জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, পূর্ব বর্ধমান -: ‘শস্য ভাণ্ডার’ হিসাবে পরিচিত পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় কোথাও সরকারি সেচখালের, কোথাও বা ব্যক্তিগত সাবমার্সিবল ব্যবহার করে ব্যাপক হারে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে কোথাও কোথাও ধান পাকতে শুরু করেছে। অল্প দিনের মধ্যেই ফসল তোলা শুরু হবে। এখন অবশ্য যন্ত্রের সাহায্যে ধান গাছ থেকে সরাসরি ধান পৃথক করা হচ্ছে। শেষাংশ মাঠেই পড়ে থাকছে।
এরপরই শুরু হচ্ছে বিপত্তি। পড়ে থাকা শেষাংশে চাষীরা আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। এরফলে ক্ষেত জমিতে থাকা চাষের পক্ষে উপকারী অণুজীবগুলি আগুনের তাপে মারা যাচ্ছে। ফলে চাষের পক্ষে প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, জমির উপরের উর্বর মাটি পুড়ে শক্ত হয়ে চাষের পক্ষে অনুপযুক্ত হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, আগুন লাগানোর ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। অর্থাৎ দু’দিক থেকেই পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কথা হচ্ছিল, বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী ড. নাদিরা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বললেন, ফসল তোলার পর ধান গাছের যে শেষাংশ পড়ে থাকছে সেগুলি পুড়িয়ে না দিয়ে যদি ক্ষেত জমির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় তাহলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে। এতে চাষী উপকৃত হবে। এরজন্য এখন থেকেই সরকারি ও বেসরকারি তরফে চাষীদের সচেতন করার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক সহকারি কৃষি অধিকর্তা বললেন, আমাদের লোকবল কম। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অঞ্চল ভিত্তিক সচেতনতা মূলক শিবিরের আয়োজন করা সম্ভব হয়না। তবে এই ধরনের শিবিরের আয়োজন করতে পারলে খুব ভাল হতো।
এর উল্টোদিকে আছে আরও এক করুণ চিত্র। মাঠ থেকে বোরো ধান তোলার আগে প্রায় প্রতিবছর বৃষ্টি হয়। ট্রাক্টরের সাহায্যে ধান তোলার সময় ট্রাক্টরের চাকার সঙ্গে উঠে আসা কাদা পড়ে থাকে রাস্তার উপর এবং রাস্তা যান চলাচলের পক্ষে অনুপযুক্ত হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। কঠোর পরিশ্রম ও বহু খরচ করে ধান চাষ করা চাষীর পক্ষে এটা মাথায় রাখা সম্ভব হয়না। তার একটাই লক্ষ্য কষ্টের ফসল নিরাপদে বাড়িতে আনা।
কথা হচ্ছিল গলসীর বিশিষ্ট চাষী উজ্জ্বল সেখের সঙ্গে। তিনি বললেন, বহু কষ্টে বোরো ধান চাষ করি। তার উপর আছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়। ট্রাক্টরের চাকায় উঠে আসা কাদা রাস্তায় পড়ে বিপদের সৃষ্টি করে সেটা বুঝতে পারি।
গলসীর ভুঁড়ি পঞ্চায়েত প্রধান সুবোধ ঘোষ বললেন, সত্যিই এটা একটা সমস্যা। সবার সঙ্গে শীঘ্রই আলোচনা করে একটা পথ বের করার চেষ্টা করব।





