সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- আজ ২৮ শে মার্চ, বাসন্তী পুজোর মহা সপ্তমী। এই মহা সপ্তমীর দিন জেনে নিই বাসন্তী পুজাকেই কেন বাঙালির আদি পুজো বলা হয় আর বাসন্তী পুজোর ইতিহাস কী? এখন যেমন শরৎ কালে দেবী দুর্গার পুজো হয় প্রাচীনকালে কিন্তু শরৎকালে দেবী দুর্গার পুজো হতো না। তখন এই বাসন্তী পুজোই ছিল আসল দুর্গাপুজো। শরৎকালের রামচন্দ্র রাবন বধের নিমিত্ত দেবীর অকালবোধন করে ছিলেন। পরবর্তীকালে অকালবোধনের এই দুর্গা পুজোই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হতে থাকে। বর্তমানে যতই শরৎকালে আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষে দেবীর দুর্গাপূজা সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হোক না কেন বাঙ্গালির আদি দুর্গাপূজা কিন্তু চৈত্র মাসেই।
প্রাচীনকালে, রাজা সুরথ এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। পুরাণে লেখা আছে যে, সমাধি নামের একজন বৈশ্যের সাথে রাজা সুরথ একবার বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে গিয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। এটিই পরবর্তীতে বাসন্তী পুজো নামে পরিচিত হয়।
সুরথ ছিলেন একজন যোগ্য সুশাসক ও যোদ্ধা। তিনি কখনো কোনও যুদ্ধে পরাজিত হননি। কিন্তু তার প্রতিবেশী রাজ্য একবার তাঁকে আক্রমণ করে এবং সুরথ পরাজিত হন। তার পরাজয়ের সুযোগ নিয়ে তার সভাসদরাও লুটপাট চালাতে শুরু করেন। কাছের মানুষদের কাছে এমন আচরণ পেয়ে কষ্ট পান রাজা। তিনি বনে বনে ঘুরতে থাকেন এরপর একসময় ঋষির আশ্রমে পৌঁছান। ঋষি তাঁকে সেখানেই থাকতে বললেন কিন্তু রাজা এতেও মনের শান্তি পান না। এইসময় সমাধির সাথে দেখা হয় তার। সমাধি তাকে বলেন,সমাধির স্ত্রী ও ছেলে সমাধিকেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও সমাধি এখনো বৌ-ছেলের ভালোমন্দ ভাবছেন। একে অপরের কথা শোনার পর রাজা ও সমাধি দুজনেই ভাবলেন,তারা একই পথের পথিক। যাদের কারণে তারা সব হারিয়েছেন, তাদের ভালোই তারা ভাবছেন। ঋষিকে তাদের মনের অবস্থার কথা বলতেই ঋষি বললেন সবই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর রাজা ও সমাধি মহামায়া কে এবং তার কাহিনী ও মাহাত্ম্য জানতে চান। ঋষি তখন মহামায়ার কাহিনি বর্ণনা করেন ও ঋষির উপদেশেই রাজা সুরথ কঠিন তপস্যা শুরু করেন। পরবর্তী কালে দেবী মহামায়ার আশীর্বাদ পেতেই বসন্ত কালের শুক্ল পক্ষে রাজা পুজো শুরু করেন। সেই থেকে দুর্গা পুজো বসন্ত কালে হয়। পরবর্তীকালে রাবণ বধের সময় রামচন্দ্র শরৎ কালে অকালবোধন করেন।
বাসন্তী পুজোর নির্ঘন্ট-
২৯ শে মার্চ মহা অষ্টমী,
৩০ শে মার্চ মহানবমী ও
৩১ শে মার্চ বিজয়া দশমী।