eaibanglai
Homeদক্ষিণ বাংলাশান্তিপুরের জজ পণ্ডিত বাড়ির দুর্গাপুজোয় দেবী পূজিত হন মহিষাসুরমর্দিনী রূপে

শান্তিপুরের জজ পণ্ডিত বাড়ির দুর্গাপুজোয় দেবী পূজিত হন মহিষাসুরমর্দিনী রূপে

সংবাদদাতা,নদীয়াঃ- এখানে দেবীর পুজো হয় শাক্ত মতে। নদিয়ার শান্তিপুরের তর্কবাগীশ লেনের জজ পণ্ডিত বাড়ির এ পুজোয় বাড়ির সদস্যরাই অংশ নেন পৌরোহিত্যে। রথের দিন এখানে পাটে সিঁদুর দেওয়া হয়। বোধন হয় ঠাকুর বাড়ির নিকটবর্তী পঞ্চবটির নির্দিষ্ট আসনে।

দেবী এখানে আসেন একলা। মায়ের বিরাজ ক্ষেত্রের নিচে অবস্থান করে সাধনা-সিদ্ধ পঞ্চমুণ্ডির আসন। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ থাকেন না তাঁর সঙ্গে। দেবী এখানে পুজো পান মহিষাসুরমর্দিনী রূপে।

গয়ার যদুয়া গ্রামে একসময় বিরাট জমিদারি ছিল এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের। এই পরিবারেরই সুসন্তান পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায় তর্কবাগীশ উপাধি পান। তাঁর জমিদারির প্রজাদের সমস্যার বিচারের ভার ছিল তাঁরই ওপর। শাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল এই পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায়ের। বিচার করা এবং পাণ্ডিত্য – এই দুইয়ের কারণেই ‘জজ পণ্ডিত’ হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। সেই সূত্রে তাঁদের শান্তিপুরের বাড়ি জজ পণ্ডিত বাড়ি হিসেবে প্রসিদ্ধ।

কোনও এক অজ্ঞাত কারণে গয়া থেকে শান্তিপুরে চলে এসেছিলেন পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায়। শান্তিপুরে এসে তিনি পত্তন করেন নতুন জমিদারির। নতুনভাবে শুরু হয় দেবীর আরাধনা।

চলে আসা রীতি মেনে এখানে সপ্তমীতে মোচা, কচুর শাকসহ মরশুমি ফসলের ভোগ থাকে। অষ্টমীতে থাকে সাদাভাত। সঙ্গে ইলিশ। নবমীতে অন্যান্য পদের সঙ্গে সঙ্গে দেবীকে দেওয়া হয় চালতার অম্বল। দশমীতে দেবী দুর্গাকে দেওয়া হয় পান্তা। এর সঙ্গে থাকে কচুর শাক আর কাঁচ কলার বড়া।

একসময়ে নবমীতে ১০৮ টা মোষ বলি ও ২৮ টা পাঁঠা বলি হলেও তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বর্তমানে।

অতীতে দেবীর পুজা হতো ফানুসের আলোয়। এ বাড়ির পূজোয় এ ছিল এক দেখবার বিষয়। এ প্রসঙ্গে জজ পণ্ডিত পরিবারের পক্ষ থেকে ড. সঞ্চারী চট্টোপাধ্যায় জানান, আগে পুজোয় বেলজিয়াম ফানুসের আলোয় মা পূজিত হতেন। তবে পরবর্তীকালে সেই ফানুস চুরি হওয়ার পর বর্তমানে ইলেকট্রিক আলো ব্যবহার করা হয় পুজোয়।

এই পুজোয় শুধু জমিদারির প্রজারা নন, দূর-দূরান্ত থেকে আসতেন সর্বস্তরের মানুষ। এই বাড়ির পুজোতে এক সময় এসেছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই জজ পণ্ডিত বাড়ির কন্যা নির্মলা দেবীর সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল শোককাব্য ‘অশ্রু’-র কবি ভোলানাথ বন্দোপাধ্যায়ের। তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে এ বাড়ির দুর্গাপূজায় এসেছিলেন স্বয়ং বিভূতিভূষণ। এ প্রসঙ্গে ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রপৌত্র ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সঠিক সাল তারিখ জানা নেই। তবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ বাড়ীর পুজোয় এসেছিলেন। দুর্গা পুজোতে তো বটেই, কালী পুজোতেও।

এই পুজোতে আজও কথা বলে অতীত। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন দেবী দর্শনে। ভক্তদের বিশ্বাস দেবী এখানে স্থানে বসে কানে শোনেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments