জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- শত অনুরোধেও ছাড়তে চাননি নিজের প্রিয় দক্ষিণ কলকাতায় পাম অ্যাভিনিউয়ের দু’ কামরার ফ্লাট। অবশেষে ছাড়তে বাধ্য হলেন, তবে জীবিত অবস্থায় নয়। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভোগার পর সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য।একইসঙ্গে শেষ হল বাম রাজনীতির এক জমানার। তখন ঘড়িতে সময় সকাল ৮ টা ২০ মিনিট। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। রেখে গেলেন স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা সুচেতনকে। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা রাজনৈতিক মহল।
১৯৪৪ সালের ১ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন বুদ্ধবাবু। আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী বুদ্ধদেব বাবু ১৯৬৬ সালে সিপিএমের প্রাথমিক সদস্যপদ নেন। ১৯৭২ সালে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য এবং পরে পলিটব্যুরোর সদস্যও হন। ১৯৭৭ সালে কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের বিধায়ক হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু। পরে ১৯৮৭ সালে যাদবপুর কেন্দ্রে সরে যান এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত সেখানকার বিধায়ক ছিলেন।
জ্যোতি বাবুর মন্ত্রীসভাকে ‘চোরেদের মন্ত্রীসভা’ অভিহিত করে তিনি কিছুদিনের জন্য মন্ত্রীসভা ত্যাগ করেন। সেইসময়টা বাদ দিলে বিভিন্ন সময়ে বুদ্ধদেব বাবু তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ও ১৯৯৯ সালে ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। ২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন বুদ্ধবাবু এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত সেইপদে ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে দুর্নীতির কালো দাগ তাঁর ধবধবে সাদা পোশাকে কোনো দাগ না ফেললেও নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের কালো অধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর নাম জুড়েই থাকবে।
রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাতেও তার সমান আগ্রহ ছিল। তাঁর রুচিবোধ ছিল বহুচর্চিত। মাঝে মাঝে ‘লুজ’ শব্দ ব্যবহার করে ফেললেও শব্দচয়নে তিনি সতর্ক ছিলেন।
জানা যাচ্ছে আগামী ৯ ই আগস্ট তাঁর মৃতদেহ পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বিধানসভা ভবনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে মুজফফর আহমেদ ভবন, দীনেশ মজুমদার ভবন হয়ে দেহদানের জন্য নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রসঙ্গত বুদ্ধদেব বাবু দেহদানের অঙ্গীকার করেন।
ভাল-মন্দ মিশিয়ে তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে শেষ হল বাম রাজনীতির এক জমানার।