eaibanglai
Homeএই বাংলায়অবৈধ সিন্ডিকেট বন্ধ করায় কি তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে কুৎসা?

অবৈধ সিন্ডিকেট বন্ধ করায় কি তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে কুৎসা?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- গতকাল সকাল থেকে গোটা পশ্চিম বর্ধমান জেলা জুড়ে মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে দেওয়া বেনামি পোস্টার নিয়ে তোলপাড়। মদনপুর গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ির দেওয়াল, ল্যাম্প পোস্ট ও গাছে তার বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ লেখা পোস্টার দেখা গেছে। কে বা কারা এই পোস্টার ছড়িয়েছে তা অবশ্য পোস্টারে উল্লেখ নেই। সাদা কাগজে কালো কালি দিয়ে কম্পিউটার প্রিন্ট করে লেখা পোস্টারে অভিযোগ তোলা হয়েছে। মদনপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তথা যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থ দেওয়াসীর নামে পড়ছিল ওই পোষ্টার । ৮০ লক্ষ টাকার বাড়ি, দুটি দামি চারচাকা গাড়ি, অনেক বহু মূল্যের জমির মালিক,বকলমে তিনি নাকি ঠিকাদারিও করেন সহ একাধিক অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই পোস্টার গুলিতে।

বেনামি ওই পোস্টার গুলিতে দুর্নীতি ও তোলাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে মদনপুর পঞ্চায়েত প্রধান পার্থ দেওয়াসী বলেন,”এইসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। দল আমাকে সংগঠনের যুব সভাপতি করেছে। আর মানুষের ভোটে জিতে আমি পঞ্চায়েত প্রধান হয়েছি। এলাকার উন্নয়ন, মানুষকে পরিষেবা দেওয়া আমার কাজ। সততার সাথে আমি সেটাই করে চলেছি। এটা বিরোধীদের কাজ।”

বেনামি পোস্টার কাণ্ডের বিষয় নিয়ে তৃণমূল দলের অন্ডাল ব্লক সভাপতি কালোবরণ মন্ডল পার্থ বাবুর পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “ঈর্ষার কারণে রাতের অন্ধকারে কেউ বা কারা এই পোস্টার দিয়েছে। এটা বিরোধীদের কাজও হতে পারে।”

এই পোস্টার কান্ডকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ানো চেষ্টাকে কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে যোগ দিতে যাওয়া পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। একটি সূত্র মারফত জানা গেছে, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কানে এই ঘটনা যাওয়ার পরেই তিনি তার সকল তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে বলেছেন, “বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে সব তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী চোরা গুপ্তা ভাবে সংযোগ রেখে চলেছে তারা অবিলম্বে নিজেদের অবস্থান বদল করুন। অন্যথা তৃণমূল কংগ্রেস দল জানে কিভাবে দল বিরোধী কাজ ও কর্মীকে দল থেকে তাড়াতে হয়।” সূত্রটি মারফত এও জানা গেছে, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নাকি পশ্চিম বর্ধমান জেলার উচ্চ পদস্থ পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করবার কথা জানিয়েছেন এবং যথাযথ আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন। এখন দেখার ‘সর্ষের মধ্যে থাকা ভুত’ কিভাবে তাড়াবেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের উচ্চপদস্থ নেতৃত্বরা।

ওই পোস্টার কাণ্ড নিয়ে জেলা বিজেপির নেতা ছোটন চক্রবর্তী বলেন,”তৃণমূল আর দুর্নীতি সমর্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের সেবার কথা বলে আদতে তৃণমূল নেতারা নিজেদের আখের গোছাচ্ছে । যে অভিযোগ পোস্টারে করা হয়েছে সেটা নিয়ে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।”

স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে হঠাৎ করে কেন তিন চারটি পোস্টার পড়লো এলাকাতে? কে বা কারা এই পোস্টার গুলি লাগালো? কি উদ্দেশ্যে লাগানো হয়েছিল ওই পোস্টার গুলি?

একটি সূত্র মারফত জানা গেছে, মদনপুর ও শ্রীরামপুর এলাকার বেশ কিছু সক্রিয় বিরোধী দলের কর্মী সহ তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরে থাকা কয়েকজন এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে লাগিয়েছে ওই পোস্টার গুলি।

কি সেই উদ্দেশ্য?

সূত্র মারফত জানা গেছে, মদনপুর ও শ্রীরামপুর এলাকার দামোদর নদের মাঝ বরাবর থেকে কিছুদিন ধরে এক অবৈধ সিন্ডিকেট তৈরি করে রাতের অন্ধকারে ও প্রকাশ্য দিবালোকে দেদার বালি লুঠ করা হচ্ছিল ট্রাকটার ট্রলিতে করে। এ বিষয়ে নাকি পশ্চিম বর্ধমান জেলাশাসকের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন এলাকারই কিছু বাসিন্দা। অভিযোগ পাওয়ার পর নাকি জেলাশাসক তৎক্ষণাৎ জেলা ভূমি ও রাজস্ব বিভাগের এডিএম কে তদন্তের নির্দেশ দেন।

স্থানীয় অন্ডাল বিএলআরও অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার সকাল থেকে নাকি স্থানীয় অন্ডাল থানার সহযোগিতায় ব্যাপক অভিযান চালানো হয় দামোদর নদ বরাবর। যদিও হাতে নাতে একটাও ট্রাক্টর ট্রলি ধরা না পড়লেও, দামোদর নদ বক্ষ থেকে যে অবৈধভাবে ট্রাক্টার ট্রলিতে করে বালি লুঠ হচ্ছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। তৎক্ষণাৎ নাকি ভূমি রাজস্ব বিভাগের কর্মীরা ঘটনাটি মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে নজর দিতে অনুরোধ করেন। এই খবর পাওয়া মাত্রই মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্থ দেওয়াসী তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মীদেরকে ওই এলাকায় তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ জারি করেন। তারপরেই নাকি বন্ধ হয়ে যায় দামোদর নদের বুক থেকে অবৈধ রূপে ট্রাক্টর ট্রলিতে করে বালি চুরি। পঞ্চায়েত প্রধানের এহেন কড়া পদক্ষেপে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য সহ যে ক’জন তৃণমূল কর্মী ওই অবৈধ সিন্ডিকেট তৈরি করে বালি লুঠ করছিল তাদের কুনজরে পড়ে মদনপুরের পঞ্চায়েত প্রধান।

শুরু হয় ষড়যন্ত্র। পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে রাতারাতি নাকি লেখা হয় ওই পোস্টার গুলি। উদ্দেশ্য একটাই, যেন তেনো প্রকারে তৃণমূল কংগ্রেসের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্থ দেওয়াসীকে অপদস্ত করা ও পদচ্যুত করা। যদি এই ষড়যন্ত্রে তারা সফল হয়, তাহলে আবার দামোদর নদ থেকে দেদার বালি লুঠ শুরু করবে তারা। বাধা দেওয়ার সাহস থাকবে না কারোর।

স্থানীয় বিএলআরও অফিস ও অন্ডাল থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মদনপুর এলাকায় একটি মাত্র সরকারের অনুমোদিত বৈধ ঘাট রয়েছে এবং সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ম-কানুন মেনেই চলছে সেখান থেকে বালি উত্তোলনের কাজ। কিন্তু রাতের অন্ধকারে নাকি কখনো কখনো কিছু দুষ্কৃতী অবৈধভাবে ট্র্যাক্টর ট্রলিতে করে বালি চুরি করছিল। অভিযোগ পাওয়ার পরেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অন্ডাল থানার এলাকাতে আর একটিও অবৈধ বালির গাড়ি ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছেন ওই সূত্রেটি। আইন মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে। এদিকে এই পোস্টার কাণ্ডের ব্যাপার নিয়ে নাকি ইতিমধ্যেই অন্ডাল থানার পুলিশ খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে, কে বা কারা রাতের অন্ধকারে এলাকাকে অশান্ত করতে ষড়যন্ত্র করছে। খুব তাড়াতাড়ি দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অন্ডাল থানার ওই সূত্রটি জানিয়েছে।

বেনামি ওই পোস্টারে সাংবাদিক, তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক নেতৃত্ব সহ জেলা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধেও কুৎসা ছড়ানো হয়েছে। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গোটা সাংবাদিক মহল সহ তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব। একদল নাম গোত্র হীন কাপুরুষ, দুষ্কৃতী রাতের অন্ধকারে জনগণের আশীর্বাদ নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচনে জয়লাভ করা পঞ্চায়েত প্রধান সহ নিরীহ সাংবাদিকদের নামে যেভাবে কুৎসা ছড়িয়েছে , তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানানো হয়েছে প্রশাসনিক মহলে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments