সংবাদদাতা, মেমারিঃ- ২০১৯ এর শিক্ষক দিবসে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে শিক্ষারত্ন পুরষ্কার পেয়েছিলেন, আর ২০২২ র শিক্ষক দিবসের পক্ষকাল আগেই অর্থাভাবে মেমারির বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলেন কলকাতার নামী ডেভিড হেয়ার স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ড: সুনীল দাস। বুধবার তার দেহের ময়নাতদন্ত হল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
ঐ শিক্ষকের আর্থিক অনটনের জেরে আত্মহত্যা করার ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হল মেমারীতে। মঙ্গলবার বিকালে মেমারী থানার দেবীপুর আলিপুর রাজকলোনীর বাসিন্দা কলকাতার ডেভিড হেয়ার স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ড. সুনীল কুমার দাস (৬৩) গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আর এই ঘটনার পর শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। মৃতের স্ত্রী সাধনা দাস জানিয়েছেন, সুনীলবাবু অবসর নেওয়ার পর তাঁর পেনশন চালু হয়নি। পেনশনের জন্য দফায় দফায় কলকাতার বিকাশ ভবন এবং ডেভিড হেয়ার স্কুলে গেছেন। সবাই জানিয়েছে হয়ে যাবে, কিন্তু গত ৩ বছর ধরে তিনি পেনশনের জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আর এর জেরেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে শুরু করেন। গত কয়েকদিন ধরেই মনমরা হয়ে ছিলেন। সাধনাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। ছেলে সদ্য পিএইচডি করেছেন। দুই মেয়ের বিয়েও হয়ে গেছে। বাড়িতে রোজগেরে বলতে একমাত্র সুনীলবাবুই ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই পেনশন চালু না হওয়ায় আর্থিক কষ্টে ছিলেন। কিন্তু তাঁর এই কষ্ট তিনি কাউকেই কোনোদিন বলেননি। সাধনাদেবী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে যথারীতি তিনি বাজার যান। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে অন্যান্যদিন তিনি তাঁর একতলাতেই বিশ্রাম নিতে যান। কিন্তু এদিন তিনি দোতলায় ছেলের ঘরে শুতে যান। বিকাল প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ চা করে তাঁকে ডাকতে যান সাধনাদেবী। বিস্তর ডাকাডাকি করেও তাঁর সাড়া না পাওয়ায় এবং ভেতর থেকে জানালা, দরজা বন্ধ থাকায় তিনি পাশেই সুনীলবাবুর দাদা শংকর দাসকে ডাকেন। ছুটে আসেন পাড়া প্রতিবেশীরা। ঘটনার সময় ছেলে বাড়িতে ছিলেন না, গিয়েছিলেন পিসির বাড়ি। এরপর দরজা ভেঙে তাঁরা ভেতরে গিয়ে দেখেন নাইলনের দড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতি হয়েছেন রাজ্য সরকারের শিক্ষারত্ন প্রাপক প্রধান শিক্ষক ড. সুনীল কুমার দাস। এই ঘটনায় গোটা এলাকা জুড়েই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শংকরবাবু জানিয়েছেন, পেনশন চালু না হওয়ায় তাঁর ভাই ভীষণরকম কষ্টে ছিলেন। এই ঘটনা তারই জের। আত্মীয় নীরদবরণ দাস জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী সুনীলবাবুকে শিক্ষারত্ন পুরষ্কারে ভূষিত করেন। এছাড়াও তিনি বহু পুরষ্কার পেয়েছেন শিক্ষক হিসাবে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই তিনি অবসর নেন ডেভিড হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে। ওই স্কুলেই তিনি প্রায় ২০ বছর প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।