নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ- “ছেলেধরা” গুজবের ধাক্কা এবার সরাসরি সাংবাদিকের ঘাড়ে। কলকাতার একটি ইংরাজি দৈনিকের এক সাংবাদিক দুর্গাপুরে, তাঁর বৃদ্ধ বাবা – মা ‘র কাছে আসেন মঙ্গঁলবার বিকালে। সগড়ভাঙ্গাঁ কলোনীর সরকারি আবাসনে। সন্ধ্যায় পাড়ার মোড়ে ধূমপান করছিলেন তিনি। আচমকাই মোটরবাইক নিয়ে, লাঠিহাতে সেখানে পৌঁছায় কিছু যুবক। তারা সৌমেন দত্ত নামে ওই সাংবাদিককে ঘিরে ধরে। তারপর উগ্র যুবকদের ওই দলটি সৌমেন কে সরাসরি আক্রমন করে এই অভিযোগে যে সৌমেন ওই এলাকার বাসিন্দাই নন। তিনি আদতে বাইরে থেকে পাড়ায় ঢুকে পড়া একজন ‘ছেলেধরা’। ঘটনায়, গোড়ায় হতচকিত হয়ে যান ৫০ বছরের যুবক সৌমেন। “যে শহর আমার জন্মস্থান, স্কুল, কলেজে যেখানে থেকে পড়াশোনা করলাম, সেখানে আজও আমার বয়স্ক, অসুস্থ বাবা – মা, আমার ভাই বসবাস করে। সেখামে আমি- ই নাকি বহিরাগত ছেলাধরা? ভাবা যায়!” তিনি ‘এই বাংলায় ডট কম’ কে বলেন,” ওরা আমাকে মারতে এসেছিল। ওরা মানতেই চাইছিল না যে আমি এই সগড়ভাঙ্গাঁরই লোক। পঞ্চাশ বছর পর আজ হঠাৎ কিছু উটকো লোক আমাকে বহিরাগত বলবে? শেষে শহরটার এই অবস্থা হয়েছে?” পাড়ার কিছু মানুষ ওই পরিস্থিতি থেকে সৌমেনকে উদ্ধার করেন। আর সেই মওকায় এলাকা ছেড়ে দ্রুত ‘হাওয়া’ হয়ে যায় উগ্র যুবকদের ওই দলটি।
ঘটনার পর পরই সৌমেন দত্ত কলকাতার ডি জি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ দায়ের করেন। জানানো হয় স্থানীয় কোক ওভেন থানাতেও। যুবকেরা যাবার সময় সৌমেনকে শাসিয়ে যায় – “তুই কোথা থেকে এলি, কেন এলি সব খোঁজ নিচ্ছি। তোকে ছাড়ব না।”
লালবাজার পুলিশ কন্ট্রোল বিষয়টি নিয়ে কোক ওভেন থানার সাথে দ্রুত যোগাযোগ করে। বুধবার দুর্গাপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক গুপ্তা বলেন, “ওই ঘটনার কথা শুনেছি। পুলিশ ওই এলাকা থেকে ছয়জন দুস্কৃতিকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে।” তিনি জানান, ” আমরা ওই এলাকার সি সি টি ভি র ফুটেজ যোগাড় করছি, যাতে দুস্কৃতিদের পুরো দলটাকে ধরা যায়। কোক ওভেন থানার ওসিকেও নির্দেশ দিয়েছি ওই সাংবাদিকের সাথে দেখা করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গঁ বিবরন লিপিবদ্ধ করতে।”
এদিকে, মঙ্গঁলবারই সগড়ভাঙ্গাঁর অনতিদুরে দুর্গাপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন সাধুডাঙ্গাঁয় সাধুর বেশে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ানো এক ব্যক্তিকে ছেলেধরা সন্দেহে কিছু উত্তেজিত যুবক ঘিরে ধরে। মারধর করে। ওই যুবকেরা স্থানীয় লিলুয়াবাঁধ বস্তির বাসিন্দা। ঘটনার খবর পেয়ে কিছু সময় পর কোক ওভেন থানার পুলিশ এসে পৌঁছায়। ওই ভবঘুরে কে উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হন একজন সিভিক পুলিশ ভল্যান্টিয়ার। লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
কোক ওভেন থানা এলাকায় সম্প্রতি ছেলেধরা গুজবের হিড়িক পড়ে গেছে। গুজব রাখতে পোষ্টার, ব্যানার ও লাগাচ্ছে পুলিশ। তা সত্বেও রোধ করা যাচ্ছে না গনপিটুনি। ঘটনায় বিরক্ত সৌমেনের আক্ষেপ,” পুলিশ চাইলে মন্দির থেকে একটি চটি ও চুরি হবে না। দরকার পুলিশের আসল সদিচ্ছা। তবেই ঠান্ডা হবে এই সব উটকো লুম্পেনরা। অবশ্যই সজাগ হতে হবে এলাকাবাসী কেও”।
==================================
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিঃ
‘এই বাংলায়’ পোর্টাল চ্যানেলের পক্ষ থেকে দুর্গাপুর সহ সন্নিহিত এলাকার বাসিন্দাদের কাছে বিনীত অনুরোধ – গুজবে কান দেবেন না। অপরিচিত মানুষ দেখলেই উত্তেজিত হয়ে মারমুখি হবেন না। সন্দেহ জনক কিছু মনে হলে পুলিসে খবর দিন। কোনও অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। মনে রাখবেন – আপনার বাড়ীর কেও তো অন্য পাড়ায় গিয়ে একই পরিস্থিতির শিকার হতে পারে সতর্ক হোন। যারা এসব অন্যায় কাজ করছে, তাদের বিষয়ে পুলিশ, প্রশাসনকে খবর দিন।