eaibanglai
Homeএই বাংলায়পথশ্রী-রাস্তাশ্রী এবং দুর্নীতির আশঙ্কা

পথশ্রী-রাস্তাশ্রী এবং দুর্নীতির আশঙ্কা

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- দেশের উন্নতির জন্য ভারতের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী যে তিনটি ‘শন’-এর উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার অন্যতম হলো কমিউনিকেশন। অর্থাৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা। তারপর থেকেই আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক থেকে শুরু করে গ্রামীণ সড়ক – প্রতিটি ক্ষেত্রই উন্নতির স্বাদ অনুভব করে। পরিকাঠামোগত উন্নতির ফলে অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নতি সহজ হয়েছে। পেছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গ।

কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকলেও এই রাজ্যের প্রায় প্রতিটি এলাকা যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উন্নতির ছোঁয়া পেয়েছে। সেটি আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং যেসব এলাকা এতদিন বঞ্চিত ছিল সেখানে সেই উন্নতি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গত ২৮ শে মার্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী ‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’ নামে একটি নতুন প্রকল্পের শুভ সূচনা করেন। লক্ষ্য গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি।

জানা যাচ্ছে রাজ্যের ২২ টি জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েত জুড়ে এই বিশাল কর্মকাণ্ড চলবে। প্রায় নয় হাজারটি নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরনো রাস্তা সংস্কার করা হবে। প্রায় বারো হাজার কিমি রাস্তার মধ্যে নয় হাজার কিমি নতুন রাস্তা নির্মাণ ও তিন হাজার কিমি পুরনো রাস্তা সংস্কার করা হবে। এগুলি বিটুমিনাস, সিমেন্ট ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে তৈরি হবে। প্রায় চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। সমস্ত খরচ রাজ্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে হবে। ঘোষণা অনুযায়ী জব কার্ড হোল্ডাররা এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ পাবে। এই প্রকল্পের ফলে রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েতের প্রায় ত্রিশ হাজার গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে।

বিরোধীরা সমালোচনা করলেও এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্ক প্রসূত বিভিন্ন প্রকল্প কেন্দ্র বা আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হয়েছে। হয়তো এই প্রকল্পটাও প্রশংসিত হতে পারে। কিন্তু একইসঙ্গে অনেকেই দুর্নীতিরও আশঙ্কা করছে। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও একই সতর্কীকরণ বার্তা শোনা গ্যাছে।

ঘোষণা অনুযায়ী গ্রামীণ সড়কের উন্নতির জন্য এই প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করা হবে এবং সেটা হবে বিভিন্ন পঞ্চায়েত প্রধান, অঞ্চল সভাপতি সহ তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের পদাধিকারীদের তত্ত্বাবধানে। বিগত দিনে এইসব পদাধিকারীদের একাংশের ‘ট্রাক’ রেকর্ড এত খারাপ যে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা হয়তো এই প্রকল্পের হাত ধরে বড় রকমের আর্থিক দুর্নীতি হতে পারে। কমিশন খেতে অভ্যস্ত ‘তোলামূলী’ তৃণমূলীরা হয়তো এই সুযোগ ছাড়বেনা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে যেকোনো অজুহাতে রাস্তা নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই তারাও নিম্নমানের কাজ করতে বাধ্য হবে। ব্যক্তিগতভাবে কিছু নেতার পকেট ভর্তি হলেও ফল কিন্তু দিনের শেষে তৃণমূল দলকেই ভুগতে হবে।

শোনা যাচ্ছে জব কার্ড হোল্ডাররা এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ পাবে। দুর্নীতির অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে একশ দিনের কাজ বন্ধ। অনেক জায়গায় নাকি জব কার্ডগুলো তৃণমূলের একশ্রেণির নেতাদের কাছে থাকে। কম টাকা পেলেও কাজ না করেও প্রাপকরা টাকা পেয়ে যায়। কোথাও আবার জেসিবি দিয়ে মাটি কাটানোর অভিযোগও পাওয়া যায়। সুতরাং এখানেও বড় দুর্নীতির আশঙ্কা।

বিটুমিনাস বা সিমেন্টের রাস্তা তৈরি করার অভিজ্ঞতা অধিকাংশ জব কার্ড হোল্ডারের নাই। এজেন্সিগুলো দক্ষ কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করবে। সেক্ষেত্রে ফল কি হতে পারে সেটা ভুক্তভোগীরা জানে।

রাস্তার কাজ করতে হলে টেণ্ডার ডাকতে হবে। সেটা নিয়েও কেলেঙ্কারি হতে পারে। সম্প্রতি আউসগ্রাম ২ নং ব্লকে এধরনের একটি অভিযোগ সামনে এসেছে। অতএব বর্তমান আবহে নতুন করে যাতে বিতর্ক সৃষ্টি না হয় সেদিক দিয়েও তৃণমূল নেতৃত্বকে সাবধানে থাকতে হবে।

পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই প্রকল্প নিঃসন্দেহে তৃণমূলের ভোটবাক্সকে সমৃদ্ধ করবে। সেটা অনুমান করেই বিরোধী দলনেতা ইতিমধ্যেই অন্য কথা বলতে শুরু করেছেন। তিনি ভাল করেই জানেন বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্যের প্রাপ্য বন্ধ করে দেওয়ার জন্য রাজ্যের মানুষ কেন্দ্রের উপর ক্ষুব্ধ। পঞ্চায়েত ভোটে তার প্রভাব পড়বেই।

মমতাও জানেন যতই রাজ্যের তহবিল থেকে কাজটা করা হোকনা কেন দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই সমস্যা হবে। হয়তো তিনিও নিশ্চিত নন এই প্রকল্পকে দুর্নীতি মুক্ত রাখা যাবে কিনা!

অতএব দ্যাখার, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই প্রকল্প তৃণমূলকে কোনো ডিভিডেণ্ট দেয়, না বিপদ ডেকে আনে? মাথায় রাখতে হবে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট বামেদের পক্ষে সুখকর হয়নি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments