eaibanglai
Homeএই বাংলায়'লুঠ' করা গয়না ফেরৎঃ পুলিশকে নকল সোনা দিল অ্যাবাকাশের সুগত

‘লুঠ’ করা গয়না ফেরৎঃ পুলিশকে নকল সোনা দিল অ্যাবাকাশের সুগত

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুরঃ- ‘জয়’!! তাই কি ?

পুরোদস্তুর না হলেও আংশিক তো বটেই! দুস্কৃতি ‘স্যারে’র হাতে লুঠ হয়ে যাওয়া পৈতৃক বাড়িতে শনিবার বেলা ১টায় ফের নতুন করে ফিরে এলেন পিতৃ-মাতৃহীন সিটিসেন্টারের যুবতী মহুয়া ভট্টাচার্য। ফিরেই বললেন, “এখানকার পুলিশ, প্রতিবেশী, রেসিডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন আর সর্বোপরি শাহিদা ম্যাডাম না থাকলে তো সবকিছু হারিয়ে তলিয়েই যাচ্ছিলাম আমি। কেউ জানতেই পারতো না, স্যারের ঘরের বন্দী জীবনে থেকে একদিন হয়তো টুপ্ করে মরেই যেতাম! আর আমি চলে গেলে আমার মায়ের সমস্ত গয়নাগাটি, বাবার তৈরি এই ঘরবাড়ী-সবই হজম করে ফেলতেন এই লুঠেরা স্যার সুগত ঘোষ।”

শনিবার মহুয়াকে সাথে নিয়ে সিটিসেন্টারে প্রীতিবিহার পার্কের উল্টোদিকে নন্দলাল বিথীর চর্চিত একতলা বাড়িটিতে প্রথমে আসেন শাহিদা করিম খান। তিনি বেনাচিতির একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। গত বুধবার প্রায় মাঝ রাতে এখানকারই কবিগুরু রোডের অ্যাবাকাস অ্যাকাডেমীর তেতলায় মাসের পর মাস বন্দি থাকা মহুয়াকে পুলিশ উদ্ধার করে আনার পর থেকে তিনি শাহিদার আশ্রয়েই ছিলেন। বন্দি দশা থেকে এই শাহিদাকেই আর্তস্বরে ফোন করেন মহুয়া। তিনি একসময় শাহিদার স্কুলেই শিক্ষিকা ছিলেন। শাহিদা বললেন, “আমি মানবতার ধর্ম পালন করছি। একজন অসহায় মানুষকে একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ আর তার পুরো পরিবার যেভাবে ঠকিয়ে লুঠ করে নিচ্ছিল, তা দেখে কী চুপ করে বসে থাকা যায় ?”

শনিবার মহুয়াকে ঘরে ফেরাতে এসেছিলেন-সিটিসেন্টারের নন কোম্পানি রেসিডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শান্তনু সোম, কর্মকর্তা পরম ভট্টাচার্যরাও। শান্তনু বললেন, “সামাজিক কাজ করার জন্য আমরা দায়বদ্ধ। কোথাকার একজন উটকো লোক এসে এভাবে সব লুঠ করে চলে যাবে আর আমরা বসে বসে দেখবো ? তা কি কখনো হয়।

এদিন সবাই এলেও মহুয়ার বাড়ীর ধারে কাছে দেখা যায়নি আভিযুক্ত সুগত বা তার স্ত্রী শিল্পীকে। তাদের তরফে সবকিছু ‘দেখিয়ে বুঝিয়ে’ দিতে এসেছিলেন নন্দ দেব নামে এক কর্মচারী। নন্দ দেব বললেন, “স্যার আমাকে পাঠালেন এনাদের ঘরটা খুলে দিতে। সবকিছু বুঝিয়ে দিতে।”

সালিশি সভাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার কথা সম্প্রতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র সরকার। এবার সেই সালিশি সভাতেই নিজের টাকা, গয়না, বাড়ী ফেরৎ পাওয়ার দিশা পেলেন লুণ্ঠিত যুবতী মহুয়া ভট্টাচার্য্য। বৃহস্পতিবার পুলিশের মধ্যস্থতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পর শুক্রবার রাত্রে সিটি সেন্টারের রেসিডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মহুয়ার ঘর বাড়ী ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন অভিযুক্ত সুগত ঘোষ।

পিতৃ মাতৃহীন অবিবাহিতা মহুয়া চাকরি করছিলেন সুগত’র অ্যাবাকাশ অ্যাকাডেমীতে। তার বাড়ী সিটিসেন্টারের নন্ কোম্পানি পাড়ার নন্দলাল বীথিতে। তার মাতৃ বিয়োগের পর সুগত ও তার স্ত্রী শিল্পী ক্রমে মহুয়ার ‘অসহায়তা’র সুযোগ নিয়ে তাকে নিজেদের কবিগুরু রোডের অ্যাকাডেমীটির তেতালায় স্থানান্তরিত করেন। মহুয়ার অভিযোগ, “আমাকে বারে বারে বোঝানো হয় যে আমি একা থাকলে নাকি সমাজের লোকজন অন্যায় ভাবে সুযোগ নিয়ে আমাকে ঠকিয়ে সব কেড়ে নেবে। আমি ওনাদের কথায় ভরসা করে ওখানে উঠে যাই।” তার কিছুদিন পর থেকেই ‘চতুর’ সুগত-শিল্পী র আসল খেল্ শুরু। একে একে মহুয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খালি করে ২৬ লক্ষ টাকা, ৩০ ভরি গয়না লোপাট করার পর মহুয়ার পৈত্রিক বাড়ীটিও সুগত’র মেয়ে সুদীক্ষার নামে লিখিয়ে নেওয়া হয়। তাও আবার ‘শূন্য’ টাকার বিনিময়ে। মহুয়ার কথায়, “আমার ২১ লক্ষ টাকাও সুদিক্ষার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয় আর ৫ লক্ষ টাকার সার্টিফিকেট কেনা হয়, আমার আর সুদীক্ষা’র যৌথ নামে। আমার মায়ের গয়নাগুলো রাখা হয় শিল্পী ম্যামের অ্যাকাউন্টে।”

সিটিসেন্টার পুলিশ ফাঁড়িতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পর ওই রাত্রেই পুলিশ ও আইনজীবীদের উপস্থিতিতে ২১ লক্ষ টাকা ফের মহুয়ার অ্যাকাউন্টে ফিরিয়ে দেন সুগত। আর সোনার গয়না ফেরৎ দিতে গিয়ে ওই দিনই ফের নতুন জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েন ওই দম্পতি। পুলিশি প্রহরায় ৩০ ভরির মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও কম-মাত্র ৯ভরি গহনা এনেছিলেন অভিযুক্ত ঘোষ দম্পতি। স্থানীয় একটি জুয়েলারী শপে ওই ৯ ভরি ওজন এবং গুণগতমান যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়-মহুয়ার মায়ের দামী গহনার সবটাই বদলে ফেলেছেন ঘোষ দম্পতি। পাশাপাশি, ৯ ভরির ভেতর কৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন দুটি নকল সোনার বালাও। নকল গহনাকে খাঁটি সোনা বলে চালাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেন তারা, বলে মহুয়ার সাথে যাওয়া প্রতিবেশী ও শুভানুধ্যায়ীরা জানান। সুগত বলেন, “ওটা ভুল করে সাথে চলে এসেছে। বুঝতে পারিনি।” সিটি সেন্টার পুলিশ ফাঁড়ির এক অফিসার বলেন, “সবই আমাদের নজরে রয়েছে। ব্যাপারটা ঠিকঠাক না মেটালে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় ওকে গ্রেফতার করে লোকটার সব রকম জালিয়াতির সব তদন্ত একসাথে শুরু করা হবে। আমাদের কাছে ওর ব্যাপারে প্রচুর তথ্য, নথি ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে।”টাকা, গয়না, বাড়ী হড়প করার পাশাপাশি মহিলা কর্মচারীকে দীর্ঘদিন আটক করে রাখা, সময় সময়ে নির্যাতন করা, চাপ সৃষ্টি করে অসহায় যুবতীর সম্পত্তি হাতানোর মতো ধারা তো রয়েছেই, কর্মস্থলে মহিলা কর্মীর সাথে অসদ্ ব্যবহার, হুমকির ধারাও প্রযোজ্য হবে। পর পর দু’দিন বৈঠকের আগে এক রাত সুগতকে ওই ফাঁড়িতে আটকে রাখাও হয়। পরদিন সুগত’র হয়ে সাফাই দিতে আশা তিন নবীন আইনজীবী মহুয়ার প্রতিবেশীদের প্রবল বিরোধের সামনে পড়েন। শুক্রবার রাত্রে সিটিসেন্টারের নন্ কোম্পানি রেসিডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের পদাধিকারীদের মধ্যস্থতায় দু’পক্ষকে নিয়ে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত ফের বৈঠক চলে। পুলিশ নিদান দেয়-যা কিছু সিদ্ধান্ত, তা দ্রুত সেরে ফেলতে হবে, নতুবা, সুগত শিল্পীর পাশাপাশি, দেরাদুনে পাঠরত তাদের মেয়ে সুদীক্ষাকেও গ্রেফতার করে আনা হবে, বলে একটি সূত্র জানায়।

সুগত’র সম্পত্তি ও ব্যবসার বিষয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরুর প্রক্রিয়া আরম্ভ করেছেন এখানকার কমিশনারেট পুলিশের গোয়েন্দারা। অপেক্ষায় মুহুয়া আর দুর্গাপুরের সচেতন নাগরিকেরা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments