এই বাংলায়, নিউজ ডেস্কঃ একের দোসর দুই। গত ৪৮ ঘণ্টায় রাজ্যে ঘটে যাওয়া দুটি ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনা। আর এই দুই গাড়ি দুর্ঘটনা আবারও প্রশাসনের চোখে আঙুল দেখিয়ে দিল দুর্ঘটনা রুখতে প্রশাসনিক একাধিক পদক্ষেপ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। শহরজুড়ে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ প্রচার, ট্রাফিক সিগন্যাল, ট্রাফিক পোষ্ট এমনকি বেপরোয়া গাড়ির দৌরাত্ম্য রুখতে বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি তা প্রমাণ দিল সোমবার সন্ধ্যা ও মঙ্গলবার সকালে দুর্গাপুর শহরের দুই জায়গায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনা।
ঘটনা ১ : দুর্গাপুরের ২৪ নং ওয়ার্ডের এমএএমসি কলোনীর বি-ওয়ান মোড়। ভরা সন্ধ্যায় স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছিল সবকিছু। তারমধ্যেই হঠাৎ ছন্দপতন। মৃত্যুদূতের মতো দূরন্ত গতিতে একটি সদ্য শো-রুম থেকে কিনে আনা নীল রঙা চারচাকা গাড়ি এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মেরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের তিনটি আবাসনের বাগানের ভেতর পিলার ভেঙে ঢুকে পড়লো। ঘটনায় গুরুতর আহত হয় সাইকেল আরোহী সহ গাড়িতে থাকা এক আরোহী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই সাইকেল আরোহী ও ঘাতক গাড়ির আহত ব্যক্তিকে পাঠানো হয় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। জানা গেছে, আহত সাইকেল আরোহীর নাম বিশু ক্ষেত্রপাল, স্থানীয় আম্মা কলোনীর বাসিন্দা এবং অন্য আহত ব্যক্তি অচিন রায় এমএএমসির এ-২ এলাকার বাসিন্দা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এলাকার পুরমাতা লাভলী রায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় কাউন্সিলারের অভিযোগ ঘাতক ওই গাড়িতে থাকা তিনজনই মদ্যপ অবস্থায় ছিল। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাড়িটি উদ্ধার করতে গেলে এলাকাবাসীরা পুলিশকে বাধা দেয়। ক্ষতিপূরণের দাবী জানিয়ে গাড়িটিকে আটকে রাখে এলাকাবাসীরা। গাড়ি চালককে পুলিশ আটক করলেও অন্য দুজন ঘটনার পর পালিয়ে যায়।
ঘটনা ২ : সোমবার রাতে দুর্গাপুরের এমএএমসিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার দুপুরে শিল্পশহরের ব্যস্ততম এলাকা সিটিসেন্টারে ফের বেপরোয়া গতির জেরে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন পথচলতি মানুষজন। জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ দুর্গাপুরের সিটিসেন্টার সংলগ্ন সুহট্ট শপিং মল চত্বরে বর্ধমানগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্কিং এলাকায় ঢুকে পড়ে একটি চারচাকা গাড়ি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী প্রধান সড়ক দিয়ে একটি স্করপিও গাড়ি প্রচন্ড গতিতে যেতে গিয়ে আচমকায় মাঝ রাস্তায় ব্রেক করলে পেছন থেকে দুরন্ত গতিতে আসা বর্ধমানগামী একটি যাত্রীবাহী বাসটি ওই স্করপিও গাড়িটিকে ধাক্কা মারলে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরপর সাত-আট্ট ই বাইকে ধাক্কা মেরে পার্কিং লটে ঢুকে যায়। ঘটনার পরেই বাসের চালক ও খালাসি পালিয়ে যায়। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় অল্পের জন্য পথচলতি মানুষজন রক্ষা পেলেও বাইকগুলি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘটনা ৩ : দুর্গাপুর শহরে একদিকে যখন বেপরোয়া গতির শিকার হচ্ছেন পথচলতি মানুষ তখন বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের ব্লকের জাম-কুড়িগ্রামের পীরতলায় একটি যাত্রীবোঝাই বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নেমে গেল চাষের জমিতে। ঘটনায় আহত হয়েছেন বাসের বেশ কয়েকজন যাত্রী। বিষ্ণুপুর থেকে পাত্রসায়ের যাবার পথে বেহাল রাস্তার মাঝে পড়েই এই দুর্ঘটনা বলে অনুমান করা হলেও ঘটনায়ত বাসের চালককেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বাসযাত্রী থেকে শুরু করে এলাকাবাসীরা।
ঘটনা ৪ : একদিকে যখন দুর্গাপুর, বাঁকুড়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ তখন পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে হেলমেটবিহীন বাইক আরোহীদের “উচিত” শিক্ষা দিতে গাড়ি থামিয়ে বাইক চালকদের ফুলের মালা ও চকলেট প্রদান করলো পুলিশ| এরপর সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফের ইস্তেহার দিয়ে সেই নির্দেশ পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়
উপরের চার-চারটে ঘটনা রাজ্যে বর্তমানে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেহাল অবস্থাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসন দু-চাকা গাড়ি আরোহীদের গতিতে লাগাম দিতে এবং বাইক আরোহীদের মাথায় হেলমেট ব্যবহারে বাধ্য করলেও বেপরোয়া চারচাকা ও ভারী গাড়িগুলির দুরন্ত গতিতে লাগাম টানতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এইসমস্ত বড় গাড়িগুলি পুলিশের নজর থেকে ছাড় পেয়ে যাওয়ায় শহরজুড়ে এই সমস্ত গাড়ির দাপটে একের পর এক দুর্ঘটনার পরেও কোনও হুঁশ ফিরছে না গাড়ি চালকদের? এদের গতিতে লাগাম দেওয়ার দায়িত্ব কার? উত্তরের অপেক্ষায় আম জনতা।