সূচনা গাঙ্গুলি,গুড়াপঃ- হুগলির গুড়াপের বিশিষ্ট সমাজসেবী অঞ্জু গোস্বামী প্রতিষ্ঠিত ‘তেলাকোনা নারী প্রগতি সংঘ’-এর উদ্যোগে গত ৯ ই মে যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে পালিত হয় কবিগুরুর ১৬৩ তম জন্মজয়ন্তী। মূলত চারদেওয়ালের মধ্যে বন্দী মহিলাদের নিয়ে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।
সকাল থেকে শুরু হয় পূর্ব নির্ধারিত রবীন্দ্র সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য প্রতিযোগিতা। সেখানে স্থানীয় ও বহিরাগত শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। সন্ধ্যায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।
রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় বৈকালে। বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মন্দিরা মুখার্জ্জীর পরিচালনায় সমবেত উদ্বোধনী সঙ্গীত ‘হে নতুন দেখা দিক আরবার’-এ অংশগ্রহণ করেন ‘তেলাকোনা নারী প্রগতি সংঘ’-এর সদস্যারা। অঞ্জু গোস্বামীর স্বাগত ভাষণের পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত একের পর এক শিল্পী পরিবেশন করেন সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য। মেমারির ব্রততী ঘোষ আলির পরিচালনায় ‘আবৃত্তির পাঠশালা’ আয়োজিত ‘শিশুর মনে রবির ছবি’ দর্শকদের মুগ্ধ করে। পরিবেশনার গুণে অনুষ্ঠান পৌঁছে যায় অন্যমাত্রায়।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মানিক মালিক পরিচালনায় ‘গুড়াপ ক্যারাটে অ্যাকাডেমির’ শিক্ষার্থীদের ক্যারাটে প্রদর্শন।
রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে এটা ছিল এক অভিনব ভাবনা সমকালিন সমাজের পক্ষে যথার্থ।
অনুষ্ঠানের একেবারে শেষলগ্নে পরিবেশিত হয় মন্দিরা মুখার্জ্জীর পরিচালনায় ও ‘দক্ষিণী সঙ্গীত শিক্ষায়তন’-এর শিল্পীদের দ্বারা পরিবেশিত নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’। সম্প্রীতি, অনন্যা, অন্বেষা, শম্পা, অভিষিক্তা, রেশমী, দীপ্তাক্ষী, বর্ষা, চিত্রাঙ্গদা প্রমুখের অভিনয় দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুড়াপ রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের প্রাণময়ানন্দ মহারাজজী, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিধায়িকা অসীমা পাত্র সহ এলাকার বহু রবীন্দ্রপ্রেমী মানুষ।
প্রসঙ্গত ‘নিশী দিন ভরসা রাখিস হবেই হবে/ বোবার মত ছিল তারা, তারাও কথা কবেই কবে’- এই বিশ্বাসের উপর ভর রেখে এলাকার মহিলাদের নিয়ে ২০১৮ সালে বিশিষ্ট সমাজসেবী অঞ্জু গোস্বামী প্রতিষ্ঠা করেন ‘তেলাকোনা নারী প্রগতি সংঘ’। লক্ষ্য চারদেওয়ালের মধ্যে বন্দী মহিলাদের বাইরের জগত চেনানো। তাদের মধ্যেও যে প্রতিভা লুকিয়ে আছে সেটা সামনে আনা। মূলত তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য গত পাঁচ বছর ধরে তিনি এই ধরনের অনুষ্ঠান করে চলেছেন।
অঞ্জু দেবী বললেন- যে হাত গোবর কুড়োয়, ঘুঁটে দেয়, দু’বেলা রান্না করে, উদয়-অস্ত ‘কলুর বলদ’-এর মত খেটে মরে – চেষ্টা করলে তারাও পারে সেটা আমি প্রমাণ করে দিয়েছি। আমার বিশ্বাস- মহিলাদের হাত ধরে সাংস্কৃতিক জগতে বাংলা তার হারিয়ে যাওয়া শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করবে। চলার পথে যারা তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।