সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘রামপ্রসাদ’এ বিধবা দুর্গাকে বিয়ে করে জমিদার পুত্র কমলাকান্ত চট্টোপাধ্যায়। এই কমলাকান্ত চরিত্রটি অভিনয় করে সকলের মনে জায়গা করে নিয়েছেন অভিনেতা রাজা বিশ্বাস। রাজা বিশ্বাস কীভাবে অভিনয়ের জগতে এলেন সেই বিষয়ক সাক্ষাৎকার তিনি দিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি সঙ্গীতা চৌধুরীকে। অভিনেতা যখন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র তখনই বন্ধুদের জোরাজুরিতে একটি চ্যারিটি শো এর ড্যান্স করতে গিয়ে চোখে পড়ে যান সেখানকার কোরিওগ্রাফারের, তিনিই প্রথম রাজাকে প্রফেশনাল শো করার প্রস্তাব দেন আর এরপর অভিনেতা সাউথ কলকাতার একটি গ্রুপে প্রফেশনাল ড্যান্সার হিসেবে যোগ দেন। সেই শুরু, তারপর বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে কাজ করেন তিনি, মুম্বাই, দিল্লি, উড়িষ্যা থেকে শুরু করে ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই গিয়েছিলেন ড্যান্সের জন্য।
ড্যান্স দিয়ে কীভাবে শুরুটা করলেন?
রাজা, “ড্যান্সার হয়ে কাজ করতে করতে বীরেশ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি “লভ কানেকশন” এ চিনু মাস্টার জি এর সাথে কোরিয়োগ্রাফার এর কাজে এসিস্ট করার সুযোগ পাই। তারপর কখনো মুম্বাই কখনো গোয়া তে কোরিয়োগ্রাফি করতে গিয়েছি। আমার প্রথম ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হয়ে কাজ করা দেব শ্রাবন্তীর ছবি “দুজনে” দিয়ে। তারপর বেশ কিছু হিট সুপার হিট ছবিতে কাজ করেছি। শেষ কাজ ও “দেব” দার ছবি “লাভ এক্সপ্রেস” “ধিতান ধিতান ধিন তানা” গানে।”
প্রশ্ন: সানবাংলার সাথীতে বস্তির ছেলে রাজার চরিত্র, হরগৌরী পাইসে ভিক্টরের মতো একটা নেগেটিভ চরিত্রের পরে কমলাকান্তর মত একটা চরিত্র যাকে সবাই বলছে ক্যাবলাকান্ত! এটা করতে অসুবিধা হয়নি?
রাজা: আসলে থিয়েটারে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিলো বলে অসুবিধাটা হয় নি।
প্রশ্ন: আপনি থিয়েটারেও কাজ করেছেন?
হ্যাঁ আমার প্রথম থিয়েটারের কাজ ২০১২ তে পথনাটক দিয়ে,তারপর ২০১৩ তে অভিনেত্রী মিসকা হালীম এর হাত ধরে চন্দন সেন আর শান্তিলাল মুখার্জী’র দল “অশোক নগর নাট্যআনন” এ আসা। এখন বর্তমানে নিজেরা বন্ধুরা মিলে “বেলঘড়িয়া আলোক সন্ধানী” বলে নিজেদের একটি নাটকের দল(২০১৭) করেছি, এছাড়া আমার পরিবারে বাবা,কাকারাও থিয়েটার করেছেন।
প্রশ্ন:বড়পর্দাতে জিৎ কোয়েলের সাথে কাজ করারও তো সুযোগ হয়েছিল?
রাজা:হ্যাঁ , প্রথম সিনেমার কাজ বলতে গেলে ” জিৎ কোয়েল ” এর ছবি “সাত পাঁকে বাধা”, সেখানে রঞ্জিত মল্লিকের সাথে সিন ছিলো। যদিও একটা ওয়েটারের চরিত্র,তবে নাচ করতে গিয়ে আমি বরাত জোরে অফার পেয়েছিলাম,তাই আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। আর সেভাবে বড় চরিত্র বলতে গেলে “রং রুট” এ কাজ করেছি। এছাড়া ” তবু অপরিচিত”, “টিকি টাকা” তেও কাজ করেছি।
প্রশ্ন:কমলাকান্ত চরিত্র নিয়ে কী বলবেন?
রাজা:এই চরিত্রটা যেমন মাতৃভক্ত তেমনি সহজ সরল একটা চরিত্র। আপনি তো বললেন লোকে ক্যাবলাকান্ত বলে (হাসি), চেষ্টা করেছি করার, কতটা পেরেছি দর্শক বলবেন।
প্রশ্ন: এর আগেও তো ছোটো পর্দায় আপনি আধ্যাত্মিক চরিত্রে কাজ করেছেন?
রাজা: হ্যাঁ, এর আগে আকাশ আটের জগৎ জননী মা সারদাতেও ঠাকুরের সন্ন্যাসী ভক্ত সারদা প্রসন্ন চরিত্রটা করেছিলাম।
প্রশ্ন: রামপ্রসাদে সব্যসাচী চৌধুরীর সাথে কাজ করতে কেমন লাগলো?
রাজা: দেখুন উনাকে বাইরে থেকে দেখতে যতটা ভালো লাগে উনি ভিতরে মানুষ হিসেবে ঠিক ততটাই ভালো। এতোটুকু অহং নেই উনার মধ্যে, আমি কমলাকান্তের চরিত্রটা করছি জেনে নিজে এসে আমার সাথে কথা বলেন, সিন প্র্যাক্টিস করেন। এত বড় মাপের অভিনেতা আর কত বিনয়ী -দেখলে অবাক হতে হয়।
ছোট পর্দায় তো শ্বেত পাথরের থালা থেকে শুরু করে সাথী অনেক সিরিয়ালেই কাজ করেছেন, শুরুটা কোথা দিয়ে হয়েছিল?
রাজা:প্রথম শুরু আকাশ বাংলার পুলিশ ফাইল দিয়ে। তারপর তোমায় আমায় মিলে, শেষ থেকে শুরু, ইচ্ছে নদী, মা সারদা, দীপাবলীর সাতকাহন, উমা, পিলু, অপরাজিতা অপু,তে ছোট চরিত্র অনেক করেছি।
প্রশ্ন: আপনার মাথায় তো কোনো গডফাদারের হাত ছিল না ইন্ডাস্ট্রিতে এসে স্ট্রাগল করতে হয়েছে?
রাজা: স্ট্রাগল আমি এখনো অবধি করছি, ছোট ছোট চরিত্রে যখন কাজ করতাম, মা তখন বলতেন,কবে তোকে ভালো বড় চরিত্রে দেখবো, সাথীতে রাজার চরিত্রটা যখন পেলাম, তখন মা আর বেঁচে নেই। আর স্ট্রাগেল বলছেন, একটা ভাল কাজ পাওয়ার জন্য কতোবার কতো জায়গায় দেখা করতে গিয়ে অসম্মানিত হয়েছি, চোখের সামনে নিজের ছবি ডাস্টবিনে পরে থাকতে দেখেছি। একবার এক শুটিংয়ের ফ্লোরে একজন ডিরেক্টর এর সাথে দেখা করতে যাই, “ভারতলক্ষী স্টুডিও’তে”, সেখানে একজন টেকনেসিয়ান খুব বাজে ভাষায় আমাকে গালাগালি করেন এরপর ডিরেক্টরকে বলা হলে তিনি সবকিছু শুনেও এর কোন প্রতিবাদ করেন নি, এইভাবেই কতো জুতো ক্ষয় হলো, পকেটে টাকা নেই বলে ৪০/৫০ কি মি রাস্তা পায়ে হেঁটেছি।
তবে এই প্রসঙ্গে একটা কথা না বললেই নয়, ‘তবু অপরিচিত’তে যখন কাজ করতে যাই, তখন একবার অপমানিত হই,এক টেকনিশিয়ান তুই-তোকারি করেন কিন্তু সেই সময় পাওলি দি আমার হয়ে প্রতিবাদ করে বলেন,স্যার বলুন বা নাম ধরে ডাকুন বা আপনি বলুন কিন্তু তুই তোকারি করে আর্টিস্টকে অসম্মান করবেন না।
প্রশ্ন: আজ আপনাকে যে কিছু মানুষ চেনে তার পিছনে কাদের অবদান?
রাজা: সবার প্রথমে তো আমি আমার মা বাবার কাছে কৃতজ্ঞ,তারপর সেই কোরিগ্রাফার বন্ধু সুশান্ত,যে না থাকলে হয়তো ড্যান্স ইন্ডাস্ট্রি বা অভিনয় জগতে আসা হতো না। ধন্যবাদ জানাই মিশকা হালীম কে যার জন্য চন্দন সেনে মতো গুরু পেয়েছি আর শান্তিলাল মুখার্জী, পঞ্চানন ব্যানার্জী, নন্দ দুলাল ত্রিপাঠি, বাসুদেব সাহা এনাদের থেকে প্রতি নিয়ত শিখতাম। ধন্যবাদ জানাই নৃত্য বিতান এর সঞ্চয়ীতা দিদি আর অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার এর প্রবীর গুহ কে, যাদের জন্য আমি ” ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা ” তে পারফরম্যান্স করতে পেরেছি। এছাড়া সুদীপ পাল আমায় “সাথী”তে সেকেন্ড লিড চরিত্রটি দিয়েছেন,সুরিন্দার ফিল্মস ও নৈরিতা দত্ত ও স্টার জলসা যারা আমাকে রামপ্রসাদে কমলাকান্তের চরিত্রটি দিয়েছেন তাদের সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।
এছাড়া যে সকল ডিরেক্টর আর কলাকুশলী দের সাথে কাজ করেছি,যে সমাজের থেকে প্রতিনিয়ত শিখেছি সেই প্রতিটি মানুষকেই আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই।