মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- আধুনিকতা ও বিলাসিতার প্লাবনে হাবুডুবু খাচ্ছে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর। দুর্গাপুরে এখন রয়েছে ঝা চকচকে শপিং মল, বিশ্বমানের পেক্ষাগৃহ, ডজনখানেক নামি দামি হোটেল ও রেস্তোরা, বিখ্যাত ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল কলেজ, আন্তর্জাতিক মানের বিনোদন পার্ক,আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, উন্নত রাস্তাঘাটের পর এবার দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মুকুটে নতুন সংযোজন বাড়ির পোষ্যেদের জন্য অত্যাধুনিক চিকিৎসালয়।
সূত্র মারফত জানা গেছে, শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের প্রতি দশটি বাড়ির মধ্যে দুটি বাড়িতে গৃহপালিত পোষ্য রয়েছে। ওই সব পোষ্যদের পেছনে প্রতি মাসে একটি মোটা অংকের টাকা খরচা করতে হয় পশুপ্রেমীদের। পোষ্য ও মানুষের প্রেমের এই মায়াজালে মাত্র কয়েক বছরই গৃহপালিত পোষ্য গুলি পারিবারিক সদস্যের রূপ নেয়। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের পশুপ্রেমীদের জন্য এখন একটা পোষ্যদের অত্যাধুনিক চিকিৎসালয়ের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তাই দুর্গাপুরে দরকার একটি অত্যাধুনিক পোষ্যদের চিকিৎসালয়। আজ ৫ই(৫/০১/২৫) জানুয়ারি দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র সিটি সেন্টার এর অভিজাত এলাকা বেঙ্গল অম্বুজার, ২৮ নম্বর বাড়িতে শুরু হল “মেট্রোপলিটন ভেটেনারি অ্যাডভান্স ক্লিনিক”। ব্রহ্মাণ্ডের ‘পঞ্চতন্ত্রের ন্যায়’ পাঁচ উদ্যমী হৃদয় এই সংস্থাটির কর্ণধার বলে জানা গেছে। আজকের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন শিল্পাঞ্চল তথা রাজ্যের নামকরা একাধিক ব্যক্তিত্বরা। বিখ্যাত বাংলা চিত্র অভিনেতা আবির চ্যাটার্জী এই অ্যাডভান্স ক্লিনিকটির শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অভিনেতা ছাড়াও আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান, কবি দত্ত, অ্যাডিশনাল ডাইরেক্টর জেনারাল অফ পুলিশ, অজয় কুমার নান্দ, দুর্গাপুর তথা দেশের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিএভি মডেল স্কুলের প্রিন্সিপাল পাপিয়া মুখার্জি, শ্রী ফারাহাত আব্বাস, ডি আই জি সহ একগুচ্ছ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আমন্ত্রিত ছিলেন।
এই “মেট্রোপলিটন ভেটেনারি অ্যাডভান্স ক্লিনিক”কে প্রায় প্রতিদিনই উপস্থিত থাকবেন বিখ্যাত পশু চিকিৎসকরা। পোষ্যদের জন্য বিশ্বমানের সমস্ত রকম চিকিৎসা পরিষেবা এই অ্যাডভান্স ক্লিনিকে দেওয়া হবে। বিশেষত স্পেশাল গ্রুমিং, রেগুলার হেলথ চেকআপ, ভ্যাক্সিনেশন, সার্জারি, ডেন্টাল কেয়ার সহ আপাতকালীন চিকিৎসার ও ব্যবস্থা রয়েছে। এইসব চিকিৎসা ও পরিষেবা পেতে গেলে একটি আর্থিক বিষয় রয়েছে। স্বভাবতই আর্থিকভাবে সচ্ছল ধনী মানুষজনই এদের ক্রেতা বলে মনে করেছেন মনে করা হচ্ছে। দ্রুত নগরায়ন ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিঃসন্দেহে আজ এই ধরনের ভেটেনারি অ্যাডভান্স ক্লিনিকের প্রয়োজন ছিল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে। দূর্গাপুরে এহেন ভেটেনারি অ্যাডভান্স ক্লিনিক শুরু হওয়ার ফলে উপকৃত হবেন শিল্পাঞ্চলের কয়েক হাজার পশুপ্রেমী।
অন্যদিকে কিন্তু প্রদীপের তলায় অন্ধকারের মতন অবস্থা। দুর্গাপুরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রথম পোষ্য চিকিৎসালয়ের পাশে দাঁড়ানোর মানুষ মেলা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। আর্থিক অনটনের ফলে বহু মালিক বিহীন গৃহপালিত পশুরা এক বেলা কোনো রকম খাবার খেয়ে বেঁচে রয়েছে এই পোষ্য চিকিৎসালয়ে। সিটি সেন্টারের অভিজাত এলাকা অম্বুজা কলোনি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এম,এ,এম,সি’র স্টাফ ক্লাবকে, আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের কাছ থেকে চড়া ভাড়ায় নিয়ে “আরণ্যক” নামক পশু হাসপাতাল শুরু করে কেয়া দুরাই নামক এক গৃহবধূ ও তার সঙ্গী সাথীরা। মাত্র সাত মাসের মধ্যেই জঙ্গল হয়ে ওঠা এম,এ,এম,সি’র স্টাফ ক্লাবের পরিসর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ভগ্নদশাই থাকা ইট পাথরের দেওয়ালেই চুনের প্রলেপ দিয়ে চলছে এই পশু চিকিৎসালয়টি। ইতিমধ্যেই শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পথে ঘাটে দুর্ঘটনাগ্রস্থ গৃহপালিত জন্তু জানোয়ারদেরকে এলাকার মানুষেরা ওই পশু হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আর্থিক উদ্যোগে ও কিছু মানুষের স্নেহের দানের ওপর ভরসা করেই চলছে এই হাসপাতালটি। অভাব রয়েছে পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর, ওষুধপত্রের ও সার্জারি জনিত সরঞ্জামের। এক গৃহবধুর পশু প্রেম, অবলা রাস্তার অসুস্থ পশুদের কাছে দেবী রূপে অবতারিত হয়েছেন কেয়া দুরাই।
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিত্তশালী ধনী ব্যক্তিদের কাছে এহেন মানবিক কাজের জন্য কোনরকম আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়নি এখনো অব্দি বলে জানিয়েছেন আরণ্যক পশু হাসপাতালের কর্ণধার গৃহবধূ কেয়া। ভাবতেও অবাক লাগে একদিকে যেখানে নিজের বাড়িতে দামি ব্রিডের পোষ্যেদের জন্য অত্যাধুনিক চিকিৎসালয়ের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তখন শিল্পাঞ্চলের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো একাধিক গৃহপালিত অসুস্থ পশুর মুখে দুবেলা খাবার জোটানোর কোন প্রচেষ্টায় লক্ষ্য করা যায়নি। এ কেমন পশু প্রেমের দুই রূপ। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে পশুপ্রেমে কি ধনী দরিদ্র মাপকাঠি হয়? নাকি পশুপ্রেম ও নিছক এক নতুন ধরনের ব্যবসার রূপ।