মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ-
প্রচেষ্টা ভাঙার যুদ্ধ শেষ!
এবার শুরু নতুন গড়ার।
গ্রেফতারি এড়াতে ২৪ ঘন্টাতেই হঠাৎ সুর বদল সিটি সেন্টারের প্রচেষ্টা ক্লাবের । জবরদখল উচ্ছেদে সরকারি বুলডোজার ফের হানা দেওয়ার আগে বৃহস্পতিবার বৃষ্টি মাথায় করে সকাল সকাল নিজেদের হাতে গড়া ক্লাব নিজেরাই ভেঙ্গে দিতে হাত লাগালো প্রচেষ্টার সদস্যরা। নেচে নেচে ডি জে বাজিয়ে চললো ভাঙার কাজ (দেখুন ভিডিও)।
এ নিয়ে বিস্ময়ের পাশাপাশি কিঞ্চিৎ টিটকারিও শুনতে হল ক্লাব সদস্যদের। তবে, কেউ কেউ মণে করেন – নিজেদের স্পর্ধা, অহংকার আর ঔদ্ধত্য সরকারি সংস্থাকে, শাসকদলকে দেখাতেই ধনীর দুলালেরা ক্লাব ভাঙাকেও ফিস্টি – পার্টি বানিয়ে এদিন উদযাপন করলেন।
মঙ্গঁলবার সিটি সেন্টারে জবরদখল উচ্ছেদের তৃতীয় দফায় বিতর্কিত ‘প্রচেষ্টা’ ক্লাবঘর ভাঙতে পুলিশ, কর্মচারী সমভিব্যবহারে ক্লাবের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যায় বুলডোজার। বুলডোজার রুখতে ক্লাবঘর ঘিরে বুক চিতিয়ে বসে পড়েন জনা কুড়ি ক্লাব সদস্য। তার আগে এডিডিএ’র কর্মী, আধিকারিক, পুলিশের সাথে বচসায় জড়িয়ে, উচ্ছেদ হওয়া হকারদের লেলিয়ে দিয়ে শহরের বিদিশা মোড়কে অন্যরকম রণক্ষেত্রে সাজিয়ে তোলেন সকলে। মারমুখী হকারেরা তাড়া করে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার উচ্ছেদ অভিযানের আধিকারিক, কর্মীদের। টানা ৫ ঘন্টা ক্লাবের সামনে হাঁটুমুড়ে বসে থেকে আলাদা রকম ‘গান্ধীগিরি’র নিদর্শন রেখে সন্ধ্যায় ফিরে যায় এডিডিএ’র বুলডোজার।
এরপরেই শুরু হয় অন্যরকম প্রশাসনিক তৎপরতা। সরকারি কর্মীদের হেনস্তা এবং সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগে ক্লাবের পাঁচ সদস্যের নামে এফআইআর করতে উদ্যত হয় এডিডিএ। ক্লাবের অন্দরে শুরু হয়ে যায় অন্যরকম আতঙ্কের ছটফটানি। সকলেই নিজের নিজের পিঠ বাঁচাতে, একে তাকে ধরে ধরে আলাদাভাবে নিজেদের সাফাই গাইতে শুরু করেন। এডিডিএ’র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ এমন বার্তাও পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেন – যে ‘তিনি নন, অন্যরা উচ্ছেদে বাধা দিচ্ছে।’ লাভ না হওয়ায়, সম্মিলিত ভাবে বুধবারেই চেয়ারম্যানের চেম্বারে যাকে বলে ‘হাতে পায়ে ধরে’ নিজেদের হাতেই ক্লাব ভাঙ্গার মুচলেখা দিয়ে কোন রকমে ইজ্জত বাঁচাতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাঠে নামল প্রচেষ্টা। ওদিকে, ফোনে কয়েকদফা ভাঙার পরিস্থিতি সম্পর্কে এডিডিএ তে খোঁজ নিলেন চেয়ারম্যান নিজে।
একেই কি তবে ‘নিজের পায়ে কুড়োল মারা বলে ?’ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুনীল ভট্টাচার্জ বলেন, “না একেই বলে আসল চেতনার উদয়। মানুষ ভুল করে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি দামি মানুষ যখন নিজের হাতে সেই ভুল শুধরে নেয়, সমাজের স্বার্থে।”
![](https://eaibanglai.com/wp-content/uploads/2023/08/prochesta1-1024x576.gif)
মঙ্গঁলবারের রণক্ষেত্রের বিদিশা মোড় বৃহস্পতিবার ছিল শ্মশানের নিরবতা। সকলের শুকনমুখ, কিন্তু বেজে চলেছে ডিজে। ক্লাবের সদস্যদের যন্ত্রনাবিদ্ধ করুন এই মুখচ্ছবি দেখে এদিন পথ চলতি মানুষজন থমকে গেছেন। তবে, বেশির ভাগই বলেছেন, “আইন সবার জন্য সমান। এত বছরে বোঝা গেল শহরে একটা প্রশাসন আছে। আইনের শাসন আছে।” অর্থাৎ, চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন চাইলে সরকার উচিত কাজটা করতে পারে, সেখানে কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িয়ে থাকলেও। এই উচ্ছেদ অভিযানের দরুন বহুবছর পর এডিডিএ’র কোনো কাজে দারুন খুশি, আমজনতা। কারণ, এই ভাঙ্গার ভেতরেই লুকিয়ে আছে নতুন করে গড়ার শপথ। “এডিডিএ তো বলেইছে, দখলদারি হাটিয়ে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট করে স্টল বানিয়ে দেবে। কিছু মানুষ যারা নিজে চাকরি করে তার ছেলে পুলিশে চাকরি করে, তারা হকার সেজে সরকারি লোকদের মারতে গেল। গালাগালি দিল। এদের বিরুদ্ধে শুধু এডিডিএ নয়, আমরাও। এদেরকে এবার তাড়াতে হবে। এরাই নেতা সেজে বসে আর দালালি করে। এরাই ৩০ হাজার ৪০ হাজার টাকা নিয়ে কবছর আগে নতুন নতুন হকার বসিয়েছে আর এখন আমাদের বদনাম করতে এসব করছে,” বলে দাবি সিটি ক্লাব মোড়ের আর পঞ্চবটি মোড়ের উচ্ছেদ হওয়া বাম সমর্থক দুই হকারের। প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য, “সরকার ভাঙতে এসেছিল, ওরা কায়দা করে ফিরিয়ে দিল। প্রভাবশালীদের হাত ওদের মাথায়। তারপরেও আজ ওরা নিজেরা ভাঙছে। বুঝেছে যে ওরা ভুল পথে চলছিল। এবারে নিশ্চয় ওরা বুঝবে, বাবারও বাবা থাকে।”
ক্লাবের সম্পাদক হরকালি পাঁজা মঙ্গলবার দাবি করেন, প্রচেষ্টা ভাঙতে গেলে আগে মন্দির, মসজিদ ভাঙতে হবে। গতকাল ছিলেন বিগলিত আর এদিন অবশ্য তিনি বাহ্যত ছিলেন অনুতপ্ত। ক্লাব সদস্যরা সম্ভবত বুঝেছেন ফৌজদারী মামলা হলে সংকট বাড়বে। এদিন এডিডিএ’র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কারো শত্রু নই। ওরা বুঝেছে ওরা ভুল পথে ছিল। নিজেরাই ক্লাব ভাঙছে যখন, তখন আর ওদের ওপর এখনই মকদ্দমা করছি না । তবে, আমরা নজরে রেখেছি সবটাই।”
![](https://eaibanglai.com/wp-content/uploads/2023/08/add-02-43-1024x576.gif)
![](https://eaibanglai.com/wp-content/uploads/2023/08/add-01-43-1024x576.gif)
![](https://eaibanglai.com/wp-content/uploads/2023/08/add-03-44-1024x576.gif)
![](https://eaibanglai.com/wp-content/uploads/2023/08/add-04-41-1024x576.gif)
![](https://eaibanglai.com/wp-content/uploads/2023/08/add-05-42-1024x576.gif)