eaibanglai
Homeএই বাংলায়টেবিল টেনিসের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জিতে তাক লাগালেন ষাটোর্ধ মান্তু মুর্মু

টেবিল টেনিসের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জিতে তাক লাগালেন ষাটোর্ধ মান্তু মুর্মু

এই বাংলায় ওয়েব ডেস্কঃ- ওমানের মাস্কাটে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ভেটেরান টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-এ তিন তিনটি স্বর্ণ পদক জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলার মান্তু মুর্মু। ষাটোর্ধ ক্যাটাগরিতে ওমেন সিঙ্গেল, ওমেন ডবল এবং মিক্সড ডবল এই টিনটে ইভেন্টেই সফলতা পেয়েছেন বাংলার এই মেয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিযোগীতারা অংশ নিয়েছিলেন টেবিল টেনিসের এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য জয় এনে ইতিহাস গড়লেও এই সফলতা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতে রাজি নন মান্তু বরং খুদে ও প্রতিবন্ধীদের এখন তালিম দিতেই ব্যাস্ত থাকতে চান তিনি। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি থেকে অবসর নিলেও প্রাণ শক্তিতে অফুরাণ মান্তু জানালেন সফলতাকে তিনি কখনও মাথায় চড়তে দেননি। তিনি বরং মাটিতে পা ফেলে অতীত ভবিষ্যৎ ভুলে বর্তমানকে উপভোগ করে বাঁচতে ভালোবাসেন। আর এটাই তাঁর সাফল্যের ইউএসপি।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই মান্তু কোনও দিন কারও কাছ থেকে টেবিল টেনিস খেলাটা শেখেননি। এ যেন মাহাভারতের সেই একলব্য। গুরু ছাড়াই ধনুর্বিদ্যা শিক্ষায় সিদ্ধি লাভ করেছিলেন যিনি। মান্তুর কথায় ছোটবেলা থেকে কোনও দিন টেবিল টেনিসের বোর্ডও দেখননি। ১৯৮১ সালে চাকরি পাওয়ার পর প্রথম অফিসে গিয়ে টেবিল টেনিসের বোর্ড দেখেন। সেই সময় অফিসেই শ্যামসুন্দর বোস, রথীন মুখার্জী সহ একাধিক টেনিস খেলোয়াড়দের খেলা দেখে মুগ্ধ হতেন। মান্তু জানান সেই সময় ওই খেলার প্রতি এতটাই আকর্ষণ অনুভব করেন যে দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্ট বসে বসে শুধু অন্যদের খেলা দেখতেন। মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে নিজের মতো করে প্র্যাকটিস করতেন। এরপর আস্তে আস্তে রাজ্য স্তরের বেশ কিছু প্রতিযোগীতায় অংশ নেন কিন্তু সেভাবে সফলতা পাননি। তাই ৮৭ সাল থেকে মার্শাল আর্টস শিখতে শুরু করে। এমনকি কিক বক্সিং-এ জাতীয় স্তরের প্রতিযোগীয় অংশ নিয়ে সফলতাও পান। এরমধ্যে জীবনের এক অন্য ধাপে প্রবেশ করেন মান্তু। ১৯৯৯ সালে বিয়ে করেন। এরপর ২০০২ সাল থেকে ফের টেবিল টেনিসে ফেরেন। মান্তুদেবী জানান সেই সময় অফিসেরই এক সহকর্মী সুব্রত দে তাঁকে পুনরায় টেবিল টেনিস প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে বলেন। তাঁর কথাতে অনুপ্রাণিত হয়েই আবার টেবিল টেনিসের প্র্যাক্টিস শুরু করেন। ২০০৩ সালে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণপদকও পান। এরপর তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে এই সময় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অনুপ্রেরণা ও সহায়তা না থাকলে তিনি এগিয়ে যেতে পারতেন বলেই মনে করেন অদম্য মান্তু। অবশেষে ২০২৩ এসে মিলল আন্তর্জাতিক স্তরে সফলতা।

তবে এই সফলতা একদিনে মেলেনি । এর পিছনে রয়েছে দারিদ্রতার সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই ও হার না মানা এক অদম্য কিশোরীর কাহিনী। মান্তু মুর্মা বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা হলেও তাঁর জন্মস্থান বাঁকুড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রাম ফুলকুসমা। বাবা প্রভাত মুর্মু ও মা সুখদা মুর্মু অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ছয় ভাই বোনের ( চার ভাই, দুই বোন) সবচেয়ে ছোট হলেও মান্তু ছোট থেকেই দাদাদের ও দিদির অভিভাবক ছিলেন। দাদা, দিদিদের জন্য রান্না করা, খাবার জোগার করা সবই করতেন। মান্তুদেবীর বয়স যখন ছয় সাত তখন তাঁর বাবা পরিবার নিয়ে বাঁকুড়া থেকে চলে যান হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে। সেখানে দাদারা স্কুলে ভর্তি হলেও প্রথমে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাননি মান্তু। বরং তাঁর উপর রান্না বান্না ঘর কন্যার কাজ সঁপে দেওয়া হয়। তবে তাতে দমে যাওয়ার পাত্রী ছিলেন না মান্তু। সকাল সকাল রান্না বান্না করে , দাদাদের খাইয়ে স্কুলে পাঠিয়ে ঘরকন্নার কাজ শেষ করে দাদাদের স্কুলে বাইরে গিয়ে বসে থাকতো সে। স্কুলের বাইরে বসে বসেই শিখে নিত পড়া। বিষয়টি নজরে আসতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁকে স্কুলে ভর্তি করে নেন। এরপর সেখান থেকেই মাধ্যমিক পাশ করে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দেন মান্তু।

বর্তমানে একাধিক কোচিং সেন্টারে খেলা শেখানোর পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে স্কুলও চালান মান্তু। চরম দারিদ্রতা, প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে সফলতা- জীবনের এই পর্যায়ে এসে ভবিষ্য়তে আর কি করতে চান? উত্তরে মান্তু জানালেন ভবিষ্যত নিয়ে কোনও দিনই ভাবেন না তিনি। বরং বর্তমানটাকেই উপভোগ করতে চান। প্রায় ১৫০ জন মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু কিশোর কিশোরীকে নিয়মিত লালন পালন করে চলেছেন। ওদেরও খেলা শেখাচ্ছেন। এমনকি ওরাও একাধিক প্রতিযোগীতায় অংশ নিচ্ছে ও সফলতা পাচ্ছে। আপাতত ওদেরকেই এই সমাজের যোগ্য করে তোলার লাড়াইটাই চালিয়ে যেতে চান। জানালেন জীবনের কোনও পরিস্থিতিতে হার না মান মান্তু।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments