জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান-: জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে গাড়ির সংখ্যা। প্রকৃতির নিয়মে বাড়ছেনা রাস্তার পরিমাণ। ভিড়ের চাপে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে। ওদিকে অকারণে বেপরোয়া গতির খেলায় মেতে উঠছে একদল গাড়ির চালক। মাঝে মাঝে তাদের একাংশ মাদক দ্রব্য সেবন করে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছে। পিকনিক বা ধর্মীয় উৎসবের সময় যুব সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে এই প্রবণতা যেন বেড়ে যায়। হাসতে হাসতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়া ছেলেটা ‘ডেডবডি’ হয়ে বাড়ি ফেরে। মুহূর্তের মধ্যে আনন্দময় পরিবেশে নেমে আসে বিষাদের ছায়া।
দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাজ্যের ট্রাফিক গার্ডের আধিকারিকরা। দুর্ঘটনার সংখ্যা কমলেও এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে এক অভিনব উদ্যোগ নিলেন আউসগ্রামের সুশীলার পাল দম্পতি – চঞ্চল পাল ও বৈশাখী পাল।

গতবছর ২৫ শে ডিসেম্বর সন্ধ্যা নাগাদ এক ভয়ংকর গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন বৈশাখী দেবীর ভাই অঞ্জন প্রামাণিক। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষপর্যন্ত বন্ধুদের প্রিয় অঞ্জন ওরফে গাড্ডু হেরে যায়। ভাইয়ের মৃত্যুতে বৈশাখী দেবী মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। বেপরোয়া গাড়ির চালকদের সতর্ক করার ভাবনা তার মাথায় চেপে বসে। একজন গৃহবধূ হিসাবে প্রত্যক্ষভাবে তার পক্ষে বেশি কিছু করা সম্ভব নাহলেও নিজের ভাবনার কথা স্বামী চঞ্চলের কাছে প্রকাশ করেন। সম্বন্ধীকে হারিয়ে চঞ্চল বাবুও মানসিক দিক দিয়ে বিপর্যস্ত ছিলেন। স্ত্রীর ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন সম্বন্ধীর বন্ধুদের সঙ্গে। প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে ওরাও ভেঙে পড়েছিল।

গাড্ডুর বন্ধু অয়ন, জয়দীপ, মিঠুন, গোবিন্দ, তপন, শুভ, রোহন, হাবল, শুভঙ্কর, অক্ষয়, দেবাঙ্কুর প্রমুখদের উদ্যোগে এবং পাল দম্পতির সক্রিয় সহযোগিতায় গুসকরা-মানকর রাজ্য সড়কের দু’পাশে দীগনগর-২ নং পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় চার কিমি. রাস্তা জুড়ে বসানো হয় সতর্কীকরণ বোর্ড। সেখানে শোভা পাচ্ছে বেশ কয়েকটি সতর্কীকরণ বার্তা এবং গাড্ডুর মুখ।
বৈশাখী দেবী বললেন, আমি আমার ভাইকে কখনোই ফিরে পাবনা ঠিকই, কিন্তু কেউ যাতে আমার মত ভ্রাতৃহারা নাহয় তারজন্য আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমার বিশ্বাস এই অসহায় দিদির মুখটা মনে রেখে আমার অন্য ভাইরা সংযতভাবে গাড়ি চালাবে। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বৈশাখী দেবী।
গাড্ডুর বন্ধু দেবাঙ্কুর বললেন, সত্যিই এটা এক অভিনব ভাবনা। এইরাস্তা ধরে যারা যাতায়াত করে গাড্ডুর মুখটা দেখে তাদের একজনও যদি সতর্ক হয় তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় পাওনা। আমরা মনে করি এই সতর্কীকরণ বোর্ডের বার্তা লোকমুখে রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।





