নীহারিকা মুখার্জ্জী চ্যাটার্জ্জী, শেওড়াফুলি, হুগলি -: প্রাক্ স্বাধীনতা যুগে বিপ্লবীদের মানসিক, নৈতিক ও চারিত্রিক বিকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছে বঙ্গীয় প্রাদেশিক জাতীয় ক্রীড়া ও শক্তি সংঘ। দেশ স্বাধীন হলেও আজও তারা সেই কাজ সফলতার সঙ্গে করে চলেছে।
প্রতিবছরের মত এবছরও সংঘের উদ্যোগে হুগলি জেলার শেওড়াফুলি-তারকেশ্বর রাজ্য সড়কের পাশে অবস্থিত নসিবপুর হাইস্কুল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হলো সপ্তাহব্যাপী ৬৯ তম রাজ্য শারীর শিক্ষা শিবির। এবারের শিবিরটি হুগলি জেলার অন্যতম প্রধান সংগঠক প্রয়াত সেনানী রণলাল ঘোষালের নামে উৎসর্গকৃত।
শিবিরে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন ডেপুটি ক্যাম্প কমান্ডেন্ট (এডমিনিস্ট্রেশন) তথা ক্যাম্প সম্পাদিকা মন্দিরা মুখার্জ্জী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নসিবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যদেব দে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি বিপনন মন্ত্রী বেচারাম মান্না, সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি টুম্পা ঘোষ, হরিপাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুচন্দ্রা ঢোলে, নসিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপালি সাঁতরা, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মদন মোহন ঘোষ, হিমাদ্রি কেমিকেলসের ডাইরেক্টর শান্তিময় দে, বাহিরখন্ড পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে এদের বরণ করা হয়।
এরপর পতাকা উত্তোলন করেন ক্যাম্প কমান্ডেন্ট তৃপ্তি প্রামাণিক। পতাকা উত্তোলনের পর শুরু হয় পরিদর্শন সেরিমোনিয়াল মার্চপাস্ট। ৪০০ জন ক্যাম্পার্স, তাদের প্রশিক্ষক, সেনানী ও কর্মীবৃন্দরা এই মার্চপাস্টে অংশগ্রহণ করেন।
সংঘের উদ্দেশ্য ও কর্ম ব্যাখ্যা করেন সংঘের রাজ্য সম্পাদিকা তৃপ্তি প্রামাণিক। পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের সংকল্প বাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শান্তিময় দে, বেচারাম মান্না ও সত্যদেব দে। প্রশিক্ষক তথা সংঘের যুগ্ম সম্পাদক সুশান্ত বারিকের নেতৃত্বে পরিবেশিত হয়
ভারতীয়ম। এরপরই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় সংঘের পতাকা উত্তোলন ও বিউগল ধ্বনির মধ্যে দিয়ে শিবির শুরু হয়। পৌনে ছ’টায় শুরু হয় প্রার্থনা সভা ও সমষ্টি ব্যায়াম। এরপর শিবিরের শিক্ষার্থীরা প্যারেডের ক্লাস, বিশেষ প্রশিক্ষণ, দেশাত্মবোধক সংগীত এর ক্লাস, সামাজিক শিক্ষা ও প্রাথমিক প্রতিবিধানের ক্লাসে অংশগ্রহণ করে। আহারাদির শেষে সাময়িক বিশ্রামের পর দুপুরে দুটো থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত চলে বিশেষ প্রশিক্ষণ ক্লাস। এর মধ্যে আছে ব্রতচারী, খো খো, কবাডি, টেনিকোয়েট, অ্যাথলেটিক্স, জিমনাস্টিকস, ক্যারাটে, লোকনৃত্য, ট্রাফিক, যোগা, স্পেশাল প্যারেড ইত্যাদি। পরে পতাকা অবনমন করা হয়।শিক্ষার্থীদের জন্য সন্ধ্যা ছ’টায় ভারতীয়ম, সংগঠনের ক্লাস ও মজলিসের ব্যবস্থা থাকে। এরপর সেদিনের মত শিবির শেষ। সাতদিন ধরে একই কর্মসূচি অনুসরণ করা হয়। মন্দিরা দেবী বলেন, আমাদের শিবিরের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের মানসিক, নৈতিক ও চারিত্রিক বিকাশ ঘটানো। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভাল লাগে যখন শিক্ষার্থীরা সবকিছু ছেড়ে শিবিরে অংশগ্রহণ করে। শুরুতে আত্মীয়দের ছেড়ে থাকার জন্য এদের চোখ দিয়ে জল ঝরে। শেষে পরস্পরকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য আবারও জল ঝরে। তবে এইসময় এক নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে এরা বাড়ি ফিরে যায়।