নীহারিকা মুখার্জ্জী,দক্ষিণ চব্বিশ পরগণাঃ- শুধু ছাত্রছাত্রীদের প্রতি নয়, সমাজের প্রতিও গুরুত্ব সহকারে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর স্মৃতিধন্য দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ফলতা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। আবার তার নমুনা পাওয়া গেল পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৪ তম জন্মদিনে।
১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বরের পর থেকে কেটে গেছে দুই শতাধিক বছর। আজও সমান জনপ্রিয় থেকে গেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, নারী শিক্ষার প্রবর্তক তথা বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টা পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে ফলতা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে তাঁর ২০৪ তম জন্মদিনটি পালিত হয়।
জন্মদিন উপলক্ষ্যে সকাল ৮ টা নাগাদ প্রভাতফেরীর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিলক নস্কর। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে প্রভাতফেরীতে পা-মেলায় চার শতাধিক ছাত্রছাত্রী। তাদের হাতে ছিল প্লাকার্ড ও একেবারে সামনে ব্যানার। প্রায় এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তারা ফিরে আসে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। সেখানে বিদ্যাসাগরের মূর্তির পদতলে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্যরা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যাসাগরের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সামনে মূল্যবান বক্তব্য পরিবেশন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এরপরই এক অভিনব দৃশ্যের সাক্ষী থাকেন এলাকাবাসী। বিদ্যাসাগরের জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। কোঠারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক শাখার সহযোগিতায় শিবির থেকে ১০১ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। যদিও প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। ২ জন শিক্ষিকা সহ মোট ৬২ জন মহিলা রক্তদান করেন। রক্তদাতারা ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক-অভিভাবিকা। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিবিরে উপস্থিত ছিলেন ফলতা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সঞ্চিতা মণ্ডল, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ আতিকুল্লা মোল্লা, ফলতা পঞ্চায়েতের প্রধান শবরী হালদার, বিশিষ্ট সমাজসেবী প্রদীপ সাঁপুই ও রবিয়াল জমাদার সহ অন্যান্যরা।
বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বললেন – এক মহান ব্যক্তির জন্মদিনকে স্মরণীয় করে তুলতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন অভিনবত্বের দাবি রাখে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি অভিভাবকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বললেন – বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন এক আলাদা তাৎপর্য বহন করে। উনি ছিলেন বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক, অসহায় মানুষের ত্রাতা। আবার রক্তদান সমাজের উপকার করে। তাই আমাদের এই ভাবনা এবং এইভাবেই আমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের চেষ্টা করলাম।