সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী),বহরমপুরঃ- স্বামীজির জীবনী পড়লে আমরা এক বাইজির কথা পাই। স্বামীজির সাথে দেখা হওয়ার পরের রাত্রে যিনি রাতারাতি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন, তিনি পরবর্তীকালে কোথায় গেলেন তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তরই আজকে দেব।
স্বামী পূর্ণাত্মানন্দের বই স্বামী বিবেকানন্দ এবং ধর্মের নতুন সজ্ঞায় সেই বাইজির কথা লেখা আছে। স্বামীজীর জীবনী তে আছে স্বামীজি প্রথমে বাইজির গাওয়া গান শুনতেই চাননি, তিনি যখন উঠে চলে যাচ্ছিলেন এই ভেবে যে তিনি একজন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী হয়ে বাইজীর গান কেন শুনবেন তখনই সেই বাইজি তার হৃদয় নিংড়ানো সেই গান যা সুরদাসের ভজন নামে পরিচিত তাই গাইতে শুরু করলেন,“ প্রভু মেরে অবগুন চিত না ধরো।/ সমদরশী হ্যায় নাম তুহারো, চাহে তো পার করো।।”
এই গান শুনে স্বামীজী আবার ফিরে আসেন ও আসরে বসলেন। তিনি সারারাত ধরে বাইজির গান শোনেন কিন্তু এরপর থেকে এই বাইজির আর কোনরকম খবর পাওয়া যায়নি তিনি রাতারাতি নিখোঁজ হয়ে যান। কেউ আর তার কোনরকম খোঁজ ও নেয়নি। বহুবছর পর রামকৃষ্ণ মিশনেরই এক সন্ন্যাসী কৌতুহল বশত খুঁজে খুঁজে বের করলেন সেই বাইজীকে। সেই বাইজির নাম ময়নাবাঈ, তিনি রাজপুতানার এককালের বিখ্যাত বাইজি,তার গান শুনে রাজপুতানার রাজারা সব মুগ্ধ হয়ে যেতেন কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেলেন তিনি?
এক সন্ন্যাসী নিছক কৌতূহলের বশে খুঁজতে খুঁজতে রাজস্থানের এক ছোট্ট গ্রামে সেই বাইজীর সন্ধান পেলেন, তখন অনেক কাল অতিবাহিত হয়ে গেছে,বাইজিও বৃদ্ধা হয়ে গিয়েছেন। সন্ন্যাসী দেখলেন একটি ছোট্ট কুটিরের ঠাকুরঘরে গোপালের বিগ্রহের সাথে স্বামী বিবেকানন্দের ছবি নিত্য পূজো করেন ও সেই ছবির সামনে বসে তন্ময় হয়ে গান করেন । সন্ন্যাসী বললেন,“ সেই রাত্রির পরে আপনাকে কেন আর কোন আসরে দেখা যায়নি?” বাঈজী বললেন, “ বাবা, সেদিন দেবতাকে গান শুনিয়ে আমার জীবন ধন্য হয়েছিল। সেদিন আমি অঙ্গীকার করেছিলাম, আর কখনো মানুষের বিনোদনের জন্য গান গাইব না। আমি শুধুই গাইব আমার দেবতার জন্য। আমার বাকি জীবন কাটবে আমার দেবতার সেবায়, দেবতাকে গান শুনিয়ে ।” স্বামী বিবেকানন্দ আর গিরিধর গোপালই তার দেবতা। আসলে একবার আগুন যাকে ছোঁয়, তাকেই পুড়িয়ে মারে, সে আজ হোক অথবা কাল হোক,ধর্মও সেই আগুনের মতো যা মানুষকে অগ্নিশুদ্ধ করে নতুন মানুষে রূপান্তরিত করে।