জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতাঃ- লাল মাটির রুক্ষ, শুষ্ক পুরুলিয়ায় উপরে ঘন নীল আকাশ, চারপাশ শাল, সেগুন, পলাশ, মহুয়ায় সজ্জিত। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। গঠন করে চলেছে পার্থিব প্রেমের নৈসর্গিক পরিবেশ। এরসাথে আছে ছৌ নৃত্যের মত একাধিক জনপ্রিয় লোকসংস্কৃতি। আর আছেন ‘মহুলবন’এর সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত যিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতির নিগড়ে বেঁধে ফেলেছেন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের কাব্যপ্রেমী মানুষদের।
তারই উদ্যোগে গত ২৪ শে জুন শতাধিক কবি-সাহিত্যিকের উপস্থিতিতে কলকাতার নন্দন চত্বরের জীবনানন্দ সভাগৃহে আয়োজিত হয় ‘মহুলবন লোক সংস্কৃতি উৎসব’। সেখানেই বিশিষ্ট জনদের হাত ধরে প্রকাশিত হয় পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের কবি অন্তরা সিংহরায়ের ৪২ টি কবিতা সমৃদ্ধ তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘তবুও কি প্রেম বুঝেছো’।
শুরুতেই ‘পুরুষ কি শুধুই আগুন!’- একরাশ সংশয়ের মধ্যেই পুরুষ সম্পর্কে কবির মনে হয়েছে ‘হয়তো কোনো এক নাবিক’ যে বন্দর থেকে বন্দরে ছুটে চলেছে আবিষ্কারের নেশায়। প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন সবকিছু। শরীর নামক ‘বিস্তৃর্ণ মানচিত্র’-এ সুপ্ত বীজের ঘুম ভাঙানোর জন্য বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ার জন্য পুরুষকে আহ্বান জানানো হলেও তার মধ্যে ‘আকাশ বা সাগরের’ খোঁজ পাওয়া যায়নি। এইভাবে প্রতিটি কবিতার মধ্যে আছে অরণ্যের রহস্য ঘেরা ইঙ্গিত ‘ঘুমিয়ে আছে, অপেক্ষা শুধু শ্রাবণ ছোঁয়ার’। কবির ভাষায় ‘বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার মিশ্রণ’ -এ গড়ে ওঠা এই কাব্যগ্রন্থ নিঃসন্দেহে কাব্য রসিক পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত কবি অন্তরা সিংহরায় একজন শিক্ষিকা, কবি, বাচিক শিল্পী, অঙ্কন শিল্পী ও সংগীত শিল্পী। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বহু পত্র-পত্রিকাতে তার লেখা কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। তার সৃষ্টি পাঠকের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলা ও ঝাড়খণ্ড দুই রাজ্যের অন্যতম বিশিষ্ট কবি সুনীল কুমার মোদকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ‘মহুলবন’ সাহিত্য গোষ্ঠী একইদিনে ‘শুধু কবিতার জন্য’ কাব্য গ্রন্থটি প্রকাশ করে।
কাব্য প্রকাশকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় একটি ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। কবিতা পাঠ ,আবৃত্তি ও সাহিত্য সংক্রান্ত মননশীল আলোচনা – সব মিলিয়ে প্রায় চার ঘন্টার অনুষ্ঠানটি কখনোই শ্রোতাদের বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠেনি। নরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্তর সঞ্চালনা অনুষ্ঠানটিকে অন্যমাত্রা এনে দেয়। অনুষ্ঠানে তার স্লোগান ‘নিজের বন্ধু নিজেই হও’- শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করে যায়।
অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কবি কেশব রঞ্জন, পিনাকী রায়, পুরুলিয়ার ভূমিপুত্র সুনীল কুমার মোদক ও অন্তরা সিংহরায়। এছাড়াও ছিলেন ড: ব্রতীন দেওঘরিয়া, কবি দেব নির্মল, ড: দ্যুতি দত্ত গুপ্ত, মধুসূদন দাপিয়া সহ সমাজের বহু বিশিষ্ট গুণী ব্যক্তির। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া হয়।
নরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা পুরুলিয়ার সংস্থা ‘মহুলবন’ দীর্ঘদিন ধরে পুরুলিয়া রাজ্যের বুকে সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা সহ বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কর্মসূচি সারাবছর গ্রহণ করে থাকে। মূলত তার প্রচেষ্টায় নতুন নতুন প্রতিভা কাব্যজগতে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পেয়েছে।
উপস্থিত কবি-সাহিত্যিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নরেন্দ্রনাথ বাবু বললেন – কেবল আক্ষরিক অর্থে নয় কাব্যের মধ্যেই ‘নিজের বন্ধু নিজেই হও’ ভাবনাকে সার্থক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছি। পাশে পেয়েছি একগুচ্ছ প্রকৃত কাব্য সাধককে। আশাকরি সবার হাত ধরে বাংলা কাব্য জগত আবার তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে।