eaibanglai
Homeএই বাংলায়সাংবাদিক পেটানো 'শ্রী রামবাবু' কি তৃণমূলের সম্পদ ?

সাংবাদিক পেটানো ‘শ্রী রামবাবু’ কি তৃণমূলের সম্পদ ?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- গত কয়েকদিন আগে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ আধিকারিকদের শক্ত হাতে প্রশাসন পরিচালনার আদেশ দেন। কোন নেতার দাদাগিরি চলবে না, বিশেষ করে দুর্গাপুরের যারা যারা চাঁদা তুলছে তাদের হাতগুলো বন্ধ করতেও পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়ে ছিলেন। উক্ত ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে দলমত নির্বিশেষে কোন বাচ-বিচার না করে সমাজ বিরোধীদের গ্রেপ্তার করতে বলেছিলেন। কিন্তু মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যতই বলুন, একশ্রেণীর সমাজ বিরোধীরা তৃণমূল কংগ্রেসের নাম করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন বড় মাপের নেতা, মন্ত্রীর সাথে ছবি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে নিজেকে সমাজের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে প্রচার ও করছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া হুঁশিয়ারির পরেও দুর্গাপুরের স্বঘোষিত তৃণমূলের একনেতা তথা নিজেকে তপশিলি সেলের সর্বোচ্চ নেতা পরিচয় দেওয়া ‘শ্রী রামবাবু’ ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের দাদাগিরিতে অতিষ্ঠ শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা। উল্লেখ্যঃ দুর্গাপুরের মহকুমা আদালতের চত্বরে থাকা দুর্গাপুর প্রেস ক্লাবের প্রাঙ্গণের পাশেই রয়েছে খাবার হোটেল। মদ্যপ অবস্থায় ‘শ্রী রামবাবু’ ও তার দুই সাঙ্গোপাঙ্গ আদালত চত্বরের একটি হোটেলে খাওয়ার সময় অশ্লীল ভাষায় ফোনে কাউকে গালাগালি করছিল। তারই প্রতিবাদ করেন দুর্গাপুর প্রেস ক্লাবের এক বরিষ্ঠ সাংবাদিক। এভাবে প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে মানা করায়, মদ্যপ্য অবস্থায় থাকা ‘শ্রী রামবাবু’র সেই সাঙ্গোপাঙ্গরা তখন ওই সাংবাদিকের ওপর মারমুখী আচরণ করেন ও তাঁর কলার ধরেও ধাক্কা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সমস্ত ঘটনাটি চোখের সামনে ঘটতে দেখেও ‘শ্রী রামবাবু’ নাকি একবারও জন্য সাংবাদিক নিগ্রোহের ঘটনার প্রতিবাদ করেননি বলে অভিযোগ। উল্টো তিনি নাকি ইন্ধন জুগিয়েছেন তার সাঙ্গোপাঙ্গদের সাংবাদিকদেরকে হেনস্তা করার জন্য। দুর্গাপুর মহকুমা আদালত চত্বর স্তম্ভিত হয়ে যায় তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকা এই ‘শ্রী রামবাবু’র কীর্তিকলাপ দেখে। যদিও এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে বেপাত্তা হয়ে যান ‘শ্রী রামবাবু’ সহ তার ‘গুন্ডাবাহিনী’। এ বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং দুর্গাপুর থানার পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এখন প্রশ্ন হল কে এই ‘শ্রী রামবাবু’ ? যার এত ক্ষমতা যে একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের বরিষ্ঠ সাংবাদিককে হেনস্তা করার সাহস রাখে ?

স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গেছে, দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বি-জোন এলাকার ইস্পাত নগরীর কোয়ার্টারে বসবাস করেন ওই ‘শ্রী রামবাবু’ ও তার পরিবার। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় ইস্পাত নগরীর এক লড়াকু যুব নেতার হাত ধরে রাজনীতিতে আসা ‘শ্রী রামবাবু’র । বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ইস্পাত নগরীর ওই যুবনেতা। ওই যুবনেতার হঠাৎ মৃত্যুর পরেই আসন ফাঁকা দেখে ‘শ্রী রামবাবু’ নিজেকে এলাকার বাহুবলী রূপে পরিচিতি দিতে শুরু করেন। স্থানীয় ইস্পাত নগরীর বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর প্রায় ৭০ টি কোয়াটার জবরদখল করে তা দেদার ভাড়া খাটাচ্ছেন মোটা টাকার বিনিময়ে ওই ‘শ্রী রামবাবু’ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। শুধু তাই নয় ইস্পাত নগরীর আশেপাশে থাকা স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড অধীনস্থ দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার একাধিক জায়গা দখল করে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে ‘শ্রী রামবাবু’ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধেও বলে শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় ইস্পাত নগরীর বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, এই ‘শ্রী রামবাবু’ নাকি ইস্পাত কারখানার নিজস্ব মেইন হাসপাতালে ঠিকা কর্মী হিসেবে তার পরিবারের ছয় সাত জনকে ইতিমধ্যেই কাজে ঢুকিয়ে মোটা টাকা রোজগার করছেন। তৃণমূল কংগ্রেস দলের লড়াকু সাধারণ কর্মীরা যখন একটি কর্মসংস্থানের জন্য দলের নেতাদের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। তখন স্বঘোষিত এই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বলে পরিচয় দেওয়া ‘শ্রী রামবাবু’র পরিবারের প্রায় সকলেই চাকরি জোগাড় করে নিয়েছে তৃণমূলের ছাত্র ছায়া ব্যবহার করে বলে অভিযোগ। সাংবাদিক নিগৃহের ঘটনার পর শোনা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের উচ্চ নেতৃত্বের চাপে পড়ে নাকি কান ধরে ক্ষমা চাইতে রাজী হয়েছেন সাংবাদিকদের কাছে ওই ‘শ্রী রামবাবু’। ‘শ্রী রামবাবু’ কান ধরে ক্ষমা চাইলেই কি তার অপরাধের ফিরিস্তি কমে যাবে সাংবাদিকদের কাছে? সাংবাদিক পেটানোর অভিযোগ সামনে আসতেই শিল্পাঞ্চল জুড়ে সকল সামাজিক মাধ্যমে ‘শ্রী রামবাবু ও তার গুন্ডাবাহিনীর ইতিকথা ভাইরাল হয়েছে। শিল্পাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি সামাজিক মাধ্যমে ভৎসনা করা হয়েছে ওই ‘শ্রী রামবাবু’ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের।

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে গত পৌরনিগম নির্বাচনের সময় আসানসোল থেকে আগত তৎকালীন তৃণমূলের বাহুবলী নেতার গামছায় মুখ বাধা দুষ্কৃতীদের দ্বারা ভোট লুঠ হতে দেখেছে শিল্পাঞ্চল। বিরোধী দলে যোগ দেওয়ার পর প্রকাশ্য জনসভায় তৎকালীন বাহুবলী ওই তৃণমূল নেতা শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের সকল বাসিন্দাদের কাছে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করেছিলেন। এখন অবশ্য সেই তৎকালীন বাহুবলী তৃণমূল নেতা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাধারণ এক কর্মী হয়ে জীবনযাপন করছেন। ইস্পাত নগরীর বাসিন্দাদের আশঙ্কা তাহলে কি গত বারের মতো এবারও দুর্গাপুর পৌরনিগম নির্বাচনে ‘শ্রী রামবাবু’র গুন্ডাবাহিনীর ধমকানি চমকানির মুখে পড়তে হবে তাদের ? নাকি তৃণমূল কংগ্রেসের উচ্চ নেতৃত্ব মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মত ওই সব ‘শ্রী রামবাবু’র মতো দুষ্কৃতিদের দল থেকে বিতাড়িত করে দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি জনসমক্ষে তুলে ধরবে?

এদিকে দুর্গাপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের একাংশের অভিযোগ ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতা নাকি এই ঘটনাটি মিটমাট করে, দুর্গাপুর থানায় লিখিত ভাবে এফ.আই.আর যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করছেন সাংবাদিকদের। গতকাল সন্ধ্যায় নাকি দুর্গাপুরের বিভিন্ন তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে আলোচ্য বিষয় ছিল ‘শ্রী রামবাবু’র সাংবাদিক পেটানোর গল্প। ‘শ্রী রামবাবু’ ও তার গুন্ডাবাহিনীর সদস্যরা বলতে শুরু করেছেন “দেখলি কেউ কিছু করতে পারলো না আমাদের। দুর্গাপুর কোর্টের সামনেই পিটিয়ে সোজা করে দিলাম সাংবাদিকদের” বলে অভিযোগ। তবে এই প্রথম নয় এর আগের পৌরসভা নির্বাচনেও মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা তৃণমূল কংগ্রেসের নামকরে একদল গুন্ডাবাহিনী আক্রমণের শিকার হয়েছিল দুর্গাপুরের বরিষ্ঠ সাংবাদিকরা। তখনও ব্যাপারটি মিটমাট করে নিতে বাধ্য হয় নিরীহ সাংবাদিকরা। এবারও নাকি তৃণমূল কংগ্রেসের ছত্রছায়ায় থাকা ‘শ্রী রামবাবু’র গুন্ডাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া সাংবাদিকদের এই ব্যাপারটি মিটমাট করে নিতে বাধ্য হবেন না তো ? নাকি রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মত থানায় এফআইআর হবে ওই দুষ্কৃতি ‘শ্রী রামবাবু’র বিরুদ্ধে? রাজনৈতিক মহলের মতে জলের মতন পরিষ্কার যে তৃণমূল কংগ্রেসের একশ্রেণীর নেতা কর্মীরা সাংবাদিকদের তাদের কব্জায় রাখার জন্য এই ভীতি প্রদর্শন করেছে বলে মনে করেন। এবার কতক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণ করে ‘শ্রী রামবাবু’র বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতৃত্ব এবং আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে শিল্পাঞ্চলের সুশীল শিক্ষিত সমাজ ও দুর্গাপুরের সাংবাদিক মহল।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments