সঙ্গীতা চ্যাটার্জী, তারকেশ্বরঃ- ১৯ শে মে ছিলো পরম পবিত্র মোহিনী একাদশী! এই একাদশীর মাহাত্ম্য কথা আজকে আপনাদের বলবো। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের মোহিনী একাদশী সম্পর্কে যুধিষ্ঠির মহারাজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে, পূর্বে রামচন্দ্র যখন দেবী সীতার বিরহে বশিষ্ঠ মুনির কাছে সর্বদুঃখনাশকারী ও সর্বপাপক্ষয়কারী ব্রত সম্পর্কে জানতে চান, তখন তিনিও ঠিক একই কথা বলেছিলেন। এই ব্রতের প্রভাবে মানুষের সকল পাপ, দুঃখ ও মোহজাল অচিরেই বিনষ্ট হয় এবং এই কথা শ্রবণমাত্রই সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয়। চলুন শুনে নিই পবিত্র মোহিনী একাদশীর কথা।
পবিত্র সরস্বতী নদীর তীরে ভদ্রাবতী নামে এক সুশোভনা নগরী ছিল,সেই নগরে চন্দ্রবংশজাত ধৃতিমান নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। সেই নগরীতে ধনপাল নামে বিষ্ণুভক্তিপরায়ণ ও শান্ত প্রকৃতির এক সমৃদ্ধশালী বৈশ্য বাস করতেন। যিনি নলকূপ, জলাশয়, উদ্যান, মঠ ও গৃহ ইত্যাদি নির্মাণ করতেন। সুমনা, দ্যুতিমান, মেধাবী, সুকৃতি ও ধৃষ্টবুদ্ধি নামে তার পাঁচজন পুত্র ছিলো। পঞ্চম পুত্র ধৃষ্টবুদ্ধি ছিলো,পরস্ত্রী সঙ্গী, বেশ্যাসক্ত, লম্পট ও দ্যুতক্রীড়া প্রভৃতি পাপে অত্যন্ত আসক্ত। দেবতা, ব্রাহ্মণ ও পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাহীন, দুষ্টস্বভাব ও পিতৃধন ক্ষয়কারক, সবসময় অভক্ষ্য ভক্ষণকারী ও সুরাপানে মত্ত।
পিতা ধনপাল একদিন পথ চলার সময় হঠাৎ দেখলেন ধৃষ্টবুদ্ধি এক বেশ্যার গলায় হাত রেখে নিঃসঙ্কোচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার নির্লজ্জ পুত্রকে এভাবে চৌরাস্তায় ভ্রমণ করতে দেখে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত ও ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে সেদিন ঘর বার করে দিলেন। তার আত্মীয়-স্বজনও তাকে পরিত্যাগ করলো। সে তখন নিজের অলংকারাদি বিক্রি করে জীবন অতিবাহিত করতে লাগলো। কিছুদিন এইভাবে চলার পর অর্থাভাব দেখা দিলো। অর্থাভাব দেখা দিতেই সেই বেশ্যাগণও তাকে পরিত্যাগ করলো তখন অন্নবস্ত্রহীন হয়ে ধৃষ্টবুদ্ধি ক্ষুধা তৃষ্ণায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লো ও শেষে নিজের গ্রামে সে চুরি করতে শুরু করলো।
একদিন রাজপ্রহরী তাকে বন্দী করার পরেও তার পিতার সম্মানার্থে তাকে মুক্ত করে দিল। এভাবে বারকয়েক সে ধরা পড়ে ছাড়া পেয়েও সে চুরি করা বন্ধ না করলে রাজা তাকে কারাগারে আবদ্ধ করে রাখলেন। এই কারাভোগের পর ধৃষ্টবুদ্ধি বনে প্রবেশ করলো। সেখানে সে পশুপাখি বধ করে তাদের মাংস ভক্ষণ করে অতি দুঃখে পাপময় জীবনযাপন করতে লাগলো ও দিবারাত্রি দুঃখশোকে জর্জরিত হয়ে অনেকদিন অতিবাহিত করলো।
কোন পুণ্যফলে সহসা একদিন সে কৌণ্ডিন্য ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হলো। বৈশাখ মাসে ঋষিবর গঙ্গাস্নান করে আশ্রমের দিকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন। শোকাকুল ধৃষ্টবুদ্ধি তার সম্মুখে উপস্থিত হলে ঘটনাক্রমে ঋষির বস্ত্র হতে একবিন্দু জল তার গায়ে পড়ে ও সেই জলস্পর্শে তার সমস্ত পাপ দূর হয়ে শুভবুদ্ধির উদয় হল। ঋষির কাছে করজোড়ে সে তার দুঃখপূর্ণ অবস্থা থেকে মুক্তিলাভের উপায় জিজ্ঞেস করলে, ঋষিবর কৃপাপূর্বক তাকে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের মোহিনী একাদশী পালন করতে বলেন, যার প্রভাবে পর্বতসম পাপরাশিও ক্ষয় হয়। কৌণ্ডিন্য ঋষির উপদেশে প্রসন্নচিত্তে ধৃষ্টবুদ্ধি সেই ব্রত পালন করে নিষ্পাপ হয়ে দিব্যদেহ লাভ করলো ও গরুড়ে আরোহণ করে সকল প্রকার উপদ্রবহীন অবস্থায় বৈকুণ্ঠধামে গমন করল।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে,“ত্রিলোকে মোহিনী ব্রতই শ্রেষ্ঠ ব্রত। যজ্ঞ, তীর্থভ্রমণ, দান ইত্যাদি কোন পুণ্যকর্মই এই ব্রতের সমান নয়। এই ব্রত কথার শ্রবণ কীর্তনে সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়।”