eaibanglai
Homeএই বাংলায়ক্রীড়া উন্মাদনায় স্বর্ণযুগের সূচনা “দুর্গাপুর স্পোর্টস কার্নিভাল ২০২৫”

ক্রীড়া উন্মাদনায় স্বর্ণযুগের সূচনা “দুর্গাপুর স্পোর্টস কার্নিভাল ২০২৫”

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- জন্ম লগ্ন থেকে দুর্গাপুর ও তার আশেপাশের এলাকা শিল্পাঞ্চল নামে পরিচিত। কিন্তু মাত্র দু দশক আগেই দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ছুটে চলে শিক্ষাঞ্চল রূপে আত্মপ্রকাশ করতে। আজ দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল, শিক্ষাঞ্চল বলে নিজেকে পরিবর্তিত করে দেশ তথা বিদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের অধ্যায়নের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ও সুনামের সাথে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। এবার দুর্গাপুর তার অতীতের স্বর্ণালী দিনগুলিকে একত্রিত করে ছুটে চলেছে ক্রীড়াঞ্চল রূপে আত্মপ্রকাশ করতে।

শিল্পাঞ্চল, শিক্ষাঞ্চল পরে এবার ক্রীড়াঞ্চল করার যে ভাবনা দুর্গাপুরের কিছু মানুষের মধ্যে এসেছে, সহজেই বোঝা যায় আগামী দিনে স্বর্ণযুগ আসতে চলেছে দুর্গাপুরের ক্রীড়া প্রেমীদের জন্য। একসময় দুর্গাপুর আসানসোল শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে নামকরা খেলোয়াড়রা গোটা বিশ্ব দাপিয়েছেন ও এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে ৭-৮টা নামকরা স্টেডিয়াম, বিশ্বমানের ইনডোর স্টেডিয়াম, ইনডোর গেমস প্লেয়িং এরিনা সহ কয়েকশো স্থানীয় এলাকা ভিত্তিক বড় ফুটবল ময়দান রয়েছে। কিন্তু দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন খেলার সংগঠন গুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজন পোষণ, পেশাদারিত্বের অভাব, অবৈজ্ঞানিক পরিচালন পদ্ধতি, দুর্নীতি, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব,আর্থিক দুর্বলতা, অপ্রতুল পুষ্টিকর খাবার, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সর্বোপরি বিশ্বমানের পরিকাঠামো যুক্ত নির্দিষ্ট জমির অভাব, দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে খেলোয়াড় ও খেলার অনুরাগীদের মধ্যে।

সম্প্রতি এক দুঃখজনক ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় দুর্গাপুরের ক্রীড়া ব্যবস্থার দুর্দশা ও আর্থিক দৈনদশা। এই ঘটনা দুর্গাপুরের খেলা অনুরাগী মানুষের কাছে এক কালো অধ্যায় রূপে ইতিহাস হয়ে থাকবে। একটি সূত্র মারফত জানতে পারা গেছে, এবছর ন্যাশনাল টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগীদের যে খরচ হয়েছে, সেই খরচার যোগান দেওয়ার জন্য একটি আস্ত টেবিল টেনিস বড বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন ওই পরিচালন সমিতির কর্মকর্তারা।

গত দুই বছর ধরে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের কিছু বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজকর্মী, বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তা, আশেপাশের গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এক ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছেন দুর্গাপুরের ক্রীড়া প্রেমে স্বর্ণযুগ আনবেন। সেই মতো গত দুবছর ধরে দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয় নাম নিয়ে দুর্গাপুরে পরপর দু’বছর অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বমানের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। আর সেই ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবছরও “দুর্গাপুর স্পোর্টস কার্নিভাল ২০২৫” অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সম্ভবত রাজ্যে তথা দুর্গাপুরে প্রথমবার এত বড় আকারে “দুর্গাপুর স্পোর্টস কার্নিভ্যাল ২০২৫” অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, যা আজ ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়, এবং সহযোগিতায় রয়েছে শহরের বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন। “দুর্গাপুর স্পোর্টস কার্নিভ্যাল ২০২৫”এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আজ ৫ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় সিটি সেন্টারের ভগৎ সিং স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ও সুরকার অনুপম রায় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। এই কার্নিভ্যালে মোট ৩২টি ইভেন্টে ও প্রায় ১৫,০০০-এর বেশি প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করবেন, এবং মোট পুরস্কারের মূল্য ২৫ লক্ষ টাকা রয়েছে। প্রধান ইভেন্টগুলির মধ্যে রয়েছে ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, দাবা এবং অ্যাথলেটিক্স। বিশেষ ভাবে, ১২ জানুয়ারি একটি ম্যারাথন আয়োজন করা হবে, যেখানে প্রাক্তন ফুটবল তারকা বাইচুং ভুটিয়া উপস্থিত থাকবেন।

জেলার স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন গুলির বাছাই করা খেলোয়াড়রা, স্কুল-কলেজের সেরা খেলোয়াড়রা এবং কিছু ইভেন্টে বাইরের প্রতিযোগীরাও অংশগ্রহণ করবেন। এই আয়োজনের মাধ্যমে দুর্গাপুরে খেলাধুলার প্রসার এবং উন্নয়নের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয় কমিটির অন্যতম কর্ণধার সন্দীপ দে।

শনিবার, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টার এর জংশন মল এলাকায় বিনামূল্যে “দুর্গাপুর স্পোর্টস কার্নিভ্যাল ২০২৫” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য এন্ট্রি পাস নেওয়ার জন্য কয়েক হাজার উৎসুক মানুষ বিকেল থেকে লাইন দিয়ে রাত অবধি এন্ট্রি পাস সংগ্রহ করেন ও দুর্গাপুর শহর যে ক্রীড়া প্রেমীদের শহর তা প্রমাণ দেন। “দুর্গাপুর স্পোর্টস কার্নিভ্যাল ২০২৫” উদ্যম, উত্তেজনা, উন্মাদনা ও উদযাপনের মঞ্চ প্রমাণ করতে চলেছে আগামী দিনে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল ক্রীড়ার মানচিত্রে স্বর্ণযুগের সূচনা করবে। দুর্গাপুরের সাধারণ বাসিন্দারা দুর্গাপুর ক্লাব সমন্বয়ের সকল কর্মকর্তাদের এই বিশাল রাজসীয় স্পোর্টস কার্নিভ্যাল কর্মকাণ্ডের আয়োজনের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments