eaibanglai
Homeএই বাংলায়চক্ষুব্যাংক গড়ে উঠল হুগলির জাঙ্গিপাড়ায়

চক্ষুব্যাংক গড়ে উঠল হুগলির জাঙ্গিপাড়ায়

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,হুগলিঃ- জন্মগত চোখের ত্রুটি নিয়ে অনেকেই জন্ম গ্রহণ করেন। অনেকে কর্নিয়ার রোগ, চোখে ছানি বা অন্য কোনো কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ফলে পৃথিবীর রূপ বা প্রিয়জনের মুখ দেখার আগেই অনেকেই একরাশ আফসোস নিয়ে না-ফেরার দেশে চলে যান। অথচ সময়মতো কর্ণিয়া পেলে বহু মানুষ হয়তো পৃথিবীর রূপ যেমন উপভোগ করতে পারতেন তেমনি মনভরে প্রিয়জনের মুখ দর্শন করতে পারতেন। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির চক্ষুর কর্ণিয়া অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু প্রচারের অভাব ও ধর্মীয় কুসংস্কারের জন্য অনেক সময় মানুষ চক্ষুদান করতে ভয় পায়। অনেকেই আবার ইচ্ছে থাকলেও চক্ষুদান করার সুযোগ পায়না।

এই সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে ভারত সরকারের স্বাস্থ্যদপ্তর জাতীয় অন্ধত্ব নিবারণের জন্য প্রতিবছর পক্ষকাল ব্যাপী মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৫ শে আগষ্ট থেকে ৮ ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক প্রচার কর্মসূচি গ্রহণ করে। মৃত্যুর পর চক্ষুদানের অঙ্গীকারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হলো এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

হুগলির জাঙ্গিপাড়া থানার ‘রাজবলহাট কালচারাল সার্কেল’-এর উদ্যোগে গত ২৫ শে আগষ্ট ‘৩৮ তম জাতীয় চক্ষুদান পক্ষ দিবস’ উপলক্ষ্যে রাজবলহাটের সুপারী বাগানে কালচারাল সার্কেলের কমিউনিটি হলে মরণোত্তর কর্ণিয়া সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি ‘চক্ষুব্যাংক’ গড়ে ওঠে। উদ্যোক্তাদের দাবি শুধু এই রাজ্য নয় দেশের বুকে সম্ভবত এই প্রথম কোনো পঞ্চায়েত এলাকায় এই ধরনের একটি ‘ব্যাঙ্ক’ গড়ে উঠল। তাদের আশা এরফলে বহু মানুষ মরণোত্তর চক্ষুদান করার জন্য আগ্রহী হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রীরামপুর সেবাকেন্দ্র ও চক্ষু ব্যাঙ্কের সম্পাদক দিলীপ চ্যাটার্জ্জী, সদস্য কামাখ্যা মজুমদার, স্বদেশ আই ফাউন্ডেশনের ডাঃ কল্যান পাত্র, রাজবলহাট ২নং গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তুষারকান্তি রক্ষিত এবং এই সংস্থার উদ্যোগে যে দু’জন দিনের আলো দেখার সুযোগ পেয়েছেন সেই নমিতা নেবু ও ভক্তি মাদারি এবং সংস্থার সদস্য তথা মরণোত্তর চক্ষুসংগ্রহ টেকনিশিয়ান সুরজিৎ শীল সহ আরও অনেকেই। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ দেখা যায় এবং বেশ কিছু ব্যক্তি মরণোত্তর চক্ষুদান করার বিষয়ে মৌখিক অঙ্গীকার করেন।

প্রসঙ্গত এই সংস্থাটি ২০০৭ সাল থেকে কাজ শুরু করে এখনো পর্যন্ত পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ জোড়া চক্ষু সংগ্রহ করেছে এবং সেগুলি কলকাতা মেডিকেল কলেজের আর.আই.ও-তে জমা দিয়েছে। এরফলে তাদের হাত ধরে অনেকেই হারিয়ে যাওয়া দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে।

বর্ধমানের বিশিষ্ট সমাজসেবী দিব্যেন্দু দাস বললেন – সঠিক প্রচারের জন্য আজ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন হচ্ছে। সঠিক প্রচার করলে ও পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে কুসংস্কার ও ভয় দূর করে বহু মানুষ চক্ষু সহ বিভিন্ন অঙ্গদান করতে আগ্রহী হবে। দিনের শেষে লাভবান হবে একদল হতভাগ্য মানুষ।

অন্যদিকে সুরজিৎ বাবু বললেন – এই রাজ্যে প্রতিবছর যতজন মারা যাচ্ছেন সেই তুলনায় মরণোত্তর চক্ষু বা অঙ্গদানের হার যথেষ্ট কম। এর প্রধান কারণ যথাযথ প্রচারের অভাব। বছরের নির্দিষ্ট সময়ের পরিবর্তে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সারাবছর পঞ্চায়েত ভিত্তিক প্রচার করতে হবে। প্রতিটি ব্লক হাসপাতালে চক্ষুদানের অঙ্গীকার পত্রে সাক্ষর করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই হয়তো একদিন বহু মানুষ চক্ষুদান করার বিষয়ে আগ্রহী হবে এবং সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments