সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী),বহরমপুরঃ- শ্রীমায়ের পরিচারিকা বাসনাবালা নন্দী তাঁর দশ বছর বয়সে শ্রী মায়ের বাড়িতে কাজ করতে আসেন, মায়ের দেহাবসান পর্যন্ত তিনি মায়ের সাথে থেকে কাজ করে ছিলেন। এই বাসনাবালা নন্দীকেই সারদা মা একবার নিজের জগৎ জননী রূপ দেখিয়ে ছিলেন। ছোটো মেয়ে গ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে যাওয়ার বায়না করায় শ্রীমা তাকে দেখিয়েছিলেন তিনি কালী, তিনি মা জগদ্ধাত্রী। চলুন আজ জেনে নেব সেই কাহিনী।
বাসনাবালা নন্দী তাঁর স্মৃতি কথায় বলেছিলেন, “জয়রামবাটীতে আমি একদিন কাছাকাছি একটি গ্রামে পুজো দেখতে যাবার জন্য আবদার করে মায়ের কাছে খুব কান্নাকাটি করছিলাম, মা আমাকে একা ছাড়েননি। রাতে মায়ের পায়ে বাতের তেল মালিশ করার সময় আমাকে খুব আদর করে মা বলেছিলেন,‘তুই যা দেখার জন্য ব্যাস্ত হয়েছিস তা তুই এখানে বসেই দেখতে পাবি।’ সেদিন মায়ের পায়ে তেল মালিশ করতে করতে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। চেয়ে দেখি, চারদিক আলোয় আলো। এত আলো আমার জীবনে আর কোনদিন দেখিনি। যেন আলোয় ভাসছে সারা ঘর। সে-আলোর মধ্যে বসে আছেন জীবন্ত মা জগদ্ধাত্রী। কিন্তু মাকে কোথাও দেখলাম না। আমি ভয় পেয়ে ‘মা, মা’ বলে দরজার খিল খুলে বাইরে এলাম। কোথাও মাকে দেখতে পেলাম না। আবার ঘরের মধ্যে ফিরে এলাম। দেখলাম, মা যেমন শুয়েছিলেন, তেমনি শুয়ে আছেন, ঘুমোচ্ছেন। ঘরের মধ্যে সে আলো আর নেই। এককোনে টিমটিম করে হ্যারিকেন জ্বলছে। মাকে ডাকলাম, মা উঠে বললেন,‘ তুই দেখছিস তো?’ আমি যা দেখেছি, সব বললাম। মা মিষ্টি হেসে বললেন, যা দেখেছিস সব সত্যি। আমিই জগদ্ধাত্রী, আমিই দুর্গা,আমিই লক্ষ্মী, আমিই সরস্বতী, আমিই কালী। সে রাতেই মা আমাকে তাঁর জগদ্ধাত্রী রূপ দেখিয়েছিলেন। ভয়ঙ্করী নয় বড় স্নিগ্ধ, বড় সুন্দর সে-রূপ। সে কী রূপ! সে কী ঐশ্বর্য! চোখ তা ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু চোখ বুজলে আজও মনে ভেসে উঠে সেই রূপ।”