সংবাদদাতা, আসানসোলঃ- আজ জন্মাষ্টমী। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব দিবস। কৃষ্ণাষ্টমী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী, গোকুলাষ্টমী প্রভৃতি নামেও এটি পরিচিত। শাস্ত্রসম্মত অনুসারে, এ বছর পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৪৮ তম জন্মতিথি মহোৎসব আজ ১৯শে আগস্ট, শুক্রবার।
শ্রীকৃষ্ণের জীবনী পাঠ ও কর্মকাণ্ড মানবসমাজকে শিক্ষা দেয় যে, সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে বিশ্ব সমাজকে আবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তার দর্শন ও প্রেমেরবাণী রাখতে পারে কার্যকর ভূমিকা। তাই তো শুধু দুষ্টের দমনই নয়, এক শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি বছর শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন তথা জন্মাষ্টমী আমাদের মাঝে নিয়ে আসে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে এক শুভ আনন্দময় বার্তা।
ক্ষমতালোভী কংস পিতা উগ্রসেনকে বন্দি করে মথুরার সিংহাসন দখল করে। তখন আত্মীয়স্বজন ও বিশেষ করে যাদবকুল বিদ্রোহী হয়ে উঠলে তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ প্রশমনে কৌশল হিসেবে কংস যাদবকুলের শুর সেনের পুত্র তার বিশ্বস্ত বন্ধু বাসুদেবের সঙ্গে তার বোন দেবকীর বিয়ে দেন। কংসের আশা-দুরাশায় পরিণত হল। সদ্যপরিণীতা বোন দেবকীকে বাসুদেবসহ রথে করে নিয়ে যাওয়ার সময় কংস দৈববাণী শুনতে পান।তোমার এই বোনের অষ্টম সন্তানই হবে মৃত্যুর কারণ।’ মৃত্যুর আশংকায় উত্তেজিত কংস দেবকীকে হত্যা করতে উদ্যত হলে বসুদেব কংসকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, দেবকীর উদরে যে সন্তান জন্ম নেবে তাকে কংসের হাতে তুলে দেবেন। কংস বোন দেবকীকে তখন হত্যা থেকে বিরত থাকলেও বোন ও ভগ্নিপতিকে কারাগারে নিক্ষেপ করতে দ্বিধা করেননি। এ অবস্থায় বাসুদেব ও দেবকীর বিবাহ বাসর হল কংসের কারাগারে।
কংস মগধরাজ-জরাসন্ধ এবং অনেক বলশালী রাজাদের সহযোগিতা পেতেন। তাদের সহযোগে কংস যদুবংশের লোকজনকে ধ্বংস করতে থাকেন। যদুবংশীয়গন কংসের অত্যাচারে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে অন্য দেশে গিয়ে বসতি করেন। কংস একে একে দেবকীর ছ’টি পুত্রকে হত্যা করেন। শেষ কালে সপ্তম গর্ভরূপে শেষনাগ বা অনন্তদেব দেবকীর গর্ভে আসেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার যোগমায়াকে আদেশ করেন দেবকীর গর্ভস্থিত ভগবান শেষকে রোহিনীর গর্ভে স্থাপন করার জন্য, কেননা তিনি সমস্ত কলাসহ দেবকীর পুত্ররূপে জন্মাবেন এবং যোগমায়াকে বললেন তিনি যেন নন্দগোপের স্ত্রী যশোদার গর্ভে জন্ম নেন। ভগবানের আদেশে যোগমায়া তাই-ই করলেন। কিছুদিন পর দেবকীর দেহের কান্তিতে কারাগার উজ্জ্বল হয়ে উঠল, তাই দেখে কংস ভাবলেন এবার এর গর্ভে নিশ্চয়ই আমার হত্যাকারী বিষ্ণু প্রবেশ করেছেন। কিন্তু একে দেবকী স্ত্রীলোক, দ্বিতীয়তঃ আমার কনিষ্ঠা ভগিনী, তৃতীয়তঃ গর্ভবতী, এখন একে বধ করলে আমার কীর্তিনাশ হবে। তাই এখন একে হত্যা করব না। কংস যা দূরাচারী ছিলেন তাতে তিনি দেবকীকে অনায়াসেই বধ করতে পারতেন। কিন্তু তখন তিনি নিজেই ক্রুরতা পরিহার করেন। তিনি তখন বিষ্ণুর প্রতি বৈরী ভাবাপন্ন চিত্তে তাঁর জন্মের প্রতীক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হল। ভগবানের অবতরণের শুভমুহুর্ত এলো। শুভ রোহিনী নক্ষত্র, আকাশের সমস্ত নক্ষত্র, তারা যেন শান্ত ও সৌম্য হল। নির্মল আকাশে তারা ঝিকমিক করছে। আজ বহু দিন পর পৃথিবীর প্রভু তার তাপ তার লাঘবের জন্য অবতার হয়ে আসছেন। তাই যেন সে চক্ষুউন্মীলন করে, হৃদয় উন্মুক্ত করে প্রভুর দর্শন লাভের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। খন ভগবানের অবতাররূপে জন্মাবার সময় এলো তখন স্বর্গে দেবদুন্দুভি স্বত:ই বেজে উঠল। কিন্নর, গন্ধর্বগণ মধুরস্বরে গেয়ে উঠলো, অপ্সরাগণ নৃত্য করতে লাগলো, দেবতা ও ঋষি-মুনিরা আনন্দে পুষ্পবর্ষণ করতে লাগলেন। জলভরা মেঘ গর্জন করে উঠল। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষে ঘোর অন্ধকারে অর্ধরাত্রে ত্রিলোকের স্বামী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবকীর গর্ভ হতে প্রকট হলেন। সুদেব দেখলেন, তাঁর সামনে এক অদ্ভুত বালক। তাঁর নেত্র কমলের ন্যায় কোমল ও বিশাল। সুন্দর চারটি বাহুতে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম ধারণ করে আছেন। গলায় কৌস্তভ মণি ঝকমক করছে। শ্যামল সুন্দর দেহে মনোহর পীতাম্বর আচ্ছাদিত। কোমরে মুক্তাখচিত স্বর্ণনির্মিত কোমরবন্ধ। সর্বাঙ্গে অলঙ্কার সুসজ্জিত। বালকের দেহ থেকে অপূর্ব রশ্মি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। বসুদেব যখন দেখলেন যে তাঁর পুত্ররূপে সাক্ষাৎ শ্রীহরি জন্ম নিয়েছেন, তখন তাঁর আনন্দের সীমা রইল না। তাঁর প্রতি অঙ্গ আনন্দে ভরপুর হল। মনে মনে তিনি ব্রাহ্মণদের দশ সহস্র গাভী প্রদানের সংকল্প করে ফেললেন। শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গ কান্তিতে কারাগার আলোকিত হল।
এই বাংলা পরিবারের পক্ষ থেকে শুভ জন্মাষ্টমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
হে কৃষ্ণ করুনাসিন্ধু, দীনবন্ধু জগৎপথে,
গোপেশ গোপিকাকান্ত রাধাকান্ত নমহস্তুতে।
ঈশ্বর পরম করুনাময় ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন দিনটি আপনার ভালো কাটুক আনন্দে কাটুক।