eaibanglai
Homeএই বাংলায়নগর নিগমের এক নাগর মাঝিই কি নাটের গুরু দুর্গাপুরে ?

নগর নিগমের এক নাগর মাঝিই কি নাটের গুরু দুর্গাপুরে ?

নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: সেই লাল মাঝি এখন কুর্সিতে সবুজ ফেবিকুইক লাগিয়ে অবসরের পরেও চেয়ার দখল করে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন নগর নিয়মে।

সবরকম ‘ম’ তেই সরগরম মাঝিবাবুর রঙ্গীন দুনিয়া, যার খেসারত দিতে দিতে খালি হয়ে যাচ্ছে নগর নিগমের ভাঁড়ার ঘর, বছরের পর বছর।

দুর্গাপুর নগর নিগমের কিছু দপ্তর যে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের আঁতুড় ঘর, তা নিয়ে বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। দুর্গাপুর নগর নিগমের একাধিক কাজকর্মে তা প্রমাণও মিলেছে বিগত তিন বছরে। কর্মী নিয়োগ, জল প্রকল্প, রাস্তাঘাটের কাজ, গাড়ী আর গাড়ী সরানোর গ্যারেজের বরাত, ট্রেড লাইসেন্সের টাকা লোপাট, টোল ট্যাক্স নিয়ে স্বজনপোষণ সহ একাধিক অভিযোগে বিদ্ধ দুর্গাপুর নগর নিগম। “অভিযোগের পাহাড় জমেছে পুর প্রশাসকের আড়ালে শহরের নয়া জমিদার নিয়োগের পর। কোটি কোটি টাকার লুঠ চলছে বুকফুলিয়ে। টাকার ভাগ কি ওপর মহলেও যায় ?” – প্রশ্ন তুলছেন বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘরুই। প্রায় একই অভিযোগ সিপিএমের।

এতসবের পরেও নির্বাচন সঠিক সময়ে না করিয়ে ‘বোর্ড অফ এডমিনিস্ট্রেটর’ দিয়ে বছরের পর বছর পৌর নিগম চালানোর যে ‘ধান্দাবাজি’ তা কি শুধু সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপুরের নাগরিকদের পরিষেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে, নাকি এর পিছনেও রয়েছে অন্য কোন গোপন রহস্য ?

২০১২ সালে দুর্গাপুর পৌরনিগমের কর্তৃত্ব চলে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। যদিও ২০১৭’র ভোটে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করা নিয়ে বিরোধীদের বহু অভিযোগ রয়েছে গাজোয়ারী করার। গায়ের জোরে, পেশি আস্ফালনে ভোট হয়েছিল, বলে অভিযোগ বিরোধী পক্ষের। কার্যত এক কথায় বলতে গেলে তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বারা পরিচালিত এই পৌর নিগম এখন দুর্নীতির আঁতুড়ঘরেই পরিণত হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। দুর্গাপুর নগর নিগমের কাজকর্মের হালহকিকত এমনই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ‘মোটা টাকা ঘুষ দাও কাজ নাও’ – এই কথাই এখন সর্বত্র প্রচলিত। কিন্তু প্রশ্ন হল – তৃণমূল কংগ্রেসের যে সকল কাউন্সিলর বা বোর্ড মেম্বাররা রয়েছেন তারা কি নগর নিগমের কাজে সিদ্ধহস্ত নাকি তাদেরকে পরিচালনা করার পেছনে রয়েছে বাম আমল থেকে ফেবিকুইক লাগিয়ে চেয়ারে বসে থাকা নগর নিগমেরই এক প্রাক্তন কর্মী, আর আরেক উড়ে এসে জুড়ে বসা, গভীর রাত পর্যন্ত ঠিকাদারদের সাথে নিগমের অফিসে বসেই সুরাপান করা ইঞ্জিনিয়ার ? সেই বিশ্বাসের বিশ্বাসঘাতকতায় কি ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে নগর নিগমের রাজকোষ ?

একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দলের অভিযোগ – তৃণমূল কংগ্রেস নিয়োজিত নগর নিগমের প্রশাসক বোর্ডের কোনো সদস্যরই ঠিকঠাক পৌর আইন সম্বন্ধে জ্ঞান নেই। তাই বাম আমল থেকে ছড়ি ঘোরানো এক দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিক কে বারবার তার অবসরের পরেও এক্সটেনশন দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই দূর্গাপুর নগর নিগমের নামে একাধিক দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে কলকাতা উচ্চ আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে, বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয় – রাজ্য সরকারের মিউনিসিপাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম সহ দপ্তরের প্রধান সচিবের কাছেও ডিএমসি নিয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু, স্রেফ ওই পর্যন্তই। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, “মোহনলাল মাঝি নামের এক প্ল্যানিং সেকশনের আধিকারীককে বারবার পাঁচবার তার অবসরের পর এক্সটেনশন দেওয়ার পেছনেও রয়েছে আসল রহস্য।” ওই আধিকারিক ২০২১ সালে অবসর নেওয়ার পর তাকে আবার প্রথমে এক বছর তারপর আবারো পরপর ছ মাস ছ মাস করে এখনো অব্দি চাকরিতে এক্সটেনশন দিয়ে ওই পদে বসিয়ে রাখা হয়েছে নাকি লুঠের ঠাই ঠিকানার হদিশ পেতে। বিরোধীদের অভিযোগ বাম আমল থেকেই মোহনলাল মাঝির নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের। সবরকম চর্বচোস্য তার অতি আদরের বস্তু। নির্মাণকাজের ‘খৈনি টেপা এক ঠিকা মেঝেনেকেও’ একান্তে হোটেলের ঘরে তুলেছিলেন নেশায় চুর এক অফিসার মাঝি, – ইনিই কি তিনি ? বর্তমান প্রশাসক বোর্ডের আধিকারিকরা কি তারই অঙ্গুলি হিলনের কাজ করছে ? তাই কি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত দুর্গাপুর নগর নিগমের এই বোর্ড ? এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের তাবোড় তাবোড় নেতাও মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন, কারণ দুর্নীতির জড় এতটাই নিচে পৌঁছেছে যে তা এখন তুলে ফেলা কার্যত নাকি অসম্ভব। তাই কি ওই আধিকারীকে দিয়ে নিজেদের অনৈতিক কাজকর্ম গুলি চালিয়ে যাওয়ার জন্যই আবারো তাকেই এক্সটেনশন দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রশ্ন – দুর্গাপুর নগর নিগমে কি আর কোন উপযুক্ত আধিকারিক নেই ওই মোহনলাল মাঝি কে ছাড়া ? কেন বারবার মোহনলাল মাঝিকে এক্সটেনশন দিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে প্ল্যানিং সেকশনের মাথায় বসিয়ে ? এই বিষয়ে দুর্গাপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তারা দুর্গাপুর তথা কলকাতা উচ্চ আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বিরোধীদের অভিযোগ এই মোহনলাল মাঝি নাকি হাতে কলমে পৌর বোর্ডের আধিকারিকদের শিখিয়ে দিচ্ছেন সরকারি সম্পত্তি কিভাবে লুট করা যায়, কোন কোন পথে টাকা রোজকার হবে, এবং কি কি আইনে তা বলবৎ হবে তাও হাতে-কলমে শিখিয়ে দিচ্ছেন এই উটকো আধিকারিক মোহনলাল মাঝি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। অভিযোগ যখন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা, তখন কেন দুর্গাপুর নগর নিগমের দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে নামছে না ? তাহলে কি কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিজেপির একশ্রেণীর দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতেই কি চলছে নির্লজ্জ লুঠের এই ধান্দার খেলা ? দুর্গাপুর পৌরনিগমের অলিন্দে কান পাতলেই শোনা যায় – নগর নিগমের আসল মাস্টার মাইন্ড এই মোহনলাল মাঝির কাজকর্মের খতিয়ান, তার একাধিক দুর্নীতিতে জেরবার দুর্গাপুর নগর নিগমের উপস্থিত প্রশাসক বোর্ড এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো অভিযোগই জানাইনি পুলিশের কাছে। তাহলে কি ওই মোহনলাল মাঝিই চালাচ্ছেন আসল দুর্নীতির সিন্ডিকেট ? যে পাঁচ নয়া জমিদার শহরজুড়ে সরকারি টাকায় ফুটানি করে বেড়াচ্ছেন, তারাও কি এই নগর নিগমের নাগর এই মাঝির হুকুমেই ওঠবস করেন, নাকি নিয়মিত বাটোয়ারার ভাগ পেয়ে থাকেন ?

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments