eaibanglai
Homeএই বাংলায়লোকসভা নির্বাচন - পশ্চিমবঙ্গের ফলাফল

লোকসভা নির্বাচন – পশ্চিমবঙ্গের ফলাফল

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী:- এইরাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল দেখে একটি জনপ্রিয় হিন্দি চলচ্চিত্রের নাম অনুসরণ করে বলা যেতেই পারে – এটা তো হওয়ারই ছিল।

যেকোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে জিততে হলে নীচু তলায় একটা শক্ত সংগঠন দরকার। এইরাজ্যে বিজেপির কি সেটা আদৌ আছে? রাজ্যের সমস্ত বুথে এজেন্ট দেওয়ার ক্ষমতা আছে? তৃণমূল নেত্রী মমতার জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মত হাজার কিলোমিটারের মধ্যে কোনো নেতা বিজেপিতে আছে? নির্বাচন জয়ের লক্ষ্যে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েও তার জনপ্রিয়তার কাছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত হার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন- দু’বার।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮ টা আসন পেয়ে বিজেপি ভেবে নিয়েছিল তারা জিতে গেছে। আসলে একশ্রেণির বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জন্য তৃণমূল সেদিন হেরেছিল। অনেকটা আত্মঘাতী গোলের মত! এই চরম সত্যটা স্বীকার করে সুযোগ ও সময় থাকলেও বিজেপি সংগঠন গড়ে তোলার দিকে কোনোদিন নজর দেয়নি। উল্টে এমন আচরণ দেখাতে শুরু করে দেখলে মনে হবে তারা বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এইরাজ্যে ক্ষমতায় এসে গেছে।

উল্টোদিকে, মমতা ব্যানার্জ্জী জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়ালেন। সংগঠনকে মজবুত করার লক্ষ্যে পেশাদার সংস্থার পরামর্শ গ্রহণ করলেন। অভিষেক ব্যানার্জ্জী সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হলেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি তৃণমূলের মঞ্চ মাতিয়ে তুলল। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে একদল নেতা-নেত্রী দল ছেড়ে দিলেও তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে তৃণমূলের জয় পেতে অসুবিধা হয়নি।

দলের পুরনোদিনের কর্মীদের উপেক্ষা করে দলত্যাগীদের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করে এবং অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে বিজেপি চরম মাশুল দেয়। তারা ভেবেছিল মোদির জনপ্রিয়তা তাদের জিতিয়ে দেবে। কখনোই তারা মোদির জনপ্রিয়তা বাস্তবে কতটা সেটা বিচার করে দেখেনি। ২০১৪ ও ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট বিচার করলে সেটা স্পষ্ট হবে। তাছাড়া বিজেপি একক ক্ষমতায় এবং নিজের দলের পুরনো দিনের নেতাদের নিয়ে ক’টা রাজ্যে ক্ষমতায় আছে? আসামের মুখ্যমন্ত্রীর কথা ভাবুন।

২০২১ এর বিধানসভা ভোটে পর্যুদস্ত হওয়ার পরেও তারা সংগঠন গড়ার দিকে নজর দেয়নি। দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে সদ্য ক্ষমতা লাভ করা সরকারকে বরখাস্ত করার দাবিতে এবং ঘুরপথে ক্ষমতা দখলের আশায় বারবার দিল্লি ছুটে গেছে। তৃণমূলের হাতে নাকি তাদের হাজার হাজার কর্মী আক্রান্ত, মহিলারা ধর্ষিতা, লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া – ইত্যাদি অভিযোগ তুললেও আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়ায়নি। কোন ভরসায় কর্মীরা সংগঠন গড়ে তোলার ঝুঁকি নেবে? তাছাড়া সিবিআই তদন্ত হলেও এখনো তাদের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়নি।

হারার পর এই রাজ্যে বিজেপি নেতাদের বক্তব্য ভাতা ও লক্ষীর ভাণ্ডারের কাছে তারা হেরে গেছে। শোনা যাচ্ছে বিরোধী দলনেতা নাকি বলেছেন সন্ত্রাসের আবহে ভোট হয়েছে? এটা শুনলে একইসঙ্গে বিড়াল ও বিড়ালের মুখে ধরে থাকা ইঁদুর হেসে ফেলবে! ভোট চলাকালীন অভিযোগ শোনা যায়নি। লক্ষীর ভাণ্ডারের বিকল্প হিসাবে শিক্ষিত বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করলেই ঝামেলা চুকে যেত! বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি ক্ষমতা লাভ করে। দশ বছরে কুড়ি কোটি চাকরি হয়েছে? সবচেয়ে বেকারের সংখ্যা বেশি বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা রাজ্যে। রেলে তিন লক্ষাধিক পদ ফাঁকা। ভবিষ্যতের গ্যারান্টি দেওয়া হলেও গত পাঁচ বছরে কী কী কাজ করা হয়েছে সেটা কিন্তু একবারও বলা হয়নি। আচ্ছা উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিপর্যয়ের কারণ কী? দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা সম্ভবত শতাব্দীর সেরা জোক! যাদের বিরুদ্ধে বিজেপির দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বিজেপিতে যোগ দিয়ে তারা শুদ্ধ হয়ে গেল! সরাসরি বলা ভাল মোদির গ্যারান্টি জনগণ বিশ্বাস করতে পারেনি।

বিজেপির হারের পেছনে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে কংগ্রেস ও সিপিএম নাকি বিজেপির ভোট কেটে তৃণমূলের জয়ের পথ সুগম করেছে। ওরা দু’টো স্বীকৃত রাজনৈতিক দল। প্রকৃত অর্থে কংগ্রেস এই দেশের একমাত্র সর্বভারতীয় দল। যতই দুর্বল হোক আজও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের সমর্থক পাওয়া যাবে। সিপিএম এইরাজ্যে চৌত্রিশ বছর রাজত্ব করেছে। ওরাও জেতার লক্ষ্যে প্রার্থী দিয়েছে। সুতরাং এই যুক্তিটা বালখিল্য স্বরূপ।

দল বা সরকার ভাঙানোর খেলায় মেতে না উঠে বিজেপি যদি ধীরে ধীরে এইরাজ্যে সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা না করে তাদের ভবিষ্যত কিন্তু অন্ধকার। দরকার দিলীপ ঘোষদের মত প্রকৃত বিজেপি নেতাদের। দল যতই বিপদে পড়ুক এরা কিন্তু পালাবে না। পুঁইশাক দিয়ে যেমন চচ্চড়ি বানানো যেতে পারে কখনোই বিরিয়ানি নয়। তেমনি ভাড়াটে সৈন্য দিয়ে যুদ্ধে জয়লাভ করা খুব কষ্টকর। ২০২১ এর বিধানসভা ও ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন তার প্রমাণ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments