নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ– জাতীয় সড়ক নির্মানের নামে অবাধে চলছে অবৈধ পাথর বোঝাই ডাম্পার, লরি। ডিসিআরসি দুর অস্ত। না আছে চালান, না আছে পরিমানের পরিমাপ করা স্লিপ। একশ্রেণীর দুর্নীতিগ্রস্ত জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের প্রচ্ছন্ন মদতে চলছে অবৈধভাবে পাথর পাচারের রমরমা কারবার। রাজ্যের কোষাগার যখন অর্থসঙ্কটে ভুগছে, তখন অন্যদিকে দৈনিক কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে পাঁচামীর পাথর পাচার। একটি সুত্রে জানা গেছে, ৬ চাকার লরি- ডাম্পার ১০ টন, ১০ চাকার লরি -ডাম্পার ১৫ টন ও ১২ চাকার লরি ২০ টন পর্যন্ত পন্য বোঝাই করতে পারে। কিন্তু মুনাফার লোভে তার থেকে কয়েকগুন বেশী পাথার বোঝাই করে লরি ও ডাম্পার। প্রায় ৪৪-৫০ টন পর্যন্ত পাথর বোঝাই অবাধে যাতায়াত করছে। পাথরের ওপর কোন ঢাকা দেওয়ার ব্যাবস্থা নেই। ডাম্পারের অতিরিক্ত পাথর পড়ছে সড়কের ওপর। আর ওই পাথর থেকে দুর্ঘটনার শঙ্কাও রয়েছে। তেমনই বেহাল হয়ে পড়ছে সড়ক। খানাখন্দে ভর্তি হচ্ছে যেমন, তেমনই আবার রাস্তা বসে গিয়ে উচু ঢিপি হয়েছে মাঝে মধ্যে। বিপদজ্জনক দশায় পরিনত হচ্ছে সড়ক। আর প্রশ্ন এখানেই। সড়কের টেকসইয়ের জন্য ওভারলোডিং যানের ওপর নিষেধাজ্ঞা করা হয়। উল্টে ওই সড়কের ওপর দিয়ে সড়ক নির্মানের নাম নিয়ে অবাধে ওভারলোডিং পাথরবোঝাই ডাম্পারের আনাগোনা। ডাম্পারের সামনে ‘অন ডিউটি এনএইচ’ স্টিকার। পিছনে বেআইনীভাবে ওভারলোডিং পাথর।
ডাম্পারের সামনে বড় বড় স্টিকার সাটানো ‘অন ডিউটি এনএইচ’। গাড়ী সহজে জানান দেওয়ার জন্য স্টিকার বসানো রয়েছে, ‘বি’ – বোম্বে রোড ও ‘ডি’ – দিল্লী রোড। আর তাতেই যেন সব দোষ মুক্তি। মুলত পাথর বোঝাই গাড়ীর বৈধ কাগজ না থাকলে জরিমানা করা হয়। দেওয়া হয় ডিসিআরসি। তার জন্য ১০০ সিএফটি পিছু ৮০০ টাকা ধার্য হয়। ১০০ সিএফটি অর্থাৎ ৪.২ টন। তবে এসমস্ত ১২-১৬ চাকার ডাম্পার বেশীরভাগই প্রায় ৪৪-৫০ টনের ওপর লোডিং বলে অভিযোগ। দৈনিক ৬৫০-৭০০ লরি -ডাম্পার পাথর বোঝাই করে বেরিয়ে আসছে। হিসাব অনুযায়ী প্রায় ডাম্পার পিছু ৯-১০ হাজার টাকার রাজস্ব লোকসান। অভিযোগ, দৈনিক প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে পাঁচামীর পাথার পাচার। পরিবহন আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অবাধে চলছে ওভারলোডিং পাথর বোঝাই ডাম্পার। ২ নং জাতীয় সড়কের ওপর বুদবুদের জেকে নগর এলাকায় রয়েছে নাকা চেকপোষ্ট। বীরভুমের ইলামবাজারে রয়েছে সড়কের ওপর টোলপ্লাজা। নজরদারির জন্য সেখানে সিসিটিভিও বসানো আছে। তা হলে কিভাবে বৈধ চালান ছাড়া বেরিয়ে আসছে ওভারলোডিং পাথরবোঝাই ডাম্পার?
বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন,” রাজ্যের কোষাগারে টান পড়ছে। আর পাঁচামী থেকে কোনরকম রয়েলটি ছাড়া অবাধে পাথর লরি-ডাম্পারে পাচার হচ্ছে। তাতে দৈনিক পাঁচামী থেকে দৈনিক ৬৫০-৭০০ পাথর বোঝাই ডাম্পার লরি বেরোচ্ছে। কোনরকম রয়েলটি ছাড়া ওইসব পাথর বোঝাই গাড়ী রাস্তার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। তাতে রাজস্ব লোকসান হচ্ছে দৈনিক প্রায় কোটি টাকা। সবটাই ভাইপো ট্যাক্সে চলে যাচ্ছে। আর ভাইপোর পিসি টাকা নেই বলে নাটক করছে।”
অথচ রাজ্য সরকারের পরিবহন দপ্তর গত ১লা সেপ্টেম্বরেই ওভারলোডিং রুখতে একটি নয়া নির্দেশিকা জারি করে অতিরিক্ত পণ্য বহনের ওপর জরিমানার অংক দ্বিগুণ ঘোষণা করেছে। পরিবহন সচিব রাজেশ সিং এর বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে ১৯৮৮ সালের পরিবহন আইনের ১১৩ এবং ১১৪ নম্বর ধারা গুলি জোরদার ভাবে প্রয়োগ করে অভিযুক্ত গাড়িগুলির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা তো বটেই, প্রতি টন অতিরিক্ত পণ্য পিছু ২০০০ টাকা অতিরিক্ত জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। একই লরি বারবার অতিরিক্ত পণ্য সহ ধরা পড়লে তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং পারমিট চিরতরে বাতিল করতে হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলা আরটিও মৃন্ময় মজুমদার জানান,” চলতি অর্থ বছরে এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত জেলায় পরিবহন বিভাগে কর, জরিমানা সহ বিভিন্ন খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসে এনফোর্সমেন্টে সংগ্রহ হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। সড়কে নিয়মিত ওভারলোডিং গাড়ী ধরপাকড় হয়। ওভারলোডিং ধরাও পড়েছে। ওই রুটে ওভারলেডিংয়ের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কিভাবে সরকারি সংস্থার নাম নিয়ে বেআইনী ওভারলোডিং পাথরের গাড়ী চলতে পারে? সরকারি সংস্থার নাম নিয়ে কিভাবে চলছে বেআইনীভাবে পরিবহন? আরও প্রশ্ন, কিভাবে জেলা প্রশাসনের ভূমি রাজস্ব দপ্তরের নাকের ডগা দিয়ে পেরিয়ে অবৈধ পাথর বোঝাই লরি ডাম্পার অনায়সে চলে আসছে? তাও আবার গুরুত্বপুর্ন সড়কের ওপর দিয়ে? প্রশ্ন অনেক উত্তর নেই একটারও।