eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্গাপুরে বনদপ্তরের জায়গা লুঠঃ হাভাতে নেতার এখন ৪টি চারচাকা

দুর্গাপুরে বনদপ্তরের জায়গা লুঠঃ হাভাতে নেতার এখন ৪টি চারচাকা

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুরঃ- দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে সরকারি জায়গা দখলের এক অসাধু চক্র কাজ করে চলেছে বহু দিন ধরেই। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জায়গাকে জবরদখল করে বাড়ী ঘরদোর থেকে শুরু করে দোকানপাট বসানোর অভিযোগ রয়েছে ভুরি ভুরি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক দেখানো এক-দু-বার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না, বরং উচ্ছেদ অভিযান শেষ হলেই আবার স্বমহিমায় বাড়িঘর, দোকানপাট নির্মাণ শুরু হয়ে যায় পাকাপাকি ভাবে। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা, এম এ এম সি কারখানা, দূর্গাপুর প্রজেক্ট লিমিটেড কারখানা, হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার কারখানা, এই সব কারখানার সরকারি জমি রাতের অন্ধকারে নয় প্রকাশ্য দিবালোকে লুঠ করছে এক শ্রেণীর দালাল চক্র। বলাই বাহুল্য, এর পেছনে স্থানীয় কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদলের নেতাকর্মী ও সক্রিয়ভাবে জড়িত।

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের আঢ়া, কালিগঞ্জ এলাকায় রাজ্য বনদপ্তরের কয়েক বিঘা জায়গা রয়েছে। বনদপ্তরের সেই সব জায়গা জুড়ে কোথাও পাকাপাকি ক্লাবঘর, খেলার মাঠ, কোথাও ঘরবাড়ি ও কোথাও আবার বড় বড় বাণিজ্যিক গোডাউন তৈরি হচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে। এক সময় মহানায়ক উত্তম কুমারের একটি জমিও জবরদখল করে ক্লাব ঘর বানিয়ে নিয়েছিল সিপিএম প্রভাবিত কিছু যুবক।

গতকালই অভিযোগ পেয়ে বিধাননগর সংলগ্ন কালিগঞ্জ এলাকায় এমনই একটি অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করলো পুলিশ। স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গেছে বনদপ্তরের জায়গার ওপর পাকাপাকি ভাবে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে এই অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই বিধাননগর ফাঁড়ির পুলিশ তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় এবং পুলিশ অফিসারেরা সতর্ক করেন ওই নির্মাণ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের ভবিষ্যতে যেন আর নতুন করে নির্মাণ কাজ না হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল পুলিশেরই কি দায়িত্ব কোথায় অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে সেটা দেখার ? যে সংস্থার বা দপ্তরের জমি তারা কি করছে ? স্থানীয় কালিগঞ্জ বাসিন্দাদের অভিযোগ দুর্গাপুর বনদপ্তরের একাধিক আধিকারিক সহ নিচুতলার কিছু কর্মী মোটা টাকার বিনিময়ে রাজ্যের বনদপ্তরের জায়গা অবৈধভাবে দখল করতে সাহায্য করছে একটি দালাল চক্রকে। বিধাননগর বনদপ্তর থেকে কালীগঞ্জের দূরত্ব মেরেকেটে এক কিলোমিটার হবে। কিন্তু বনদপ্তরের কোন আধিকারিকের নজরে আসে না কয়েক বিঘা সরকারি বনদপ্তরের জায়গা কিভাবে লুঠ হচ্ছে শিল্পাঞ্চলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ বনদপ্তরের দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিক ও কর্মীদের সাথে স্থানীয় জেমুয়া পঞ্চায়েতের এক প্রভাবশালী তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সক্রিয় ভাবে এই দালাল চক্রটি চালাচ্ছেন। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’ পরিবারের ছেলে ওই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সাইকেলে চেপে ঘুরে বেড়াতেন এলাকায়। এখন চার চারটি গাড়ির মালিক ও ওই এলাকাতেই বিশাল বাড়ি করে জাঁকিয়ে তোলাবাজির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সব দেখেও না দেখার ভান করছে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।

একটি সূত্র মারফত জানা গেছে এলাকার বহু সরকারি অধিকৃত জমিতে ফ্ল্যাট নির্মাণ ও প্রোমোটারি করার জন্য মোটা টাকা সেলামি দিতে হয় ওই দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল কংগ্রেস নেতাকে। শুধু তাই নয়, রাত্রে বেলায় তার সাগরেদদের মনোরঞ্জনের জন্য প্রতিটি হাউসিং প্রজেক্টে একটি করে ফ্ল্যাট ও নাকি তার রাখা রয়েছে। স্থানীয় কালিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ কিছুদিন আগে কালিগঞ্জ এলাকায় বাঁশ টালি দিয়ে নির্মাণ করা এক ছোট্ট দোকান আজ বিশাল কংক্রিটের কোল্ড্রিংসের ডিপো হয়ে গিয়েছে মোটা টাকার বিনিময়ে। উল্লেখ্য কিছুদিন আগে পর্যন্ত ইট বালি দোকান করা উজ্জ্বল ভান্ডারী ও তার পুত্রও আজ সরকারি বনদপ্তরের জায়গায় প্রায় চার হাজার স্কোয়ার ফুটের পাকাপোক্ত বিশাল কোল্ড্রিংসের গোডাউন তৈরি করে ফেলেছেন। অভিযোগ, দুর্নীতিগ্রস্ত ওই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা নাকি ৫ লক্ষ টাকায় নির্মাণ কাজটি বিনাবাধায় করতে দেওয়ার জন্য তোলা নিয়েছেন।

পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার অন্তর্গত ওই এলাকার বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কড়া ধাতের মানুষ বলে পরিচিত। কিন্তু প্রশ্ন হল, এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন ওইসব দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না তিনি, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীরা। এদিকে বনদপ্তরের আধিকারিককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বারবারই একই উত্তর আসে “তদন্ত করে দেখা হচ্ছে”। অথচ, প্রায় প্রতিদিনই মোটা টাকার বিনিময়ে লুঠ হয়ে যাচ্ছে বনদপ্তরের বহুমূল্য জায়গা। একটি সমাজসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই লিখিতভাবে রাজ্যের বনমন্ত্রীর কাছে দুর্গাপুর বনবিভাগের আধিকারিক ও কর্মীদের অসাধু দালাল চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তুলে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এখন দেখার যে বনদপ্তরের শীতঘুম ভাঙ্গে কিনা ?

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments