সংগীতা চৌধুরীঃ- কথায় বলে ‘রোগ আর নেশা দুইই সর্বনাশা’,আসলে রোগ নেশা হল এমন দুটো জিনিস যা মানুষকে সর্বস্বান্ত করে তোলার জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে পৃথিবীতে যত রোগ আছে, তার মধ্যে সব থেকে কমন রোগ হল সুগার আর এই রোগটিই সবথেকে ভয়ঙ্কর। কারণ সুগার ধীরে ধীরে হার্ট, কিডনি ড্যামেজ করার সাথে সাথে চোখেরও ক্ষতি করে তাই প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এই রোগটিকে চিহ্নিত করা যায় এবং সতর্ক হয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে এই রোগটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু কীভাবে ডায়াবিটিস বা সুগারের প্রাথমিক স্তরগুলোকে চিহ্নিত করবেন ? এই বিষয়ে আমরা কথা বলেছি, SSKM র Dermatologist Dr তরুণ পাত্রের সাথে,ডাক্তারবাবুর কথায়,এখন পরিস্থিতি যেখানে পৌঁছেছে,তাতে বলা যায় যে,ভারত হচ্ছে পৃথিবীর ডায়াবেটিক ক্যাপিটাল, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমরা যদি প্রথমেই ডায়াবিটিসের লক্ষণগুলোকে চিহ্নিত করতে পারি,তাহলে এই রোগকে আটকানো সম্ভব হবে। এই রোগের কতগুলো লক্ষণ আছে, তাই সেই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই, মানুষের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারণ ১০০ জনের এই লক্ষণ থাকলে তার মধ্যে অন্তত ৪০ জনের পরবর্তীতে সুগার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লক্ষণগুলো কী কী ?
১। অ্যাক্যান্থসিস নিগ্রিক্যানস-
গায়ের চামড়া,গলা,বগলের নীচে চামড়া পুরু হচ্ছে আর তার সাথে কালো হচ্ছে-এরকমটা হলে সুগার হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সুগার টেস্ট করা উচিত।
২। স্কিন ট্যাগ/এক্রো কোর্ডন-
গলায় ,ঘাড়ে বা শরীরের কোনো স্থানে হঠাৎ আঁচিল হলে সেটি হতে পারে সুগারের পূর্ব লক্ষণ।
৩। জান্থেলেসমা – অনেকের দেখা যায় যে, চোখের কোনে একটা দাগ হচ্ছে,এদের মধ্যে যাদের কোলেস্টেরল লেভেল হাই আছে,সাথে তাদের সুগার ও চেক করা উচিত।
৪। ইনফেকশন – গায়ে হয়ত বিভিন্ন রকমের ইনফেকশন হচ্ছে,এই ইনফেকশন কিন্তু সুগারের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।
৫। ক্যান্ডিডাল ইনফেকশন-
পেনিস বা প্রস্রাবের জায়গায় বার বার ঘা হচ্ছে, মুখে ঘা হচ্ছে। এই ঘা কিন্তু মোটেই অবহেলা করা উচিত নয়।
৬। কার্বাঙ্কল- সুগার থেকে গায়ের বিভিন্ন অংশে ফোঁড়া হয়,তবে, একটা ফোঁড়ার চাইতেও অনেক গুলো মুখ যুক্ত ফোঁড়া অর্থাৎ কার্বাঙ্কল থাকলে সুগার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৭। ডায়াবেটিক স্টিফেনস- যাদের দীর্ঘদিন ধরে সুগার আছে, তাদের ক্ষেত্রে বলা হয় যে, একটি পরীক্ষা করলে সেটি বোঝা যায় সহজেই। যদি হাত দুটো প্রার্থনার মতো করতে বলা হয়,তাহলে দীর্ঘদিন ধরে যাদের সুগার রয়েছে,তাদের কড়ে আঙুল দুটো মেশে না।
৮। ডায়াবেটিক ডারমোপ্যাথি- পায়ের হাঁটুর নিচের দিকে সামনের অংশে ছোপ ছোপ দাগ থাকলে দীর্ঘ মেয়াদী সুগারের লক্ষন হতে সতর্ক হওয়া উচিত।
৯। ডায়বেটিক বুলা- হঠাৎ করে হয়ত গায়ে /পায়ে বড় ফোস্কা হলো,এটিকে অনেকেই অবহেলা করেন কিন্তু ত্বকের এই জাতীয় ইনফেকশন গুলো আনিয়ন্ত্রিত সুগারের লক্ষণ হয়ে থাকে।
১০। জেরোসিস-
স্কিন অত্যাধিক (ড্রাই )শুষ্ক হয়ে গেলে এটিও সুগারের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।
এই সকল লক্ষণ গুলো দেখা যাওয়ার পর যদি সুগার টেস্ট করে দেখেন রক্তে সুগারের টেন্ডেসি আছে, তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে কী করবেন ? এই প্রসঙ্গে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ-
১। সতর্ক হতে হবে ।
২। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
করতে হবে। মিষ্টি বা শর্করা জাতীয় খাবার কমাতে হবে।
৩। ব্যায়াম করতে হবে। ভারি ব্যায়াম করতে না পারলে
১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করতে পারেন, তাতেও উপকার হবে।