eaibanglai
Homeএই বাংলায়মোহিনী একাদশী করেন স্বয়ং ভগবান রামচন্দ্র!কী কারণে?

মোহিনী একাদশী করেন স্বয়ং ভগবান রামচন্দ্র!কী কারণে?

সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- আজ ১৭ বৈশাখ,১৪৩০, পয়লা মে,২০২৩ , সোমবার,আজ মোহিনী একাদশী। আগামীকাল পারণের সময় হলো সকাল ০৫ টা ০৮ মিঃ থেকে সকাল ০৯টা ০৪ মিঃ অবধি। কুর্মপুরাণে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের ‘মোহিনী’ একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করলেন যে, -“হে জনার্দন!বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষীয়া একাদশীর কী নাম, কী ফল ও কী বিধি তা আপনি কৃপা করে আমাকে বলুন।” তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ধর্ম পুত্রকে বললেন ,“হে ধর্মপুত্র, আপনি যে প্রশ্ন আমায় করলেন ক্রেতা যুগে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র মহামুনি বশিষ্টের কাছে এই একই প্রশ্ন রেখেছিলেন। তিনি মহামুনিকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, হে মুনি শ্রেষ্ঠ আমি জনক নন্দনী সীতার বিরহে বহু দুঃখ ভোগ করছি, তাই একটি উত্তম ব্রতের কথা আমাকে বলুন। যার দ্বারা সকল পাপ ক্ষয় হয় ও সকল দুঃখ বিনষ্ট হয়।- তখন রামচন্দ্রের মুখে তার বিরহ জনিত কষ্টের কথা শুনে মহামুনি বশিষ্ঠ মোহিনী একাদশীর কথা বলে বলেন যে, “হে রামচন্দ্র,তুমি উত্তম প্রশ্ন করেছো, যদিও তোমার নামগ্রহণেই মানুষ পবিত্র হয়ে ওঠে। তবুও লোকের মঙ্গলের জন্য তোমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরম পবিত্র একটি ব্রতের কথা বলছি।বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি ‘মোহিনী’ নামে প্রসিদ্ধা। এই ব্রত পালন করলে মানুষের সকল দুঃখ দূর হয় ও সকল পাপ নষ্ট হয়। সকল দুঃখ বিনাশকারী ও সর্ব পাপ ক্ষয়কারী এই ব্রতের মাহাত্ম্য শুনলেও চরম পূণ্য ফল লাভ হয়,তাই একমনে এই একাদশীর মাহাত্ম্য কথা শোনো, এই মাহাত্ম্য কথা শুনলেই সকল পাপী নষ্ট হবে।”

বহু পূর্বে চন্দ্রবংশজাত ধৃতিমান রাজার রাজত্বকালে একজন ন্যায় পরায়ণ বৈশ্য বাস করতেন,তার নাম ছিলো ধনপাল। তিনি ছিলেন প্রবল বিষ্ণুভক্ত পরায়ণ ও দৃঢ় স্থির মানুষ। তিনি প্রচুর দান ধ্যান করতেন। ধনপালের পাঁচজন পুত্র ছিল তাদের নাম- সুমনা, দ্যুতিমান, মেধাবী, সুকৃতি ও ধৃষ্টবুদ্ধি। তার পঞ্চম এই পুত্র ধৃষ্টবুদ্ধি ছিলো পাপ মতি সে অত্যন্ত দুরাচারী ছিল, দ্যূত ক্রীড়া থেকে লাম্পট্য,বেশ্যাসক্তি সব ছিল তার, অতিরিক্ত দুষ্ট স্বভাব এই পুত্র পিতা-মাতা ব্রাহ্মণ কারো সেবা করত না, সব সময় সুরা পান ও অভক্ষ ভক্ষণ করে বেড়াতো। একবার সে যখন পথে এক বেশ্যার গলায় হাত দিয়ে নিঃসংকচে ঘুরছিল,তখন তার পিতা ধনপাল তা দেখতে পেয়ে তাকে ঘর থেকে বার করে দিলেন। তার আত্মীয়-স্বজন‌ও তার সঙ্গ ত্যাগ করল, এই সময় অল্প কিছু কাল সে নিজের অলংকার বিক্রি করে দিন কাটাতে লাগলো, কিন্তু যখন তার অর্থাভাব দেখা দিল তখন বেশ্যারাও তাকে ত্যাগ করল। অন্নবস্ত্রহীন হয়ে ক্ষুধার জ্বালায় সে একদিন নিজের গ্রামেই চুরি করতে গেল কিন্তু রাজ প্রহরী তাকে বন্দী করেও তার পিতার সম্মান রক্ষায় তাকে মুক্ত করে দিল এভাবে বার কয়েক সে ধরা পরলো আর তার পিতার কথা ভেবে রাজ প্রহরীর দ্বারা সে মুক্ত হলো কিন্তু চুরি করা সে ছাড়লো না। এরপর রাজা দেখলেন কিছুতেই ধৃষ্টবুদ্ধির স্বভাব পরিবর্তন হচ্ছে না, তখন তিনি তাকে কারারুদ্ধ করলেন, তার বিচার হলো এবং সে কষাঘাত দন্ড ভোগ করলো। এরপর যখন সে কারা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে ছাড়া পেল তখন সে বনে প্রবেশ করলো এবং পশু পাখি বধ করে তাদের মাংস খেতে শুরু করল ও অতীব দুঃখ কষ্টে জ্বালা যন্ত্রনাময় জীবন কাটাতে লাগলো। এই সময় পূর্ব জন্মের কোন পূণ্য ফলের জন্য সে একদিন কৌন্ডিন্য ঋষির আশ্রমে যায়, তখন সেখানে বৈশাখ মাসে ঋষিবর গঙ্গাস্নান করে আশ্রমের দিকে ফিরছিলেন,তখন ঋষির বস্ত্র হতে একবিন্দু জল তার গায়ে পড়ে ও তার সমস্ত পাপ দূর হয়ে শুভবুদ্ধির উদয় হয়। তখন ঋষির সামনে সে কৃতাঞ্জলিপুটে প্রার্থনা করে বলতে থাকে, ‘হে ঋষিশ্রেষ্ঠ! যে পুণ্য প্রভাবে আমি এই ভীষণ দু:খযন্ত্রণা থেকে মুক্তিলাভ করতে পারি, তা কৃপা করে আপনি আমায় বলুন।’

ঋষিবর তখন বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের মোহিনী একাদশীর কথা বললেন যে ব্রত ফলে বহু জন্মের পর্বত সমান পাপ রাশি ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। কৌন্ডিন্য ঋষির উপদেশ মেনে প্রসন্ন চিত্তে ধৃষ্টবুদ্ধি সেই ব্রত পালন করে ও তার করা সকল পাপের থেকে সে মুক্ত হয়।

এরপর বশিষ্ট মুণি বললেন, হে মহারাজ রামচন্দ্র! এই ব্রত পালনে সে নিষ্পাপ হয়ে দিব্যদেহ লাভ করলো ও‌ পরিশেষে বৈকুন্ঠধামে গমন করতে সক্ষম হলো। হে রাজন, ত্রিলোকে মোহিনী ব্রত থেকে আর কোনো শ্রেষ্ঠ ব্রত নেই। যজ্ঞ, তীর্থস্থান, দান ইত্যাদি কোন পুণ্যকর্মই এই ব্রতের সমান নয়। এই ব্রত কথার শ্রবণ ও কীর্তনে করলেও সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments