
আজ আনন্দ বিহার এলাকায় যে সকল পরিবার গুলিকে ইস্পাত কর্তৃপক্ষ কোয়ার্টারে অবৈধভাবে বসবাস করার জন্য উচ্ছেদ করলেন তাদের একাংশ অভিযোগ করে বলেন, “দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার টাউন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিংয়ের একাধিক আধিকারিক মাসিক তোলা নিয়ে তাদেরকে ওই এলাকায় বসবাস করার অনুমতি দিয়েছিলেন অবৈধভাবে। আজ সেই সব আধিকারিকদের ফোন করলে তাদের ফোন সুইচড অফ বলে জানান উচ্ছেদ হওয়া অসহায় পরিবার গুলি।” যদিও এ বিষয়ে কোন রাজনৈতিক দলের নেতারা মুখ খুলতে চাননি। ভারতীয় জনতা পার্টির পশ্চিম বর্ধমানের বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুোই বলেন, “শাসক দলের একশ্রেণীর কর্মীরাই টাকা নিয়ে ইস্পাত কর্তৃপক্ষের কোয়ার্টার অবৈধভাবে দখল করে এই মানুষগুলিকে মোটা টাকার বিনিময় বসবাস করার অনুমতি দিয়ে আসছেন বহুদিন ধরেই। তাই ওই পরিবার গুলির প্রতি তার সমবেদনা থাকলেও তারা যে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন এক কথায় তিনি তা স্বীকার করে নিয়েছেন। ইস্পাত কর্তৃপক্ষের এই উচ্ছেদ অভিযানকে কার্যত তিনি সমর্থন করেছেন।” শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার টাউন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিংয়েক যে সকল দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকরা ইস্পাত নগরীর ভেতরে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ও ইস্পাত কোয়ার্টারে বসবাস করার জন্য তোলা আদায় করছেন তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ।