eaibanglai
Homeএই বাংলায়এলাকার মেয়ে রাজ্যের সেরা - গর্বিত গুসকরাবাসী

এলাকার মেয়ে রাজ্যের সেরা – গর্বিত গুসকরাবাসী

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, আউসগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান -: দু’দলের মধ্যে ‘সবার সেরা বাঙালির ফুটবল’ খেলা চলছে ময়দানে। গ্যালারিতে হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে একটামাত্র বলকে নিয়ে ছন্দোময় কাড়াকাড়ি চলছে উভয় দলের বাইশ জন খেলোয়ারের মধ্যে। এই বল কাড়াকাড়ির মধ্যেই লুকিয়ে আছে সৌন্দর্য, উত্তেজনা। এই ছন্দোময় সৌন্দর্যের মধ্যে যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে তাই মুখে বাঁশি এবং কালো রঙের জার্সি ও প্যাণ্ট, যদিও এখন অন্য রঙের পোশাক পরা হয়, পরে খেলোয়ারদের সঙ্গে সমান তালে ছুটে মাঠের মধ্যে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছেন একজন। মাঠের বাইরে হাতে পতাকা নিয়ে তাকে সাহায্য করছেন দু’জন। মাঠের মধ্যে যিনি আছেন ফুটবলের ভাষায় তিনি হলেন রেফারি এবং মাঠের বাইরে যে দু’জন আছেন তারা হলেন সহকারি রেফারি।

এবার মহিলা বিভাগে সেরা সহকারি রেফারির সম্মানে ভূষিত হলেন গুসকরা পৌরসভার ১৪ নং ওয়ার্ডের আলুটিয়ার বাসিন্দা বছর বাইশের তরুণী হামিরা আনসারি। সম্প্রতি আইএফএ অর্থাৎ ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাকে এই সম্মানে ভূষিত করেছে। কলকাতার টাউন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইএফএ এর পক্ষ থেকে তার হাতে মানপত্র তুলে দেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। প্রসঙ্গত সেদিন আট জন পুরুষ ও হামিরা সহ আরও তিনজন মহিলা রেফারির হাতে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। তার এই সাফল্যের খবরে খুব খুশি এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে এলাকার বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে তাকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।

ছোট থেকেই আউটডোর খেলার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল হামিরার। তবে তাকে সবচেয়ে বেশি টানত ফুটবল। গুসকরা মহিলা ফুটবল দলে তিনি গোলরক্ষক ছিলেন। তার অসাধারণ ‘ফিটনেস’ দেখে কোচ বিনয় রায় তাকে দলের প্রয়োজনে বিভিন্ন পজিশনে ব্যবহার করেছেন। হামিরা সফলও হয়। বিভিন্ন কারণে মহিলা ফুটবল টিম ভেঙে গেলে কোচ বিনয় রায় তাকে ফুটবল খেলা পরিচালনা অর্থাৎ রেফারির ভূমিকা পালন করার পরামর্শ দেন। সেই শুরু।

শারীরশিক্ষা বিষয়ে স্নাতক হামিরার রেফারি সংক্রান্ত বিষয়ে একটা প্রাথমিক ধারণা ছিল। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করে একদিন কখনো মুখে বাঁশি অথবা হাতে পতাকা নিয়ে কলকাতা ময়দান সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করতে নেমে পড়েন। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা তাকে সাফল্য এনে দেয়। তারই ফলশ্রুতি হলো শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার। ইতিমধ্যে মুখে বাঁশি অথবা হাতে পতাকা নিয়ে দেড় শতাধিক ম্যাচ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে জমা পড়ে গেছে।

রেফারি অথবা সহকারি রেফারি যাইহোক না কেন ফুটবলের মত দ্রুত গতির খেলায় দরকার ফিটনেস ও দম। নাহলে ফুটবলারদের গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাবেনা। খেলোয়ার হিসাবে তার যে ফিটনেস ছিল সেটাকে পরিমার্জন করার জন্য আজও হামিরা নিয়মিত জিম সহ নানান শারীরিক কসরত করে চলেন। দম বাড়ানোর জন্য রাস্তায় তাকে ছুটতে দেখা যায়।

ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনে যেমন কঠোর হতে হয় তেমনি হাসিমুখে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। এই দুটি গুণই হামিরার মধ্যে দেখা যায়। তাইতো ‘বেয়াদপ’ ফুটবলারদের কার্ড দেখাতে তিনি যেমন দ্বিধা করেননা তেমনি অনেক সময় কার্ড না দেখিয়েও ম্যাচের রাশ নিজের হাতে রাখেন।

হামিরা কৃতজ্ঞ মা, বাবা, দাদা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পাশাপাশি এলাকাবাসীর। প্রত্যেকেই তাকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন।

এলাকাবাসীর স্বপ্ন একদিন তাদের পাশের বাড়ির মেয়েটা মুখে বাঁশি নিয়ে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ ময়দানে দাপটের সঙ্গে ম্যাচ পরিচালনা করবে। মাঠের মধ্যে বিশ্বের নামীদামি ফুটবলাররা তাকে সমীহ করবে। প্রসঙ্গটা তুলতেই চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে হামিরার। সবার ও নিজের স্বপ্ন পূরণে তাকে দৃঢ় লাগে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments