সংবাদদাতা,পুরুলিাঃ– গত ৯ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে আনা হয়েছিল তিন বছরের জিনত আর যমুনাকে। কয়েক দিন ঘেরাটোপে রেখে পর্যবেক্ষণের পর রেডিয়ো কলার পরিয়ে গত ২৪ নভেম্বর যমুনা জিনতকে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হয়েছিল। তাদের ‘সফট রিলিজ’ করা হয়েছিল। অর্থাৎ ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্দরে তাদের গতিবিধি ছিল নিয়ন্ত্রিত। এর মাঝেই একের পর এক রাজ্যের সীমানা টপকে ফেলে জিনাত। পরে ‘ঘর’ ছাড়ে যমুনাও। তবে, সে এখনও ওড়িশার বালাসোরের জঙ্গলেই ঘোরাফেরা করছে।
অন্যদিকে জিনত ওড়িশা থেকে ঝাড়খণ্ড ও সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে। বন দফতর সূত্রে খবর, ওড়িশার সিমলিপালের জঙ্গল থেকেই ঝাড়খণ্ডের দিকে হাঁটতে শুরু করে জিনত। গুরবান্দা হয়ে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে পৌঁছয় সে। সেখানে জামশেদপুর বন বিভাগের চাকুলিয়া রেঞ্জের জঙ্গলে ঘুরে পড়ে। এর পর চাকুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবান্ধি এলাকা থেকে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার অন্তর্গত কটুচুয়ার জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। তার পর সেখান থেকে পুরুলিয়া।
বন দপ্তরের ঘুম উড়িয়ে রবিবার সকালে পুরুলিয়ার বন্দোয়ানের রাইখা পাহাড়ের জঙ্গলে উদয় হয় বাঘিনির। জিনাতের গলায় রেডিও কলার থাকায়, তার প্রতিটি গতিবিধিরই সংকেত মিলছে অনবরত। রেডিও কলার থেকে প্রাপ্ত শেষ তথ্য অনুযায়ী রাইখা পাহাড় চূড়ায় ডেরা বেঁধে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে জিনত। আর তাতেই জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লোকালয়ে যদি ঢুকে পড়ে জিনত? কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ বা সাউথ ডিভিশনের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, “আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত যা খবর রয়েছে তাতে জিনাত পুরুলিয়ায় প্রবেশ করেছে। এই খবর পাওয়ার পর আমরা সতর্ক রয়েছি। মাইকিং করে প্রচার চলছে। এলাকার মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। চলছে টহলদারি।”
বান্দোয়ান কংসাবতী সাউথ ডিভিশন বা দক্ষিণ বনবিভাগের অন্তর্গত। এই ডিভিশনের অন্তর্গত তিনটি রেঞ্জ বান্দোয়ান ১, বান্দোয়ান ২ এবং যমুনা রেঞ্জের আধিকারিকরা জিনতের খোঁজে নেমেছেন। এছাড়া বরাবাজার এবং মানবাজার ২ রেঞ্জের অফিসার ও তাঁর দলকেও নামানো হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের মুখ্য বন সংরক্ষক সিঙ্গারাম কুল্যানডাইভেল জানিয়েছেন, অনবরত জিনাতের উপর নজর রাখা হচ্ছে। ১৫ টি দল ক্রমাগত নজরদারি রেখে চলেছে । ওকে বাগে পেতে দুটো বাচ্চা মহিষ, বনশুয়োর, ছাগল ইত্যাদি খাঁচায় ভরে ফাঁদ পাতা হয়েছে। জিনতকে ধরতে বান্দোয়ানে এসে পৌঁছেছে সুন্দরবনের একটি টিমও। তারা মূলত কীভাবে খাঁচা পাতা হবে, কীভাবে টোপ দেওয়া হবে, কীভাবে বাঘটিকে ঘুম পাড়ানো হবে সেদিক নজর রাখছেন। তৎপর ওড়িশার বনাধিকারিকরাও। জিনতকে বন্দি করা গলেই ওড়িশার সিমলিপালের জঙ্গল পাঠিয়ে দেওয়া হবে।