সংবাদদাতা,কাঁকসাঃ– সম্প্রতি পেট্রোপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভোজ্য তেলের দাম। সয়াবিন, সূর্যমুখি থেকে সরষে- সব ধরণের ভোজ্য তেলের লিটার দুশো টাকার আশেপাশে। তেলের দামে হাতে ছ্যাঁকা লাগছে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষেরই। আর দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের পক্ষে তো রান্নার তেল কেনাই দায় হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকের জঙ্গলমহলের আদিবাসী গ্রামগুলির বাসিন্দারা রান্নার তেলের জন্য ব্যবহার করছেন মহুয়ার ফল। কাঁকসা ব্লকের মলানদিঘি, রক্ষিতপুর, চুয়া, লোহাগুড়ি গ্রামের বেশ কিছু আদিবাসী পরিবার এখন সরষের তেলের বদলে মহুয়া বীজের তৈরি তেলই ব্যবহার করছেন। এমনকি এই তেল বিক্রি করেও কেউ কেউ উপার্জন করেছন।
প্রসঙ্গত জঙ্গলে ঘেরা এই আদিবাসী গ্রামগুলি, যেখানে বনের অন্যতম প্রধান গাছ মহুয়া। আর এই মহুয়ার ফুল ও ফলকে প্রচীন কাল থেকেই খাদ্য পানীয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছে এলাকার আদিবাসী মানুষজন। এমনকি মহুয়ার বীজ থেকে ভোজ্য তেলও তৈরি হয়, যা ‘কচড়া’ তেল নামে পরিচিত। প্রচীন সময়ে এই ‘কচড়া’ তেলের ব্যবহার থাকলেও তেল তৈরির পদ্ধতিতে অতিরিক্ত পরিশ্রম থাকায় ইদানিং কালে তার ব্যবহার প্রায় উঠেই গেছিল আদিবাসী সমাজ থেকে। কিন্তু ভোজ্য তেলের মাত্রতিরিক্ত দাম বৃদ্ধি আবার কচড়া তেলের ব্য়বহার ফিরিয়ে এনেছে এই জঙ্গল মহলের আদিবাসী মানুষের মধ্যে।
কাঁকসার জঙ্গলমহলের আদিবাসী গ্রামগুলির অধিকাংশ মানুষই পেশায় দিনমজুর। ফলে দিন আনা দিন খাওয়া এই এলাকার মানুষের পক্ষে বাজার থেকে দামি তেল কিনে রান্না করার আর্থিক সামর্থ্য নেই।। তাই ভোজ্য তেলের বিকল্পের জন্য প্রচীন পদ্ধতি ফিরিয়ে এনছেন আদিবাসী মানুষজন। মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা গ্রামগুলিতে মহুয়ার অভাব নেই। গ্রামের মহিলারা বন থেকে ফল সংগ্রহ করে এনে প্রথমে ফল থেকে বীজ আলাদা করেন। এরপর বীজ ধুয়ে পরিষ্কার করে পাথর দিয়ে ঘষে বীজের খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে তা সেদ্ধ করা হয়। সেই সেদ্ধ বীজ শুকিয়ে ঘানিতে পেশাই করলেই বেরিয়ে আসে তেল। এই তেল রান্নার জন্য তো ব্যবহার হয়ই এমনকি স্নানের আগে গায়ে মাখার জন্যও ব্যবহার করেন এলাকার আদিবাসী মানুষজন। এমনকি এই তেলের ঔষধি গুণ রয়েছে বলে দাবী তাঁদের। তবে এই তেল তৈরিতে প্রচুর পরিশ্রম ও সময় লাগে। পাঁচ কেজি বীজ থেকে তেল পাওয়া যায় প্রায় মাত্র এক কেজি তেল।