সংবাদদাতা, আসানসোল:- পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শিল্পাঞ্চলে আরো একটি শিল্প সংস্থা বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতির দিকে এগোলো। ইতিমধ্যেই এই শিল্পাঞ্চলে অতীতে একাধিক শিল্প ও কলকারখানা বন্ধের পর এবার ঐতিহ্য বহন করে আসা রানিগঞ্জ বেঙ্গল পেপার মিলে মঙ্গলবার ” সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক” র নোটিশ ঝোলানো হলো। এর ফলে চরম অনিশ্চিতার মধ্যে পড়লো এই মিলে কাজ করা ৩০০ জন কর্মীর রুজি রোজগার। আপাততঃ তারা কর্মহীন হয়ে পড়লেন। এদিকে, এই পেপার মিলে ” সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক” র নোটিশ নিয়ে রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসকে বুধবার কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভার বিজেপি বিধায়ক তথা বিজেপির রাজ্য সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল।
অন্যদিকে, রানিগঞ্জ পেপার মিল নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক করা হবে বলে বুধবার রাজ্যের শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক জানিয়েছেন। এর আগে গত ১৬ ও ২৪ জানুয়ারি দু – দফায় কর্মীদের বকেয়া বেতন দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল রানিগঞ্জ পেপার মিল কর্তৃপক্ষের তরফে। তবে তা কার্যকর করা হয়নি। বকেয়া বেতন না পাওয়ার জেরে কর্মীরা বেশ কয়েকবার পেপার মিল গেটে বিক্ষোভ দেখান। পরে চিঠি দেওয়া হয় পশ্চিম বর্ধমান জেলা শ্রম দপ্তরের আধিকারিকের কাছে। কিন্তু তারপরও কোন সমস্যার সমাধান হয়নি। এবার বকেয়া বেতন না দিয়ে, মঙ্গলবার পেপার মিল গেটে ঝোলানো হলো ” সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক” র নোটিশ। যা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন পেপার মিলের কর্মীরা। তাদের দাবি, পেপার মিল কর্তৃপক্ষ আর্থিক ক্ষতিপূরণের অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করেছেন মিলকে। অথচ কাগজের বাজারে চাহিদা রয়েছে। তারপরেও কখনো মিলে কাঁচামাল মিলছে না। কখনো অন্য কোন অজুহাত দেখাচ্ছেন মিল কতৃপক্ষ। যা মিল কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব বলেই দাবি তাদের। মঙ্গলবারের এই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদে সরব হল পেপার মিলের কর্মীরা। কোন রাজনৈতিক দলের পতাকা ও ব্যানার ছাড়াই তারা এদিন প্রতিবাদের সরব হন। তাদের দাবি, বিনা নোটিশে গত ৭ জানুয়ারি থেকে মিল বন্ধের পরে, এবার “সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক ” র নোটিশ ঝোলালো মিল কর্তৃপক্ষ। যা একেবারে বেআইনি। আগের এক মাসের বেতন বাকি। আর তারপর একমাস ধরে কাজ ছেড়ে বসে রয়েছি। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই মঙ্গলবার ঝোলানো হলো “সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক ” র নোটিশ। যা নিয়ে হতাশ পেপার মিলের কর্মীরা এবার প্রতিবাদে সরব হয়ে দাবি করেন, অবিলম্বে মিল খোলা হোক, আর বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক কর্তৃপক্ষ। তাদের এও দাবি তাদের যেহেতু কোনো নোটিশ না দিয়ে গত ৭ জানুয়ারি থেকে মিল বন্ধ করে দেওয়া হয় ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর এই দাবি মানা না হলে লাগাতার ধর্না আন্দোলনে যাওয়ার পাশাপাশি, প্রয়োজনে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদে সামিল হবেন বলেও কর্মীরা হুঁশিয়ারী দিয়েছেন।
এদিকে, রানিগঞ্জ পেপার মিলে “সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক” র নোটিশ নিয়ে সরব বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। এদিন তিনি বলেন, বাম জমানায় এভাবেই সবকিছুই বন্ধ হয়েছে। সিপিএমের সেই ধারাকে সুন্দর ভাবে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃনমুল কংগ্রেস। আমি খবর পেয়েছি, মিলে কাঁচামাল মিলছে না। সেটা সত্যি না। মনে হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ভাবে তা কেনা হচ্ছে না। প্রয়োজন হলে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি আছি। কিন্তু তার আগে দুমাসের বকেয়া বেতন মেটানো ও যতদিন না মিল চালু হচ্ছে, ততদিন কর্মীদেরকে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা মিল কতৃপক্ষকে করতে হবে।
অন্যদিকে, আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক এদিন বলেন, মিল কতৃপক্ষ জানিয়েছেন তাদের কাছে কাঁচামাল কেনার মতো আপাততঃ ক্ষমতা নেই। তাই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি বৈঠক করা হবে। সেখানে সবদিক খতিয়ে দেখা হবে। যদিও, মিল কর্তৃপক্ষের তরফে বুধবারও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তারা এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি।