নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- অসুস্থ নবজাতককে মাতৃদুগ্ধ পান করিয়ে মাতৃত্বের নজির গড়লেন দুর্গাপুরের দুই মা প্রতিমা থান্ডার ও প্রিয়া বাউড়ি। গত কয়েকদিন ধরে প্রি ম্যাচিওর অসুস্থ এক নবজাতককে দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে দুধ পান করাচ্ছেন দুজন। আর তাতে প্রাণ ফিরে পেয়ে ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছে ওই নাবজাতক। অন্যদিকে দুর্গাপুরের করঙ্গপাড়া সংলগ্ন বস্তির বাসিন্দা প্রতিমা ও প্রিয়ার আর্থিক অনটন থাকা সত্ত্বেও এই কাজের জন্য তারা দাবি করেননি কোনও টাকা। দুই মায়ের মতে এক অসুস্থ শিশুকে নিজের দুগ্ধ পান কিয়ে সুস্থ করার মতো তৃপ্তি টাকা পয়সা দিয়ে মাপা যায়না।
প্রসঙ্গত সম্প্রতি দুর্গাপুরের বিধাননগরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই সন্তানের জন্ম দেন কুলটির বাসিন্দা জ্যোতি শর্মা। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে জন্ম হওয়ায় সন্তানকে স্তন্যপান করাতে ব্যর্থ হন জ্যোতি। অন্যদিকে চিকিৎসকরা নিদান দেন সদ্যোজাতকে সুস্থ করতে মাতৃদুগ্ধ পান করানো অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু হাসপাতালে তার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েন জ্যোতি ও তার স্বামী জয়ন্ত। হন্যে হয়ে সদ্যোজাত সন্তানের মায়ের খোঁজ করেও বিফল হন ওরা। এমন সময় ওদের যোগাযোগ হয় দুর্গাপুর মহকুমা ভলেন্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সঙ্গে। জ্যোতি ও জয়ন্তর সমস্যার কথা শুনে ফোরামের সদস্যরাও সদ্যোজাত সন্তানের মায়ের খোঁজ শুরু করেন। অবশেষে ফোরামের সদস্য রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বাড়ির পাশে করঙ্গপাড়া সংলগ্ন বস্তিতে গিয়ে খোঁজ করতে দুই সদ্যোজাত সন্তানের মা প্রতিমা ও প্রিয়ার খোঁজ পান। অসুস্থ সদ্যোজাতকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর আবেদনে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেন ওরা। এমনকি ওদের পরিবারের লোকেরাও আপত্তি করেননি।
দুই ময়ারে খোঁজ পেয়ে হাতে যেন আকাশের চাঁদ পান জ্যোতি ও জয়ন্ত। দুই মহিলার ভূমিকায় রীতিমতো কৃতজ্ঞ জ্যোতি ও জয়ন্ত জানান ওদের অবদান ভোলার নয়। প্রতিমা ও প্রিয়া মাতৃদুগ্ধ পান করানোর পর বাচ্চাটি এখন সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ব্লাড ডোনার ফোরামের সেক্রেটারি কবি ঘোষ বলেন, “দুই মহিলাকে ফোরামের তরফে আমরা কুর্ণিশ জানাই।”
আসলে প্রতিমা ও প্রিয়া তাদের কাজের মধ্যে দিয়ে মাতৃত্বের নজির গড়ে দিলেন। যে মাতৃত্বকে পয়সা দিয়ে কেনা যায় না।