eaibanglai
Homeএই বাংলায়আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও আমরা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও আমরা

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ-ভারত ত্যাগ করার আগে ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ধর্মের ভিত্তিতে দেশটিকে দু’টুকরো করে দেয়- ভারত ও পাকিস্তান। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী পূর্ব পাকিস্তান, অধুনা বাংলাদেশ, ছিল পাকিস্তানের অন্তর্গত। উর্দু প্রধান পাকিস্তান প্রথম থেকেই বাংলাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের উপর জোর করে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা সেটা মানতে রাজী নয়। বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদার দাবিতে সেখানে শুরু হয় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত বাঙালিদের উপর পাকিস্তানের পুলিশ নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করলে রফিক, সালাম, বরকত, আব্দুল জব্বার সহ বহু তরুণ শহিদ হন। তাই এই দিনটি ভাষা শহিদ দিবস হিসেবেও পরিচিত। ভাষার জন্য আন্দোলন, নতুন দেশের জন্ম ও বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ – এসবের পেছনে আছে আত্মত্যাগ, নিরলস সংগ্রাম ও হার না মানা মনোভাব।

ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর অধিবেশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিষয়টি উত্থাপিত হয় এবং শেষপর্যন্ত ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে গৃহীত হয়। বাঙালিদের কাছে এএক গৌরবময় বিষয়।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ – আকাশ-বাতাস কাঁপানো এই স্লোগানের পেছনে থাকা আত্মত্যাগের কাহিনী পঞ্চাশোর্ধ বাঙালিরা জানলেও বর্তমান প্রজন্ম জানেনা বা তাদের জানানো হয়নি। এইভাবেই মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে ইতিহাসের। তাইতো প্রতি মুহূর্তে বাংলা ভাষা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। ইতিহাস না জানার ও জেনেও তাকে গুরুত্ব না দেওয়ার চরম কুফল আজ বোঝা যাচ্ছে।

এর দায় অবশ্যই সবচেয়ে বেশি তাদের অভিভাবকদের। এটা ঠিক ভারতের মত বহুভাষী দেশে মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষা, সংযোগকারী ভাষা হিসাবে বিশেষ করে ইংরেজি, শিখতে হবে। তবে কখনোই মাতৃভাষাকে অবহেলা করে নয়।

অথচ আজ সেটাই চলছে। সন্তানের গা থেকে হাসপাতালের গন্ধ যেতে না যেতেই তাকে ভর্তি করে দেওয়া হচ্ছে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে। সেখানে কতটা শিখছে সেটা নয়, তার পরিবর্তে গুরুত্ব পাচ্ছে কত খরচ হচ্ছে। অনেক অভিভাবক এটা বলতে গর্ববোধ করছে যে তার সন্তান নাকি বাংলা বলতে পারেনা। অথচ এই বাক্য বন্ধনী ব্যবহার করার জন্য লজ্জা হওয়া উচিত ছিল। সম্ভবত পৃথিবীতে বাঙালিরাই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষাকে অবহেলা করে। নিজের ভাষায় কথা বলতে লজ্জা বোধ করে। কথার মধ্যে অযথা ও অপ্রয়োজনীয় হিন্দি বা ইংরেজি শব্দ জুড়ে দেয়। তখন মাথায় থাকেনা এই ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য কি পরিমাণ অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। যে ভাষার জন্য ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে সেই ভাষা আজ নিজের ঘরের লোকের কাছেই অবহেলিত, অপমানিত। এ বড় লজ্জার!

মাঝে মাঝে দু’একটি সংগঠন এই রাজ্যে সরকারি কাজের জন্য কেবলমাত্র বাংলা ভাষার দাবি তোলে। এটা ঠিক নয়। কারণ এই রাজ্যে বহু ভাষাভাষীর মানুষ বাস করে। তাদের কথাও ভাবতে হবে।

প্রয়োজনের তাগিদে নিশ্চয়ই অন্য ভাষা শিখুক। কিন্তু তার জন্য মাতৃভাষাকে অবহেলা করার তো কোনো প্রয়োজন নাই। মাতৃভাষাকে অবহেলা করে জাঁকজমক ঘটা করে ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে পালন করার মধ্যে সার্থকতা কোথায়? বাঙালি ভাবুন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments