সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী),বহরমপুরঃ- তিনি মা, জগতের সকলের মা, সতের ও মা, অসতেরও মা, তিনি হলেন সারদা দেবী। এই জগতের সকলের প্রতি যার অসম্ভব করুণা, সবার দুঃখ কষ্ট নিজের হৃদয় সমাহিত করবার জন্য যিনি অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করে রয়েছেন। স্বামী ঈশানানন্দ তার লেখায় মায়ের করুণার একটি কাহিনী বর্ণনা করেছেন, যেখানে আমরা দেখতে পাই যে, ভুল করে মায়ের মুখ থেকে একবার অভিসম্পাত বেরিয়েছিল তারপর মা নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন নি।
“বিকালে মা রাত্রের কুটনো লইয়া বসিয়াছেন। হঠাৎ ছোট মামী তাঁহার কাছে বসিয়া বলিতেছেন, ‘তুমিই তো রাধুকে আফিম খাইয়ে পঙ্গু করে বশ করে রেখেছ। আমার নাতিকে, আমার মেয়েকে আমার কাছে পর্যন্ত যেতে দাও না।’
মা বলিতেছেন,‘নিয়ে যা না তোর মেয়েকে, ওই তো পড়ে আছে। আমি লুকিয়ে রেখেছি নাকি?’এইরূপ দুই-এক কথা হইতেই মামীর পাগলামী চরম সীমায় উঠিয়াছে। মাকে মারিবার জন্য তিনি একখানি জ্বালানি কাঠ আনিতে ছুটিয়াছেন। মা তখন চিৎকার করিয়া বলিতেছেন, ‘ওগো কে আছ,পাগলী আমায় মেরে ফেললে’ আমি দৌড়িয়া গিয়া দেখি, কাঠখানি প্রায় মায়ের মাথায় ফেলেন আর কি! তাড়াতাড়ি উহা দূরে ফেলিয়া দিয়া মামীকে সদর দরজা পার করিয়া দিলাম।
রাগে কাঁপিতে কাঁপিতে তাহাকে ভর্ৎসনা করিয়া পুনরায় সে বাড়িতে আসিতে নিষেধ করিলাম। মাও তখন উত্তেজিত হইয়া বলিয়া ফেলিলেন,‘পাগলী, কি করতে বসেছিলি? ওই তোর হাত খসে পড়বে।’ ইহা বলিয়াই জিব কাটিয়া মা শিহরিয়া উঠিলেন। ঠাকুরের দিকে চাহিয়া জোড়হাতে বলিতেছেন, ‘ঠাকুর, একি করলাম!এখন উপায় কি হবে? আমার মুখ দিয়ে কোনদিন তো কারও ওপর অভিসম্পাত-বাক্য বেরোয়নি, শেষটায় তাও হলো? আর কেন?’ মায়ের অপার করুনার ভাব দেখিয়া আমি স্তম্ভিত হইয়া গেলাম।”