জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতাঃ- ওদের কেউ বধির, দৃষ্টিহীন অথবা বোবা। অঙ্গগত ত্রুটি নিয়ে তারা জন্মগ্রহণ করেছে। এদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক প্রতিভা। ওরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। শারীরিকগত ত্রুটি থাকলেও ওদেরও এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাইতো ওদের পাশে এসে দাঁড়ায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সমাজ যাতে ওদের ঘৃণার চোখে না দেখে তারজন্য জাতিসংঘ ১৯৯২ সালে ৩ রা ডিসেম্বর দিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য আয়োজন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। এরকমই একটি সংস্থা হলো কলকাতার বেহালার ‘টুইঙ্কল স্টার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’।
গত ৩ রা ডিসেম্বর সংস্থাটি তাদের ‘ডে কেয়ার সেন্টার প্রাঙ্গনে’ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ে একটি অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এবার প্রতিযোগিতার থিম ছিল ‘গাছ বাঁচাও, জীবন বাঁচাও’। প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থাকলেও পরিবেশ সম্পর্কে যে এরা যথেষ্ট সচেতন তার প্রমাণ তাদের তুলিতে ফুটে ওঠে। তাদের সৃজনশীল দক্ষতা দেখে চমকে ওঠে প্রতিযোগিতা দেখতে আসা সাধারণ দর্শকরা।
উৎসাহ দেওয়ার জন্য ‘টুইঙ্কল স্টার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’-এর পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি শংসাপত্র ও সামান্য উপহার। খুশির রেশ ঝরে পড়ে তাদের মনে। নিজেদের মত করে তার বহিঃপ্রকাশ তারা ঘটায়।
প্রসঙ্গত, সংস্থার কর্ণধার শিবানী মিত্রের স্বপ্ন ও আবেগ হলো এই সংস্থাটি। বিশেষভাবে চাহিদা সম্পন্নদের কষ্ট দূর করার লক্ষ্যে নিজের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে বছর ছয়েক আগে প্রতিষ্ঠা করেন এই সংস্থাটি। শিবানী দেবী সহ ছ’জন বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষিকা মাতৃস্নেহে গড়ে তুলতে থাকেন এদের। লক্ষ্য একটাই এই পৃথিবীতে যে ওদেরও অধিকার আছে সেটা প্রমাণ করা। আজ ওরা সফল।
শিবানী দেবী বললেন – ওদের সাফল্য দেখে আজ আমরা খুব খুশি। সাধারণ মানুষও ওদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আমার বিশ্বাস একটু সহমর্মিতা পেলে ওরা অনেক দূর যাবে। আবেগে গলা কেঁপে ওঠে, কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে তার।
‘টুইঙ্কল স্টার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’-এর উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে স্পেশাল এডুকেটর লোপামুদ্রা মুখার্জ্জী বললেন – খুব ভাল লাগছে। এইভাবে আগামীদিনে আরও সংস্থা এগিয়ে আসবে। সাধারণ মানুষের কাছে তার আবেদন – ওদের নিয়ে ঠাট্টা না করে একটু স্নেহ-ভালবাসা নিয়ে ওদের পাশে দাঁড়ান। মাথায় রাখুন ওরাও মানুষ।