সংবাদদাতা,আসানসোলঃ- কোমাগাতা মারুর নিধন কাণ্ডকে স্মরণীয় করে রাখতে পায়ে হেঁটে কলকাতার বজবজ থেকে পঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন বজবজ টাউনের বাসিন্দা অতীন হালদার। ১৯৫০কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে প্রায় চার মাস সময় লাগবে বলে অনুমান অতীনবাবুর। কিন্তু কেন এই দীর্ঘ পদযাত্রার উদ্য়োগ?
অতীনবাবুর দাবি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড সবাই স্মরণে রাখলেও তার ঠিক পাঁচ বছর আগে ঘটে যাওয়া কোমাগাতা মারুর নিধন কাণ্ড ভুলে গেছেন অনেকেই। সেই ইতিহাস যেন দেশ ভুলে না যায় তাই তাঁর এই অভিনব উদ্যোগ।
ইতিহাসের পাতা উল্টে জানা যায় সময়টা তখন ১৯১৪ সাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে, কোমাগাতা মারু নামের একটি জাপানি জাহাজে ৩৭৬ জন ভারতীয় শিখ, হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের একটি দল কানাডার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল ভারতে ইংরেজদের অত্যাচার এড়িয়ে বিদেশে গিয়ে সুস্থভাবে বসবাস। জাহাজটি যাত্রা শুরু করেছিল ব্রিটিশ শাসিত হংকং থেকে। সেখান থেকে চিন, ইয়াকোহামা জাপান, ভ্যানকুভার হয়ে কানাডায় পৌঁছায় ওই জাহাজ। কিন্তু এই ৩৭৬ জন যাত্রীর মধ্যে ২৪ জন যাত্রীকে কানাডা গ্রহণ করে এবং বাকি ৩৫২ জন যাত্রীকে বন্দরে নিষিদ্ধ করা হয় এবং তাদের ভারতে ফিরে যেতে চাপ দেওয়া হয়। অবেশেষে জাহাজটি দেশে ফিরে আসে। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে সেপ্টেম্বর জাহাজটি বজবজ বন্দরে-এ পৌঁছায়। কিন্তু ভারতে ব্রিটিশ শাসক যাত্রীদের কলকাতায় অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ও বিশেষভাবে ব্যবস্থা করা পাঞ্জাবগামী ট্রেনে চড়ার নির্দেশ দেয়। যাত্রীরা তাতে নারাজ হলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে ব্রিটিশ পুলিশ এবং ২০ জন ভারতীয় শহীদ হন। পরে ওই ঘটনার স্মৃতিতে বজবজের ওই এলাকার নাম হয় কোমাগাতা মারু। অন্যদিকে এই ঘটনার বিরোধীতায় গদর পার্টি সরব হয়, যা স্বাধীনতার ঢেউকে আরও তীব্র করে তোলে। এ যেন আর এক জালিয়ানওয়ালাবাগ কাণ্ড।
কোমাগাতা মারু ঘটনার নায়ক ছিলেন ব্রিটিশ ভারতে পাঞ্জাবের অমৃতসরের এক দূরদর্শী ধনী ব্যবসায়ী, বাবা গুরদিত সিং। তিনি সিঙ্গাপুর ও মালয়ে ঠিকাদারী ব্যবসায় লিপ্ত ছিলেন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে কোন এক সময়ে পাঞ্জাবে ফিরে আসেন এবং গদর পার্টির বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত হন।
গত ১১ ডিসেম্বর বজবজ থেকে যাত্রা শুরু করেছেন অতীন হালদার। সঙ্গী বলতে ব্যাকপ্যাকে সামান্য কিছু খাবার, ব্যক্তিগত সামগ্রী আর জাতীয় পাতাকা। এই সম্বল করে ১৯ তারিখ বৃহস্পতিবার আসানসোল পৌঁছন তিনি। ক্ষণিক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা নিরসনের জন্য সামান্য কিছু কথাবার্তা বলেই ফের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন দেশপ্রেমিক এই বাঙালি। এক একটি জনপদ পেরিয়ে নতুন প্রজন্মকে দিয়ে যাবেন তাঁর নিজের দেশের অতীতের বার্তা, যাতে দেশবাসীর অতীত সংঘর্ষের কথা ভুলে না যা আগামীরা।