সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- আমরা অনেক সময় দেখি অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ আবার ভক্তির অহেতুকী প্রকাশ ঘটে থাকে, এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আমরা বুঝতে পারি না। যে কারণে ভন্ড মানুষের ঘন্টার পর ঘন্টা পুজো দেখে আমরা সেটাকে আস্তিকতা বলে মনে করি আর সৎ ভক্তের ধ্যানকে আমরা ভন্ডামো বলে মনে করি। এক্ষেত্রেও কোথাও না কোথাও গিয়ে আমাদের পাপ লাগে। তাহলে আমরা বিচার কীভাবে করব? এক্ষেত্রে শ্রী সারদা মায়ের বাণীর স্মরণ করতে পারি আমরা। শ্রী মায়ের জীবনী পড়তে পারি। যেখানে শ্রীমা কুসংস্কার মুক্ত ভাবে জীবনযাপন করেছেন, লোকশিক্ষার জন্য মাঝেমধ্যে তপস্যা করেছেন বটে কিন্তু মনের গুরুত্ব তিনি সর্বাধিক বলে আরোপ করেছেন। অর্থাৎ বাহ্যিক ক্রিয়াকলাপ নয় মনেই সব। শ্রীমা বলেছেন মনই সব, মন সবসময় স্থির রাখতে হয়। মন অস্থির থাকলে কোন কিছুই ভালো লাগে না, মনকে সব সময় স্থির রাখবে, মনকে ভগবানের চরণে রাখতে হয়।
শ্রী মায়ের কথায়,“মনের ভেতর সব সময় ঈশ্বরকে স্মরণ করবে। মনকে সব সময় ঈশ্বরের দিকে চালিত করবে।” অর্থাৎ ব্যক্তি পূজা করুক অথবা না করুক তার মনের মধ্যে যদি ঈশ্বর চিন্তা থাকে তবে সে অবশ্যই শুভ ফল লাভ করবে এবং ব্যক্তি পুজো করার সঙ্গে সঙ্গে তার মনের মধ্যে যদি ঈশ্বর চিন্তা না থাকে তার মনের মধ্যে যদি হিংসা দ্বেষ পরিপূর্ণ হয়ে থাকে, তবে অন্তর্যামী ভগবান তা প্রত্যক্ষ করে সেই রূপ ফল প্রদান করবেন। কিন্তু আমরা কীভাবে মানুষ চিনব?
এ ক্ষেত্রেও মহাপুরুষদের জীবনী পড়লে আমরা দেখতে পাই, একজন সৎ সাত্ত্বিক ব্যক্তি, অপর সৎ, সাত্ত্বিক ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে উৎফুল্ল হয়ে উঠছেন। মহাপুরুষরা বলেছেন যারা প্রকৃত অর্থের সৎ তাদের চেহারা, আচার-আচরণ এবং কথাবার্তায় তা প্রকাশ পায়। অনেক সময় কোন মানুষ মুখোশের আড়ালে থাকে কিন্তু সেই মুখোশ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা সম্ভব নয়, তাই দীর্ঘ সময় ধরে কোন মানুষের আচার-আচরণ, কথাবার্তা- লক্ষ্য করলে বোঝা যায় তিনি আসলে ভগবত প্রেমী কিনা? মুখে ভগবত নাম এবং কার্যক্ষেত্রে যদি বিনা কারণে তিনি কারো সঙ্গে হিংসা না করেন তাহলে তাকে ভগবত প্রেমী বলা যায়, ন্যায়ের জন্য তো স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনকে যুদ্ধ করতে বলেছিলেন, প্রিয়জনদের ওপর অস্ত্র ধারণ করতে বলেছিলেন, কিন্তু যদি দেখা যায় কোন কারণ ছাড়াই, অন্যায় ভাবে কেউ কারোর প্রতি হিংসা করছে এবং মুখে হরি হরি বলছে, সে ক্ষেত্রে আমরা শ্রী মায়ের বাণী মাথায় রেখে বলতে পারি মনেতেই সব। মন শুদ্ধ থাকলে ভগবান লাভ হয়।





