অমল মাজি,দুর্গাপুর:- ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বনফুল সরণির রাস্তা সংস্কারের অর্থ বরাদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরও এখনো রাস্তা সংস্কার হয়নি | ক্ষোভে ফুঁসচ্ছেন স্থানীয় মানুষ |
দীর্ঘ বছর যাবৎ খানা খন্দে ভরা বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে এই রাস্তাটি । বারবার সংস্কারের আশ্বাস মিললেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এনিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকার বাসিন্দাদের।
এসবি মোড় সংলগ্ন জেপি এভিনিউ থেকে গ্রাফাইট যাওয়ার রাস্তার নাম বনফুল সরণি । এই রাস্তার একপাশে রয়েছে পেট্রল পাম্প, জোনালসেন্টার এডিডিএ’র রেসিডেন্সিয়াল কাম কমার্সিয়াল প্লট, সন্ত নিরংকারী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, ডিএমসি’র অভিনন্দন লজ, পুকুরপাড় বস্তি এবং সগর ভাঙা হাউজিং কোয়ার্টার। আর এই রাস্তার অন্য পাশে রয়েছে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া’র স্টাফ কোয়ার্টার (কলোনি ), কন্টেনার কোম্পানি, ডিএমসি’র ৪ নং বোরো অফিস, বিবাদীবাগ বস্তি এবং এসআরএমবি কারখানা। অতএব এই বনফুল সারণির রাস্তাটির গুরুত্ব অপরিসীম। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হেঁটে, সাইকেলে, বাইকে যেমন যাতায়াত করেন, ঠিক তেমনি গুডসশেড, গ্রাফাইট, এসআরএমবি এবং কন্টেনার কোম্পানির প্রতিদিন পাঁচ-সাতশো ট্রাক-ডাম্পার-কন্টেনার যাতায়াত করে। ফলে এই রাস্তা সবসময় ভয়ঙ্কর ধুলোয় ভরে থাকে। অতিষ্ঠ ফুড কর্পোরেশন, জোনাল সেন্টার সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। ভয়ঙ্কর অবস্থা সন্ত নিরংকারী স্কুলের ছোট ছোট ছাত্র ছাত্রীদের।
এমন ভয়ঙ্কর ধুলোয় অতিষ্ঠ হয়ে জোনাল সেন্টারে এবং এই রাস্তার পাশে যারা বসবাস করেন তারা অনেকেই বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। খানা খন্দে ভরা এই রাস্তায় আসা যাওয়া ট্রাক ও ডাম্পারের বিকল হওয়ার ঘটনা, পথ চলতি মানুষের দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা। অভিযোগ, এই রাস্তা দিয়ে সবসময় যাতায়াত করে ওভারলোডিং ভারী গাড়ি। যার জেরে রাস্তার অবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে।
স্থানীয়রা দীর্ঘদিন আন্দোলন-বিক্ষোভ দেখানোর পরেও ডিএমসি এবং এডিডিএ’র দড়ি টানাটানিতে এই রাস্তাটির সংস্কার হচ্ছিল না। আসলে এই রাস্তায় ডিএমসি টোল ট্যাক্স আদায় করে। সেক্ষেত্রে ডিএমসি তাদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না। যাইহোক দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করতে সিদ্ধান্ত নেয় আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ )।
গত মে মাসে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন ৪কোটি ৬৯ লক্ষ ২৯ হাজার ৭৪৪ টাকা ব্যয় করে বনফুল সরণির রাস্তা সংস্কার করা হবে । কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও রাস্তা সংস্কারে কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে ।
ডিএমসি ৪ নং বোরো’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান, বর্তমানে বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বোরো চেয়ারম্যান থাকাকালীন ওই ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে প্রত্যেকদিন বোরো অফিস যেতে হতো । তাই ওই রাস্তাটির সংস্কার করার দাবিতে তিনি সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়ে এডিডিএ-র কাছে দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেইসময় কাজের কাজ হয়নি। চন্দ্রশেখর আরও বলেন, ছয় মাস আগে ওই রাস্তাটির সংস্কার করার জন্য ৪ কোটি ৬৯ লক্ষ ২৯ হাজার ৭৪৪ টাকা বরাদ্দ করে এডিডিএ । কিন্তু সেই কাজ শুরু হয়নি। হবে কি করে ? রাজ্যে ভাঁড়ার এমনিতেই শূন্য। তাছাড়া বরাদ্দ করা অর্থে কাটমানির খেলা আছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে কলকাতা ডালহৌসি-তে নির্দিষ্ট কাটমানির অর্থ পৌঁছে না দিয়ে এলে রাস্তার সংস্কারের কাজ শুরু হবে না।
বিরোধীদের অভিযোগকে পাত্তা না দিয়ে এডিডিএ চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একটু সমস্যা হয়েছিল, তবে কলকাতায় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দপ্তরে অনুমোদন পাওয়া গেছে। এডিডিএ সিইও কয়েকদিনের মধ্যে বিষয়টি নিস্পত্তি করবেন। তাই আসা করছি, এই নভেম্বর মাসে মাঝামাঝি সময়ে বনফুল সরণির রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যাবে।
স্থানীয় মানুষদের বক্তব্য, এই রাস্তা সংস্কার হলে আগামী ছয় মাস হয়তো মানুষের চলাচলে সুবিধা হবে, দুর্ঘটনাও কিছুটা কমবে। কিন্তু পাকাপাকি সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ যেভাবেই রাস্তাটির সংস্কার করা হোক না কেনও, ভারী মালবাহী ট্রাক, ডাম্পার, কন্টেনার চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারলে রাস্তার অবস্থা সেই একই অবস্থায় ফিরে যেতে বাধ্য । তাই এই মালবাহী ভারী যান চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করতে হবে। সেইজন্য এসআরএমবি কারখানার দক্ষিণ দিকে রেল লাইনের ধার দিয়ে সরাসরি খাদ পুকুরের কাছে রেল ব্রিজ পর্যন্ত একটি বিকল্প রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে দীর্ঘদিনের। ওই রাস্তাটি বাস্তবায়িত হলে বনফুল সরণি রাস্তাটির উপর চাপ পুরোপুরি কমে যাবে।