eaibanglai
Homeএই বাংলায়ডিজিটাল অ্যারেস্টে আসানসোলের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার খোয়ালেন ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা

ডিজিটাল অ্যারেস্টে আসানসোলের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার খোয়ালেন ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা

সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- ৩২ দিন ধরে ডিজিটাল এ্যারেস্ট। আসানসোলের অবসরপ্রাপ্ত পুর ইঞ্জিনিয়ার খোয়ালেন ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। এই ঘটনায় আসানসোল শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

গত ১১ জুন আসানসোল সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ করে ঘটনার কথা জানিয়েছেন আসানসোলের অবসরপ্রাপ্ত পুর ইঞ্জিনিয়ার সুকুমার দে। আসানসোল কোর্ট মোড়ের বাসিন্দা সুকুমারবাবু জানিয়েছেন, ৯ মে তাঁর মোবাইলে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি ফোন করেন। ‌ওই ব্যক্তি নিজেকে বিএসএনএল-এর আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান সুকুমার বাবুর আধার নম্বর ব্যবহার করে মুম্বাইয়ে একটি সিমকার্ড নেওয়া হয়েছে। এরপরই মুম্বাই পুলিশের এক আধিকারিকের বেশে সাইবার দুষ্কৃতী সুকুমার দে’র মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ কল করেন এবং বলেন তার নামে জারি হওয়া সিম কার্ড পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই)-এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। যা অবৈধ উপায়ে আর্থিক লেনদেন, উগ্রপন্থী কার্যকলাপে ব্যবহার হয়েছে এমনকি পর্ন সিনেমা তৈরির সঙ্গেও ওই সিম কার্ডের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। এরপরই দুষ্কৃতীরা সুপ্রিম কোর্টের লেটারহেড, ব্যাংক স্টেটমেন্টের নকল কাগজ সুকুমার বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেয়। যেখানে সুকুমার বাবুর নামে কানাড়া ব্যাঙ্কের একটি একাউন্টে ২০ কোটি ৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৭৫০ টাকা জমা আছে বলে দেখানো হয়। এই বিশাল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে তাঁর একাউন্টে এলো সেই বিষয়ে সুকুমারবাবুর কাছ থেকে জবাব চাওয়া হয়। এরপরই সুকুমারবাবুকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখানো ও হুমকি শুরু হয়। এ বিষয়ে প্রকৃত তদন্তের পর সুকুমার বাবু সহ তার পরিবারের সকলের জেল হতে পারে বলে এমনকি যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে পারে বলেও ভয় দেখানো শুরু হয়। যদিও তদন্তে সহযোগিতা করলে কিছুটা সুরাহা মিলবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। এইসব ঘটনায় সুকুমারবাবু এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন যে দুষ্কৃতীদের সমস্ত কথা তিনি মেনে চলতে শুরু করেন। দুষ্কৃতীদের কথা মত সুকুমারবাবু এরপর তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যত টাকা ছিল সমস্ত কিছুই দুষ্কৃতীদের বলে দেওয়া একটি আরবিআই একাউন্টে জমা করে দেন। এ বিষয়ে আরবিআই গাইডলাইনের একটি পুস্তিকা পর্যন্ত সুকুমার বাবুর কাছে পাঠিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে দেয় তদন্ত চলাকালীন কাকপক্ষিও যেন বিষয়টি টের না পায়। তদন্ত শেষ হলেই সুকুমার বাবু তাঁর যাবতীয় অর্থ একাউন্টের মাধ্যমে ফেরত পেয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। এরপর সুকুমার বাবুর প্রতিটি মুহূর্ত হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখে সাইবার অপরাধীরা। প্রতি দু ঘন্টা অন্তর সুকুমার বাবুর লোকেশন তাদের কাছে পাঠাতে হচ্ছিল। এই ভাবেই ৩২ দিন তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল ডিজিটাল অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে। এদিকে সুকুমার বাবুর অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ার পর দুষ্কৃতীরা তাঁর কাছ থেকে আরও টাকা দাবি করলে সুকুমার বাবু তাঁদের বাড়ির যাবতীয় গয়না মুথুট ফাইন্যান্সে বন্ধক রাখেন। সেখান থেকে পাওয়া টাকা দুষ্কৃতীদের দেওয়া একাউন্টে পাঠিয়ে দেন। এরপর আরও ৪০ লক্ষ টাকা পাঠানোর জন্য সুকুমার বাবুর উপরে নানাভাবে ভয় দেখিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এবার সাইবার দুষ্কৃতীরা সুকুমার বাবুর কাছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর সি রঙ্গরাজনের স্বাক্ষর করা একটি আদেশনামা পাঠায়। কিন্তু প্রাক্তন গভর্নরের সই করা আদেশনামা কেন তাকে দেওয়া হল এই বিষয়টি ভাবতে গিয়েই সুকুমারবাবুর সন্দেহ হয়। তখন তিনি বুঝতে পারেন এতদিন তাকে বোকা বানানো হয়েছে। এরপরই ১১ জুন সুকুমার দে আসানসোল সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানান।

এই ঘটনা আসানসোল- দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় এখনো পর্যন্ত বৃহত্তম অঙ্কের টাকা খোয়ানোর ঘটনা বলে জানা যাচ্ছে। তাই ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে আসানসোল সাইবার ক্রাইম থানা থেকে রাজ্য সাইবার ক্রাইম বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments