eaibanglai
Homeএই বাংলায়ধর্মের দোহাই দিয়ে চুপ করানো কি ভালো? এতে কি আদৌ মঙ্গল হয়?

ধর্মের দোহাই দিয়ে চুপ করানো কি ভালো? এতে কি আদৌ মঙ্গল হয়?

সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- ধর্মগ্রন্থগুলোতে সব সময় বলা হয়েছে, মন্দ কে ত্যাগ করো মনের মধ্যে সবসময় ভালোকে গ্রহণ করো, যদি কেউ তোমার সাথে খারাপ করে তাহলে তুমি তার সাথে খারাপ করোনা, যদি কেউ তোমাকে কটু বচন বলে, তবু তুমি তাকে ঘুরিয়ে গালি দিও না,যদি কেউ তোমার সাথে ঝগড়া করে তাহলে তুমি তার সাথে ঝগড়া না করে নীরব থাকো। যে ধর্মই হোক সনাতন, খ্রিস্টান, ইসলাম, বৌদ্ধ,জৈন সব ধর্ম শুধুমাত্র উদার দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলে। এমনটাও বলা হয় নেতিবাচক মানুষকে যদি তুমি ক্ষমা করতে না পারো, তার প্রতি অভিশাপ দিও না, বরং সেখান থেকে সরে এসো। অন্যায়, অধর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কথা বলার পাশাপাশি সকল ধর্মগ্রন্থ গুলিতে অধার্মিক অন্যায়কারীর প্রতি আচরণকে সবসময় উদার করতে বলা হয়েছে। গীতাতে যদিও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যুদ্ধ করো, কিন্তু সেই যুদ্ধ করার কথা তিনি বলেছেন ন্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় রেখে, অর্জুনের মনের মধ্যে প্রতিশোধকে জাগ্রত রেখে তিনি যুদ্ধ করার কথা বলেননি। দুর্যোধন দুঃশাসন ভরা সভাতে বাড়ির কুলবধূর, ইন্দ্রপ্রস্থের সাম্রাজ্ঞীর সাথে যদি এমন আচরণ করেন তাহলে সাধারণ মানুষের সাথে তারা কেমন ব্যবহার করবেন? এই কথা মাথায় রেখে ন্যায় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন ভগবান, কিন্তু তিনি কখনোই বলেন নি, প্রতিশোধ বশে এ কাজ করতে।

কিন্তু বারংবার এই যে পাপ পুণ্যের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, ধার্মিক ব্যক্তিকে ধর্মে দোহাই দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়,তা কি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির জন্য ভালো না যে ব্যক্তি স্বয়ং উদার মনষ্কতার জন্য ভালো? এই প্রশ্ন যদি আপনার মনেও আসে তাহলে অবশ্যই আজকের লেখাটি মন দিয়ে পড়ুন।

একজন একবার স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজকে প্রশ্ন করেন,“ভাল মন্দ আপেক্ষিক। একই কাজ এদেশে ভাল ওদেশে খারাপ। তাহলে পাপ পুণ্য কি সেটা কিভাবে বুঝবো?” এর উত্তরে স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ বলেন ,
“ অন্যদের কথা ছাড়ুন, নিজের দিকে তাকান। মনের মধ্যে স্বার্থভাব আনুন। কেমন লাগছে? এবার উদার ভাব তুলুন মনে। এখন কি অবস্থা? মনের এই দুই অবস্থার মধ্যে পার্থক্যটা লক্ষ্য করুন। কি দেখছেন? স্বার্থভাবে মনটা যেন সঙ্কুচিত হয় আর উদারভাবে প্রসারিত? এটাই কি? স্পষ্ট অনুভব করুন দুটিকে। এবার ঘৃণা ও প্রেমকে অনুভব করুন এরকম পৃথকভাবে। ঘৃণায় সঙ্কুচিত ও প্রেমে প্রসারিত হচ্ছে মন। তাই তো? যে ভাবে (feeling) মন প্রসারিত হয় তাকে ভাল বা পুণ্য কাজ বলা হয়। কেন? প্রসারিত অর্থাৎ ব্যক্তিচেতনা থেকে বিশ্বচেতনার দিকে যাচ্ছে। মানে  আপনি নিজস্ব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করছেন। জীবাত্মা থেকে বিশ্বাত্মায় যাচ্ছেন, এবং এভাবে পরমাত্মার দিকে যাবার সুযোগ পাচ্ছেন। অর্থাৎ যে কাজ বা ভাব আপনাকে পরমাত্মা বা ঈশ্বরের দিকে নিয়ে যায় তাকেই ভাল বা পুণ্য কাজ বলা হয়। আর যে কাজ আপনাকে সীমাবদ্ধ করে রাখে সেটা  খারাপ। এরকম আপনার যে কাজ অন্যকে সাহায্য করে প্রসারিত হতে সেটাও ভাল বা পুণ্য কাজ।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments