নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর:– অবশেষে সরতে হলো পার্থ ঘোষকেও। মিলে গেলো দিনভরের অনুমান।
যে পার্থ সারথী হয়ে নাকি এতদিন টেনে নিয়ে এলেন তৃণমূলের বিজয়রথ, রাজ্য পুলিসের মাত্র আড়াই লাইনের একটি চিঠির শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে পাঠিয়ে দিলো ‘বাধ্যতামূলক অপেক্ষায় ‘। রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত মহা নির্দেশকের হুকুমে স্পষ্ট বলা হয়েছে – পার্থকে তৎক্ষণাৎ কাঁকসা থানা ছেড়ে যোগ দিতে হবে কলকাতায় ভবানীভবনে, রাজ্য পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে। সেখানে আদতে তাকে যে স্রেফ বসিয়েই রাখা হবে, নির্দেশে তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
পার্থকে নিয়ে শাসকের হাঁড়িকাঠে এদিনের বলি দুজন। এদিনই আসানসোলের বারাবনি থানার ওসি মনোরঞ্জন মণ্ডলকে গদী ছেড়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে পালাতে হয়। তাকে সাসপেন্ড করা হয় কর্তব্যে গাফিলতির মতো একটি মামুলি অজুহাতে। তারপরে কাঁকসার পার্থ। দুজনেই আবার বিজেপির ভাষায়, শাসকের ঘনিষ্ঠ, তল্পিবাহক। তাহলে, হঠাৎ কেনো এমন হলো? বিজেপির ভয়ে? নাকি শাসকের অন্য কোনো গুঠি সাজানো আছে গোপনে?
গত বৃহস্পতিবার মহাকরণের সভাগৃহ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের করা হুঁশিয়ারির পর জেলা জুড়েই এদিন চলেছে তল্লাশি অভিযান। মুখ্যমন্ত্রী নিজের মুখে গতকাল নিচুতলার একশ্রেনীর পুলিশ অফিসার আর তার নিজের দলের কিছু নেতা, হাফনেতার অবৈধ কয়লা, বালি কারবারের সাথে জড়িত থাকার কথা বলে দেন। তারপরই শোরগোল পড়ে যায় পুলিশ মহলে, বিশেষ করে পশ্চিম বর্ধমানের অলিন্দে, কারণ – ওই সব লুঠের স্বর্গরাজ্য যে এই জেলাটিই!
অবৈধ লোহা, কয়লা, বালি অবাধ লুঠের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী জেহাদ ঘোষণা করায় এতো হৈচৈ। শুক্রবারই দুর্গাপুরের শাসক দলের দুই নেতা অরবিন্দ নন্দী আর ঋণ্টু পাঞ্জাকে লোহাচুরির দায়ে গ্রেফতার করে কোকওভেন থানার পুলিশ।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই পুলিশ অধিকর্তা রাজিব কুমারের নেতৃত্বে যে বৈঠক হয়েছিল, তাতেই চিহ্নিত হয়েছিলেন একাধিক পুলিশ আধিকারিক, থানার ওসি। একটি সূত্র জানায়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যেসব ওসি দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলেন তাদেরকে অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের মুখে দাঁড়াতে হবে। এদিন মনোরঞ্জন মন্ডলের সাসপেনশনের পরেই গোটা জেলা জুড়ে পুলিশ মহলে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখনই পুলিশের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র মারফত জানা যায় – এখনো জেলার আরো পাঁচ পুলিশ কর্তা, ওসির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চলেছে রাজ্য পুলিশ। উল্লেখ্য এর আগেও বহুবার কেন্দ্রীয় তথা রাজ্য গোয়েন্দাদের একাধিক জেরার মুখে পড়েছেন পার্থ ঘোষ। কিন্তু, তেমনভাবে কোনদিনই তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, বলে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে।
এদিকে, পুলিশ কঠোর হতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে শিল্পাঞ্চলের বুকে লোহা, কয়লা, পাথর ও বালির অবৈধ কারবারিদের মধ্যে। ইতিমধ্যেই শিল্পাঞ্চলের আশি শতাংশ অবৈধ বালি, পাথর, কয়লা ও খনিজ লুঠের সাথে যুক্ত ব্যবসায়ী ও মাফিয়ারা শহর ছেড়ে অন্যত্রে গা ঢাকা দিয়েছে, বলে সুত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে।