জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোটঃ– প্রকৃতি ছ’টা ঋতু তাদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়। সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যেও ঋতু অনুযায়ী ব্যস্ততা ও পোশাকের পরিবর্তন দেখা যায়। দক্ষিণের মলয় বাতাস তরুণ-তরুণীর হৃদয়ে দোলা দিয়ে বসন্তের আগমন ঘোষণা করে। ভোরের শিশিরের আঘাতে শিউলির টুপটাপ ঝরে পড়া শব্দ এবং আকাশের সাদা মেঘের ভেলা শরতের ইঙ্গিত দেয়। উত্তুরের শীতল বাতাসের হাত ধরে আসে শীত ঋতু। মানুষের গায়ে ওঠে শীতের পোশাক। সঙ্গে আগমন ঘটে লেপ প্রস্তুতকারকদের।
এক সময় ঠাণ্ডা পড়তে না পড়তেই দেখা যেত লেপ প্রস্তুতকারকরা কাঁধে ধুনচি ও সাইকেলের ক্যারিয়ারে তুলোর বস্তা নিয়ে চলেছে। তারপর কোনো একজায়গায় বসে গৃহস্থ বাড়ির পুরনো লেপ-তোষক ছিঁড়ে তুলে বের করে সেগুলি ধুনচি দিয়ে ধুনে নতুন করে পেঁজা তুলো করে ফেলছে। ধুনচির টুং টাং মিষ্টি শব্দের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায় মিষ্টি সুর। অবশেষে তৈরি হয় নতুন করে লেপ-তোষক।
আজ সেসব কার্যত অতীত। লেপের পরিবর্তে এসে গেছে বালাপোষ এবং ধুনচির পরিবর্তে যন্ত্রের সাহায্যে তুলো ধুনার কাজ চলছে।
কথা হচ্ছিল মঙ্গলকোটের বিশিষ্ট লেপ প্রস্তুতকারক ভোলা সেখের সঙ্গে। প্রায় বছর চল্লিশ আগে বাবার হাত ধরে সে জয়পুরে আসে। ধীরে ধীরে এলাকায় তার একটা আলাদা পরিচিতি গড়ে ওঠে।
ভোলার বক্তব্য – একটা সময় টুকটাক কাজ করলেও ঠান্ডা পড়লে ব্যস্ততা বেড়ে যেত। গ্রামের বাড়ি থেকে অতিরিক্ত কারিগর নিয়ে আসতে হত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কম মূল্যের বালাপোষের জন্য লেপের চাহিদা যথেষ্ট কমে গেছে। ফলে দিন দিন তাদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। তবে তার আশা কম মূল্যের হলেও লেপের থেকে বালাপোষের স্থায়িত্ব কম। ফলে মানুষ আবার লেপ তৈরির দিকেই ঝুঁকবে।